জঙ্গি মোকাবেলায় হাসিনা ব্যর্থ: খালেদা

বৃহস্পতিবার রাজধানীতে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে একের পর এক ঘটনা ঘটেই চলেছে। সরকার আজ পর্যন্ত কোনো ঘটনা ঠিকমতো হ্যান্ডেল করতে পারে নাই। ঢাকা শহরসহ অন্যত্র যেসব ঘটনা ঘটেছে, তাতে জড়িত কোনো অপরাধীকে তারা ধরতে পারে নাই। কোনো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হয়নি।
“আমরা অনেক আগেই বলেছি, এই সরকার প্রথম থেকেই ব্যর্থ। এখন ব্যর্থতার দায় নিয়ে সরকারের উচিৎ যে এটা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরে যাওয়া। নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে যাতে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে তার ব্যবস্থা করা।”
এসময় গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় জিম্মিদের উদ্ধারে সরকার ‘বিলম্বে অভিযান পরিচালনা’ করেছে অভিযোগ করে তার কারণও জানতে চান সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
“ভোরে কেন অভিযান হল? টেলিভিশনে যা দেখলাম, পুলিশের বড় বড় অনেক কিছু দেখাল। র‌্যাব ছিল, কেউই কিছুই করতে পারেনি। শেষে আর্মির কমান্ডোকে এনেছে ভোরে।
“তারা যখন গেছে, তখন তো মরে গেছে, তার আগে সব ঘটনা শেষ হয়ে গেছে। এতো দেরি কেন? এত দেরিতে কেন সে কাজটি করা হল? এটা মানুষের প্রশ্ন।”
কিশোরগঞ্জে শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে কাছে বিস্ফোরণ এবং গুলির ঘটনায়ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।
“আজকে শোলাকিয়ায় যে ঘটনা ঘটেছে, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা গভীরভাবে মর্মাহত।”

.
বেলা ১২টায় শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপি চেয়ারপারসনের ঈদের কুশল বিনিময়ের এই অনুষ্ঠান শুরু হয়, যাতে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও ছিলেন।।
গুলশানের ক্যাফেতে জঙ্গি হামলায় ১৭ বিদেশিসহ ২০ জন নাগরিক হত্যার প্রসঙ্গ তুলে খালেদা জিয়া আরও বলেন, “আজকে দেশের অবস্থা মোটেই ভালো নয়, অত্যন্ত খারাপ। প্রতিটি মানুষ আজকে ভয়ের মধ্যে, আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।
“আপনারা লক্ষ্য করেছেন, গুলশানের ঘটনার পর সারা ঢাকা শহর থমথমে হয়ে গিয়েছিল, চলাচলের গাড়ি-ঘোড়া, মানুষজন কিছুই দেখা যায়নি; ভূতুড়ে নগরীর মতো হয়েছিল।”
নজিরবিহীন ওই জঙ্গি হামলার পেছনে গুলশানের কূটনৈতিকপাড়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ঘাটতি থাকার অভিযোগও করেন তিনি।
“সেদিন যে গুলশানের ঘটনাটি ঘটল, সেটি ডিপ্লোমেটিক এরিয়া, প্রটেকটিভ হওয়া উচিৎ। যে রেস্টুরেন্টে ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে বিদেশিরাই যায়। আমরা সাধারণ মানুষ না জানলেও সরকার তো তা জানে। কাজেই সেই এলাকায় আরও বেশি নিরাপত্তা থাকা উচিৎ ছিল।”
এসময় উগ্রবাদ মোকাবিলায় আবারও জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, “এখন প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। সকলে মিলে দেশের ওপর যে একের পর এক নৃশংস ঘটনা ঘটছে, তা বন্ধ করা দরকার।
“কিন্তু আমরা দেখতে পাই, যারা জোর করে ক্ষমতায় আছে, তারা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয়, তারা (সরকার) দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা ও সান্ত্বনা দেওয়ার বদলে যা ইচ্ছে কথা-বার্তা বলছে। তারা শুধু ইচ্ছামতো ব্লেইম দেয়। এখন ব্লেইম-গেইম চলছে।”
সত্যিকারের অপরাধীদেরকে না ধরার অভিযোগ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “বরং বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ধরা হচ্ছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের এমনভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে যে প্রকৃত অপরাধীরা অপরাধ করেই চলেছে, তারা পার পেয়ে যাচ্ছে।”
এ প্রসঙ্গে ২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “বিডিআরের ঘটনা থেকে এসব ঘটনার সূত্রপাত। ৫৭ জন অফিসার মারা গেছে, সেটাকে ধামাচাপা দেয়া হলো। তখনই যদি ওই ঘটনাকে শক্তভাবে দমন করা যেত, তাহলে আজকে দেশে এই অবস্থা করার কেউ সাহস পেত না।

“এখন যে ঘটনাগুলো ঘটে চলেছে, যারা আছে, নিজেদেরকে সরকার দাবি করে, তারা যদি শক্তভাবে না ধরে, তাহলে এই ঘটনাগুলো থেকে বেরিয়ে আসার কঠিন হবে।”
ফেইসবুক-টুইটারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বাংলাদেশে গুলশানের মতো আরও ঘটনা ঘটবে বলে খবর আসছে জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, “সেইভাবে সরকারের প্রস্তুতি আছে কি না- এগুলোকে মোকাবিলা করার, তা দেখা দরকার।”
সরকারের বিরুদ্ধে পুলিশকে দেশের মানুষকে নির্যাতন করার কাজে ব্যবহারের অভিযোগ তুলে ওই বাহিনী এখন ‘চাঁদাবাজি ও গ্রেপ্তার বাণিজ্যে ব্যস্ত’ বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
“পুলিশ সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। সেদিন গুলশানে কেন তারা সন্ত্রাসী ঘটনা দমন করতে পারলে না? পুলিশ ও র‌্যাব ছিল, কেউ কিছু করতে পারলো না কেন?”
মুসলিম উম্মাসহ দেশবাসী ও নেতাকর্মীদের ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, “ঈদের দিন আমার আহ্বান থাকবে, আমরা এসব ঘটনা দেখতে চাই না। বাংলাদেশের মানুষ শান্তি প্রিয়, গণতন্ত্র প্রিয় মানুষ। বাংলাদেশের মানুষ আইনের শাসনে বিশ্বাস করে, ন্যায় বিচার চায়, বাক স্বাধীনতা চায়, যেগুলো আজকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এজন্য আজকের এই অবস্থা। এর অবসান হওয়া দরকার।”
এজন্য সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রয়োজন মন্তব্য করে তিনি বলেন, “দেশে যদি গণতন্ত্র না থাকে বা জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার না থাকে, তাহলে দেশে শান্তি আসতে পারে না, দেশে সুন্দরভাবে এগিয়ে যেতে পারে না।”
দেশের ব্যাংকিং খাতের ‘লুটপাটের চিত্র’ তুলে ধরে জড়িদের ধরা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া।
অনুষ্ঠানে প্রথমে কূটনীতিকদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন খালেদা জিয়া।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মাসির্য়া স্টিফেন্স ব্লুম বানির্কাট, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত সোফি আবর, জাপানের রাষ্ট্রদূত মাশাতো ওয়াতানাবে, ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রদূত আর্চবিশপ জর্জ কোচেরী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদনসহ ২২টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
এ সময়ে তার পাশে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, আ স ম হান্নান শাহ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, ইনাম আহমেদ চৌধুরী ও সাবিহ উদ্দিন আহমেদ।
পরে কূটনীতিকদের সেমাই-জর্দাসহ বিভিন্ন মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।
কূটনীতিকদের পর বিএনপিপন্থী শিক্ষক এমাজউদ্দীন আহমেদ, আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, সদরুল আমিন, জেডএ তাহমিদা বেগম, সুকোমল বড়ুয়া, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজী, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের আ ন হ আখতার হোসেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মাহবুবউদ্দিন খোকন, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শওকত মাহমুদ, মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের আবদুল হাই শিকদার, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান এবং সাবেক সভাপতি আবদুস শহীদসহ শিক্ষক, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, শিল্পী-সাহিত্যিক, সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের মানুষ বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীর মজিবুর রহমান, মশিউল আলম, বিকল্প ধারার মহাসচিব আবদুল মান্নান, জাগপার শফিউল আলম প্রধান, খন্দকার লুৎফর রহমান, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ ও বিজেপির সালাহউদ্দিন প্রকাশ।
আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল মান্নান, শাহজাহান ওমর, রুহুল আলম চৌধুরী, আবদুল কাইয়ুম, আমানুল্লাহ আমান, রুহুল কবির রিজভী, গিয়াস কাদের চৌধুরী, আসাদুজ্জামান রিপন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হারুনুর রশীদ, নিতাই রায় চৌধুরী, হাবিবুর রহমান হাবিব, সানাউল্লাহ মিয়া, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, শাহ আবু জাফর, এস এম ফজলুল হক, শামা ওবায়েদসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের সহাস্রাধিক নেতাকর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যরাও পর্যায়ক্রমে দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
জিয়া ও কোকোর কবর জিয়ারত
ঈদ শুভেচ্ছা বিনিয়ম শেষে খালেদা জিয়া প্রথমে শেরেবাংলা নগরে স্বামী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও পরে বনানীতে ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর কবর জিয়ারত করেন।
এ সময়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মির্জা আব্বাসসহ কেন্দ্রীয় নেতারা তার সঙ্গে ছিলেন। পরে বিএনপি চেয়ারপারসন গুলশানের ভাড়াবাসা ‘ফিরোজায়’ যান।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930