‘জাতীয় ঐক্য’ গড়তে খালেদার মাস্টারপ্লান

শুধু বক্তব্য নয়, ‘জাতীয় ঐক্য’ গড়ে তোলার জন্য এবার ‘মাস্টারপ্লান’ নিয়ে এগোচ্ছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

দেশের চলমান সংকট উত্তরণে বাংলাদেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির ইতিবাচক ভূমিকা সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্য এ উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।

বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ে কয়েকজন নেতা এবং দলটির নীতি-নির্ধারকদের মধ্যে চারজনের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, ‘জাতীয় ঐক্য’ গড়ার ক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার মাস্টারপ্লানের মধ্যে রয়েছে সভা-সেমিনারে বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে দলীয় প্রধানের স্পিরিটের বাইরে কেউ কোনো বক্তব্য দিতে পারবেন না। মনগড়া বক্তব্য দিয়ে দল ও দলীয় প্রধানের বক্তব্যের স্পিরিটকে নষ্ট করা যাবে না।

এমনকি প্রধান প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের প্রত্যুত্তরে মনগড়া বক্তব্য দেওয়া থেকে বিএনপি নেতাদের বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন খালেদা জিয়া। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের জবাব ‘যাথযোগ্য’ নেতারাই দেবেন- যে কেউ দিতে পারবেন না।

জানা গেছে, গুলশান হামলার পর আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন থেকেই এই ‘চর্চা’ শুরু করেন খালেদা জিয়া। ওই হামলার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে দোষারোপ না করে সংকট উত্তরণে সন্ত্রাসবিরোধী ‘জাতীয় ঐক্য’র ডাক দেন তিনি।

পরে অবশ্য আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের পাল্টা জবাব দিতে গিতে ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়াও গুলশানে জিম্মি উদ্ধার অভিযানে বিলম্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তবে এই ঘটনার জন্য ক্ষমতাসীনদের সরাসরি দায়ি করেননি তিনি। কেবল চলমান সংকট নিরসনে ‘জাতীয় ঐক্য’র ডাক এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি করেন খালেদা জিয়া।

সূত্র মতে, ‘জাতীয় ঐক্য’ গড়ার ক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার মাস্টারপ্লানের আরেকটি বিষয় হলো- সমমনা রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ঐক্যবদ্ধ করা। এরই মধ্যে কিছু কাজও শুরু করেছেন তিনি। সম্প্রতি রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে খালেদা জিয়া বলেন, জাতির এই সংকটকালে আমি আপনাদের কথা শুনতে চাই। আপনাদের সঙ্গে বসতে চাই। আপনার মত যারা আছেন, তাদের এক জায়গায় নিয়ে আমাকে ডাকুন, আমি চলে আসবো। যে কোনো জায়গায় যেতে এবং বসতে আমার আপত্তি নেই।

জানা গেছে, খালেদা জিয়ার এই মাস্টারপ্লান অনুযায়ী কাজ করছেন দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতা। তারা এরই মধ্যে ১৪ ও ২০ দলীয় জোটের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তারা। প্রাথমিক কথা-বার্তাও শেষ করেছেন তারা। বিশেষ করে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে খালেদা জিয়ার ‘জাতীয় ঐক্য’ আহ্বানের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য’র বিষয়টি নিয়ে সমমনা রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সঙ্গে কথা বলেছি। কথা-বার্তা এখনো চলছে। সংকট নিরসনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছি।

খালেদা জিয়ার মাস্টারপ্লান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তো দেশের বাইরে ছিলাম। গত রাতে ফিরেছি। তাই মাস্টারপ্লান সম্পর্কে কিছু জানি না। তবে ‘জাতীয় ঐক্য’র জন্য কাজ চলছে।

জানা গেছে, নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রেও আরও সচেতন হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন দলের চেয়াপারসন খালেদা জিয়া। আগ বাড়িয়ে বক্তব্য দিয়ে দলকে বিব্রত করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তিনি।

এরই ফলশ্রুতিতে গত কয়েকদিন নয়পল্টনের প্রেস ব্রিফিংয়ে খুব হিসেবি বক্তব্য দিচ্ছেন দায়িত্বশীল নেতারা। মঙ্গলবার (১২ জুলাই) রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর বিএনপি আয়োজিত শোক সভার প্রস্তাবে বলা হয়, ‘এখন সময় এসেছে দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির মাধ্যমে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদকে নির্মূল করার।’

এমনকি সোমবার (১১ জুলাই) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত ১৪ দলের জঙ্গি ও সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ থেকে বিএনপি চেয়াপারসন খালেদা জিয়াকে গুলশান হামলার জন্য দায়ী করা হলেও এ নিয়ে মঙ্গলবার বিএনপির শোক সভা থেকে তেমন কিছু বলা হয়নি।

কেবল শোক প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘জঙ্গি হামলায় বিএনপিসহ বিরোধী দলের ওপর দায় চাপানোয় প্রকৃত অপরাধীরা আরও সংগঠিত হয়ে অস্তিত্বমূলে আঘাত করছে, রক্তে রঞ্জিত করছে বাংলাদেশের শান্তিময় জনপদ।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এখন ব্লেইম গেম খেলার সময় নয়। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে সংকট নিরসনের সময়। কিন্তু বিষয়টি ক্ষমতাসীনরা বুঝতে চাইছেন না।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930