জলবায়ু পরিবর্তন: ২ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি বিশ্ব ব্যাংকের

জলবায়ু পরিবর্তন: ২ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি বিশ্ব ব্যাংকের
মঙ্গলবার সকালে বরিশাল ঘুরে এসে বাংলাদেশ থেকে ফিরে যাওয়ার আগে বিকালে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে কিমের এই ঘোষণা আসে।
দুই দিনের এই সফরে বাংলাদেশের জন্য বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ-সহায়তার দ্বিতীয় ঘোষণা এটি।
কিম বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে, বাংলাদেশ তাদের অন্যতম। আর যেহেতু দরিদ্র মানুষই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে, আমাদের এখনই এ বিষয়ে উদ্যোগী হতে হবে।”
দুর্যোগ প্রশমন ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সামনের কাতারে রয়েছে মন্তব্য করে বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট বলেন, “এর ফলে সাম্প্রতিক সময়ে ঝড়, সাইক্লোন ও বন্যার ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ যাতে দুর্যোগ প্রশমনে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে, সেজন্য বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপ সহায়তা করার পরিকল্পনা করেছে।”
২০১২ সালে মেক্সিকোয় জি-২০ বৈঠকে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় উন্নত দেশগুলোর অর্থে একটি তহবিল গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়। ২০২০ সালের মধ্যে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার করে অর্থ দিয়ে এই তহবিল গঠনের অঙ্গীকার করেছিল উন্নত দেশগুলো।
কিন্তু ওই অর্থের বেশির ভাগটাই ছাড় না হওয়ায় চলতি মাসের শুরুতে ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্টের সভাপতিত্বে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী মুহিত।
উন্নত দেশগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী ওই বৈঠকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় গত ছয় বছরে বাংলাদেশ ৩৪৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। কিন্তু জলবায়ু তহবিল থেকে পেয়েছে মাত্র ৫০ মিলিয়ন ডলার।
“আরও ১০ মিলিয়ন ডলার ছাড় করা হবে, হবে বলেও দেওয়া হচ্ছে না।… তহবিল গঠন হয়, কিন্তু অর্থ মেলে না। এটা দুঃখজনক।”
বিশ্ব ব্যাংক জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবেলায় এ পর্যন্ত যে অর্থ বাংলাদেশকে দিয়েছে, তা এসেছে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিসটেন্স (আইডিএ) হিসেবে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায়। আলাদাভাবে এই খাতে তহবিল যোগানোর ঘোষণা এবারই প্রথম।
বিশ্ব ব্যাংকের পঞ্চম প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাংলাদেশ আসা কিম ঢাকায় নামেন রোববার বিকালে। সোমবার সকালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠকের পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি শিশু অপুষ্টি দূর করতে বাড়তি ১ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার আশ্বাস দেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের জন্য ঋণ সহায়তা ৫০ শতাংশ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
এবার ‘বিশ্ব দারিদ্র্যমুক্ত দিবস’ কিম ঢাকাতেই পালন করেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ‘দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্বে বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন।
মঙ্গলবার সকালে হেলিকপ্টারে চড়ে কিম বরিশালে যান। সেখানে তিনি বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত একটি প্রকল্পের আওতায় ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে গাভী পালন বা মাছ চাষ করে ‘স্বাবলম্বী হওয়া’ নারীদের সঙ্গে মত বিনিময় করেন।
এছাড়া বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে নির্মিত একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আশ্রয়ন কেন্দ্র তিনি পরিদর্শন করেন এবং সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করা একটি বাড়ি ঘুরে দেখেন।
বরিশাল সফরে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিজের চোখে দেখার কথাও বিকালে সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন বিশ্ব ব্যাংক প্রধান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। এই ঝুঁকি মোকাবিলায় স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ সতর্কতা প্রচার ব্যবস্থা, আশ্রয় কেন্দ্র, উদ্ধার পরিকল্পনা, উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ ও বনায়নের মত উদ্যোগ নিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আসার আগে বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট কিম গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সফর শেষে মঙ্গলবার রাতেই তার ওয়াশিংটনে ফেরার কথা রয়েছে।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930