‘তাজ্জব হয়ে যাওয়ার মতো তথ্য আসছে’ — প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার তদন্তে তাজ্জব হয়ে যাওয়ার মতো তথ্য আসছে। তবে, তদন্তের স্বার্থে এখনই কিছু বলা হচ্ছে না।
রোববার (১৭ জুলাই) বিকেলে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। এশিয়া-ইউরোপ মিটিংয়ে (আসেম) যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রীর তিন দিনের মঙ্গোলিয়া সফর নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সন্ত্রাসী হামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন তদন্তের সবটুকু বলা যাবে না। যতটুকু বলা প্রয়োজন ততটুকুই বলা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে সবকিছু বলাও হয় না।’

তদন্তের অনেকগুলো ধাপ রয়েছে, সেগুলো পর্যায়ক্রমে এগুচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সব তথ্য দেওয়া হলে তাজ্জব হয়ে যেতে হবে। তদন্ত শেষে সবাই সবকিছু বুঝতে পারবেন।
প্রধানমন্ত্রী এসময় তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে বেশি ‘খোঁচাখুঁচি’ না করারও আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ করতে দিতে হবে।’
গুলশানে হামলার পর কিছু রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐক্যের কথা বলা হচ্ছে, এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য হয়ে গেছে। গ্রামে গ্রামে কমিটি হচ্ছে। সর্বস্তরের মানুষ সচেতন হয়ে উঠেছে। এবার ঈদের নামাজে সনাতন ধর্মের যুবকেরা পাহারা দিয়েছে। এটা বাংলাদেশের জন্য অভূতপূর্ব অর্জন।
সন্ত্রাস প্রতিরোধে সবাইকে আরও সচেতন হওয়ারও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, যারা পুড়িয়ে মারে, যারা যুদ্ধাপরাধী তাদের কথা আলাদা। তাদের সঙ্গে আমাদের ঐক্য করার কিছুই নেই। যাদের ঐক্য হলে পড়ে সন্ত্রাস সত্যিকার অর্থে দূর করা সম্ভব সে ঐক্য হয়ে গেছে।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা আতঙ্ক সৃষ্টি করা এদের উদ্দেশ্য ছিলো। তাদের সে উদ্দেশ্য বানচাল করতে আমাদের নিজেদের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করতে হবে। আত্মবিশ্বাস নিয়ে সবাইকে চলতে হবে। মানুষ সচেতন হলে, স্বতস্ফূর্তভাবে নিজেরাই প্রতিরোধ করতে পারবে।
শেখ হাসিনা জান?ান, মঙ্গোলিয়ার উলানবাটরে অনুষ্ঠিত এশিয়া-ইউরোপ মিটিংয়ে (আসেম) অংশ নিয়ে তিনি বিশ্বনেতাদের কাছে বলেছেন, বাংলাদেশ সবসময় অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে।
তিনি বলেন, আমাদের আসেম সম্মেলন শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ আগে ফ্রান্সের নিচে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে নিরীহ অনেক মানুষকে হত্যা করা হয়। বিশ্ব সম্প্রদায়ের পাশাপাশি বাংলাদেশও এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে।
‘এরপর সম্মেলন চলাকালে শুক্রবার রাতে তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টা করা হয়। আমরা সেটারও নিন্দা জানাই। কারণ বাংলাদেশ সবসময়ই অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে।’
তিনি জঙ্গিবাদ বিষয়ে সরকারের অবস্থানের কথাও আসেমে বলেছেন বলে জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসেমে অংশ নিয়ে আমি জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা বিশ্বনেতাদের জানিয়েছি। কেবল তাই নয়, বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসে মদতদাতা, অর্থদাতা ও প্রশিক্ষণদাতাদের খুঁজে বের করতে হবে।
তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ এখন কেবল বাংলাদেশের নয়, বৈশ্বিক সমস্যা। এই বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবেলায় বাংলাদেশ এখন বিশ্বসম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারও।যারা জঙ্গি হামলা করছে তারা কী স্বার্থে এ ধরনের হীন কর্মকাণ্ড করছে সে প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ খুন করে বেহেশতে যাওয়া যায় না। আর উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে, কেন এমন হচ্ছে তা খতিয়ে দেখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসী ঘটনা নতুন কিছু নয়। এদেশে বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। জিয়াউর রহমানের আমলে প্রেসক্লাবের স?ামনে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এরশাদের আমলেও ঘটেছে এ ধরনের ঘটনা।
আরেকটি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আতঙ্ক সৃষ্টি করাই সন্ত্রাসীদের উদ্দেশ্য। কয়েকটি শপিং মলে আক্রমণ হবে এমন খবর এলো। এর পরিপ্রেক্ষিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক হয়েছে, পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরাও জনগণকে সচেতন হতে বলেছি। সন্ত্রাস মোকাবেলায় যা যা করার দরকার আমরা তা করছি।
জঙ্গিবাদের অর্থদাতা ও পরামর্শদাতা কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলেও সাফ জানিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি জানান, সন্ত্রাসী হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের কাছে শুধু তথ্য ও প্রযুক্তিগত সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
আরেকটি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তদন্ত কি এতো তাড়াতাড়ি হয়ে যায়? আমাকে কেন এ প্রশ্ন করছেন? কতো বছর পর আমি বিচার পেয়েছি। ১৫ আগস্টে যখন আমার বাবা-মা, ভাইকে হত্যা করা হলো। ?আর কতো বছর পর তার বিচার হয়েছে? আমি কার কাছে এ প্রশ্ন করবো? একটি ঘটনা ঘটলে সঙ্গে-সঙ্গে তথ্য পাওয়া যাবে না।
শেখ হাসিনা তার উলানবাটর সফর সম্পর্কে বলেন, সেখানে রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনঝো আবের সঙ্গে আমার বৈঠক হয়। মেদেভেদেভের সঙ্গে বৈঠকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয়ে আলোচনা করি। তাকে ও প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানাই। আর জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য উন্নয়নের বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করি।
‘বৈঠক হয় ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও। গুলশান ?হামলায় ইতালি ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কে কোনো ঘাটতি হবে না বলে তিনি জানান’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসেম সম্মেলনে জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেল, সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রপতি, মঙ্গোলিয়ার রাষ্ট্রপতি, বেলাজিয়াম, ইন্দোনেশিয়া ও সাইপ্রাসের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানদের সঙ্গেও আমার সাক্ষাৎ হয়।
বাংলাদেশে সন্ত্রাসী হামলার পর কোনো কোনো বিদেশি শক্তির অবস্থান ও তৎপরতা সম্পর্কে অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক ষড়যন্ত্র-প্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। পদ্মাসেতু নির্মাণে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিলো। এটা কি সাংবাদিকরা খুঁজে দেখেছেন?
‘আমাদের নীতি ছিলো সম্মান নিয়ে বাঁচবো। আমরা তা করতে পেরেছি। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। আমাদের যে লক্ষ্য ছিলো মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া, আমরা সেই পথে এগিয়ে যাচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন প্রমুখ।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930