চট্টগ্রামের ঋষিকুম্ভ মেলা লাখো পূর্ণার্থীর পদচারণায় মুখরিত

জেলার বাঁশখালী ঋষিধামে লাখো পূর্ণার্থীর পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠেছে দেশের একমাত্র কুম্ভমেলা। রোববার থেকে শুরু হওয়া ৮ দিনব্যাপী ঊনবিংশতম আন্তর্জাতিক ঋষিকুম্ভ ও কুম্ভমেলার আজ ছিলো তৃতীয় দিন। ১৯৫৭ সাল থেকে এ মেলা প্রতি তিন বছর পরপর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। গতকাল বিকেলে মেলায় গিয়ে দেখা যায় দেশ-বিদেশের সাধু-সন্নাসীসহ হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়েছে। সন্ধ্যায় ধর্ম সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার পাশাপাশি মেলা বসেছে বিশাল এলাকাজুড়ে। এ মেলায় অংশ নিয়েছে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই। ঋষিধামের ৩১ একর জায়গা ছাড়াও আশপাশের একশ’ একর এলাকাজুড়ে এ মেলায় কুটির শিল্প, কারু শিল্প, মৃৎশিল্প, খেলনা, প্রসাধনী সামগ্রী, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্য সামগ্রীর অন্তত তিন হাজার স্টল বসেছে। পুরো মেলায় শুরুর দিন থেকেই নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
কুম্ভ অর্থ কলস। কুম্ভ পূর্ণতা ও পবিত্রতার প্রতীক। ঋষিরাই হচ্ছেন ঐক্য, সংহতি ও সংস্কৃতির প্রতীক। কুম্ভযোগে বা কুম্ভপর্বে ঋষিদের সম্মিলন অনুষ্ঠিত হয় বলে এর নাম কুম্ভমেলা। অষ্টম শতাব্দিতে পৃথিবীর সর্বাধিক গৌরবময় হিসেবে হরিদ্বার, প্রয়াগ, উজ্জয়নী ও নাসিকÑ এই চারটি স্থানেই কুম্ভপর্বের সূচনা হয়। মহাপুরুষ ঋষি অদ্বৈতানন্দ বাংলাদেশের ঋষিধামে কুম্ভমেলার সূত্রপাত করেন। ঋষিধামের নামের সাথে সঙ্গতি রেখে তথা যুগেযুগে ঋষিপুরুষের স্মরণ, মনন ও স্মৃতি বহনের মানসে এ মেলাকে ‘ঋষিকুম্ভ’ নামকরণ করা হয়। প্রতি তিন বছর অন্তর শুভ ভৈমী একাদশী হতে মাঘী পূর্ণিমা এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
ঋষিকুম্ভ মেলার সভাপতি লায়ন প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ বাসসকে বলেন, ‘কুম্ভমেলা স্বাভাবিকভাবে ভারতের ৪টি জায়গায় হয়। কিন্তু এ দেশের সকল মানুষের পক্ষে ভারতে গিয়ে পুণ্য অর্জন করা সম্ভব না হওয়ায় ভক্তদের সুবিধার্থে ভারতের সন্নাসীদের বাঁশখালীতে আনার ব্যবস্থা করে এ মেলার প্রচলন করেন স্বামীজি অদ্বৈতানন্দ পুরী মহারাজ। মেলায় সমগ্র বিশ্বের কল্যাণে প্রার্থনা করা হয়।
এদিকে এবারের কুম্ভমেলায় দেশ-বিদেশের প্রায় ২০ লাখের অধিক ভক্ত-পূণ্যার্থীর সম্মিলন ঘটবে বলে আশা করছেন মেলা উদযাপন পরিষদের আহবায়ক রাউজান পৌরসভার চেয়ারম্যান দেবাশীষ পালিত। তিনি বাসসকে বলেন মেলায় প্রতিদিন দুপুর ও রাতে মহাপ্রসাদ বিতরণ, শ্রীগুরু পূজা, সমবেত প্রার্থনা, ধর্মসভা এবং ধর্মীয় সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে। মেলায় দেশ-বিদেশের আধ্যাত্মিক মহারাজ ও বিদেশি কূটনৈতিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্রতিবারই ভারতসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শতাধিক সন্ন্যাসী আসেন। এটি এক মহা মিলনমেলা।
উল্লেখ্য, গত রোববার সকালে বর্ণাঢ্য মহাশোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে মেলার সূচনা হয়। শোভাযাত্রায় কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেয়। বাঁশখালীর সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ও ঋষিধামের মোহন্ত মহারাজ শ্রীমৎ স্বামী সুদর্শনানন্দ পুরী মহারাজ মেলার শুভ উদ্বোধন করেন।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930