নগর সেবায় ক্যারাভান কার্যক্রমে প্রশাসক : ক্যারাভান জনতার আস্থার কর্মসূচীতে পরিণত হয়েছে-সুজন

চট্টগ্রাম ব্যুরো :: নগরবাসীকে অযাচিত দূর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে নতুন ও কার্যকর কিছু করার অদম্য ইচ্ছাশক্তি নিয়ে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন। তিনি আজ অপরাহ্নে আগ্রাবাদ ব্যাংকক-সিঙ্গাপুর মার্কেট-বেপারীপাড়া হতে শুরু হয়ে বড়পোল, নিমতলা পর্যন্তÍ দীর্ঘ ৬ কিলোমিটার পথ স্কুটি চালিয়ে ক্যারাভান কার্যক্রম পরিচালনা করার সময় একথা বলেছেন। তিনি আরো বলেন, নগরবাসীর সমস্যা ও দূর্ভোগ সরেজমিনে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য ও জনসম্পৃক্ততা রক্ষায় ক্যারাভান কর্মসূচী চলছে। ক্যারাভান ক্রমেই জনতার আস্থার কর্মসূচীতে পরিণত হয়েছে। একটা নগর বা দেশকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখার জন্য নাগরিকদেরও নানাবিধ দায়িত্ব পালন করতে হয়। নগরে যারা বসবাস করেন তাদের সকলের কিছু না কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য থাকেই। শুধু আইন করে কিংবা জোর দিয়ে নাগরিক সচেতনতা বাড়ানো যায় না। আইনের প্রতি সম্মান দেখাবার মানসিকতা নাগরিকদের স্বতঃস্ফূর্ত না হলে চাপিয়ে দিয়ে তার সুফল ষোল আনা পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। সত্যিকার অর্থে আমাদের এদেশে নাগরিক সচেতনতা কোনও কোনও ক্ষেত্রে যেমন বেড়েছে, তেমনই কোনও কোনও ক্ষেত্রে তার চরম অবনতিও ঘটেছে। লক্ষ্য করা গেছে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার এই শহরে বর্জ্যব্যবস্থাপনা বেশ উন্নতি হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের প্রচেষ্টা এবং নাগরিকদের সচেতনতা ও দায়িত্ববোধের জন্য নগরীর রাস্তাঘাটে ময়লা-দুর্গন্ধ অনেকটাই নিয়ন্ত্রীত। এজন্য নগরবাসীকে আমরা ধন্যবাদ দিতে চাই। তবে অন্যান্য ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ নাগরিকদের কাছ থেকে আমরা দায়িত্ববোধ ও সচেতনতা প্রত্যাশা করি। চলতি পথে যুবসমাজের উষ্ণঅভ্যর্থনায় প্রশাসক বলেন, আমি লক্ষ্য করেছি আপনাদের পর্যাপ্ত খেলার মাঠ নাই, নাই সহপাঠিদের সাথে কথা বলার মত পরিবেশ সম্মত বসার স্থান। তাই এই বিষয়ে আমি পদক্ষেপ নিব। তিনি বলেন, বস্তুতপক্ষে এই শহর মানুষের শহর। তাই বাসযোগ্য শহর গড়তে আমাদেরকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। তবেই আমাদের আগামী প্রজন্ম মানসম্মত পরিবেশ পাবে। নাগরিকগণ প্রদেয় ট্যাক্সের বিপরীতে তাদের নাগরিক সেবা শতভাগ বুঝে নেবেন। এতে কোন সমস্যায় উপণীত হলে আমাকে হোয়াটসআ্যপে জানান ১ঘন্টার মধ্যে পদক্ষেপ নিব-ইনশাআল্লাহ। প্রশাসক টিএন্ডটি কলোনীর সামনে ফুটপাতের উপর গড়ে উঠা অবৈধ কাঁচা বাজার দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করে তা তাৎক্ষণিক কিছু অংশ ম্যজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ভেঙ্গে দেয়া হয় এবং আগামীকাল থেকে এই বাজার আর না বসানোর জন্য সতর্ক করে দেন। অন্যথায় জরিমানা ও উচ্ছেদের আওতায় আনা হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন। এছাড়া তিনি এক্সেস রোড ও বড়পুল এলাকায় বেশ কিছু জায়গায় ফুট পাত ও রাস্তা দখল করে ইট,বালি,পাথরের অবৈধ ব্যবসায়ীকে জরিমানা ও আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে মালামাল সরানোর নির্দেশনা দেন নচেৎ মালামাল জব্দ করা হবে ছাফ জানিয়ে দেন। এসময় কিছু ব্যবসায়ীকে আর্থিক জরিমানাও করা হয়। তিনি বলেন, আগামীকাল ভ্রাম্যমান আদালতের সাথে কয়েকটি ট্রাক থাকবে অবৈধ মালামাল জব্দ করে নিয়ে যাওয়া হবে। এসময় তিনি বিভিন্ন দোকানের ট্রেড লাইসেন্স আছে কিনা জানতে চাইলে কেউই ট্রেড লাইসেন্স প্রদর্শন বা সদুত্তোর দিতে পারেননি বিধায় তাদেরকে ট্রেড লাইসেন্সের আওতায় আনার জন্য সংশ্লিস্টদের নির্দেশনা দেন। তিনি আরো প্রত্যক্ষ করেন যে, ফুটপাতের উপর অবৈধভাবে পানির ভাউচার ও ড্রাম রেখে মানুষ চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন। তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, মানুষের চলার পথে কাটা হবেন না। আজ বলে যাচ্ছি কাল থেকে আর ছাড় নয়। বড়পুল এলাকায় প্রশাসক স্থানীয়দের সাথে অভিযোগ গ্রহণকালে খবর পান যে, মইন্যাপাড়া এলাকায় রাস্তার কাজে ড্রেনের ময়লা পানি দিয়ে রাস্তা ঢালায়ের নি¤œমানের কাজ করা হচ্ছে। তিনি সাথে সাথে মুঠোফোনে ঠিকাদারকে যেটুকু কাজ করা হয়েছে তা ভেঙ্গে পুনরায় পরিস্কার পানি দিয়ে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে নির্দিষ্ট সমেয়র মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশনা দেন। তিনি এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, আওয়ামীলীগ বা কোন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে অরাজকতা বরদাস্ত করা হবে না। অরাজকতা দমনের উদ্দেশ্যেই সরকার নিজেদের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত রেখেছে। জনগণের সেবক ও বন্ধু হয়ে কাজ করুন। তিনি বড়পুলে নির্মিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের চতুর্পাশে পরিদর্শন করে বলেন, এটি একটি দর্শনীয় ও পবিত্র স্থান, এস্থানে যাতে অযাচিত কোন কাজ কিংবা অবৈধভাবে কোন দোকানপাট করা না হয় সেজন্য এলাকাবাসীকে দায়িত্ববোধ ও সজাগ থাকতে হবে। পরে প্রশাসক পোর্ট কলোনী থেকে নিমতলা এলাকায় দীর্ঘসারিবদ্ধভাবে দঁড়িয়ে থাকা ইস্পাত শিল্পের ভারী লরীগুলোকে এভাবে না রাখার নির্দেশনা ও নিমতলা এলাকায় অলস গাড়ী পার্কিং ও যত্রতত্র যাত্রী উঠা-নামা না করার জন্য সংশ্লিস্টদের প্রতি অনুরোধ জানান এবিষয়ে তিনি পুলিশ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, এই সড়কটি বন্দর সংযুক্ত একটি সড়ক দীর্ঘ বঞ্চনার পর এই রাস্তা সংস্কারে সিটি কর্পোরেশন যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এই সড়কের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও বড় অংকের বরাদ্দ দিয়েছেন। তিনি অত্র এলাকার বাসিন্ধাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমি প্রশাসক প্রতিদিন একই রাস্তায় আসা সম্ভব নয় তবে আপনারা যার যার জায়গায় নিজেরা সচেতন হয়ে এলাকাকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আমার সহযোগিতার দরজা আপনাদের জন্য সবসমসয় খোলা। তিনি বলেন, আজকে আমি একজন রাজনীতিক কর্মী, আপনাদের সহপাঠি কিংবা ভাই হিসেবে এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে অনুরোধ করে যাচ্ছি আগামীকাল হয়তো আমাকে প্রশাসকের কঠোর ভুমিকায় অবর্তীর্ণ হতে হবে তখন আমি পরিচিতির আবদার রাখতে পারবো না। আইন আপন গতিতে চলবে। এসময় সাবেক কাউন্সিলর লায়ন মোহাম্মদ হোসেন, স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা জজ) জাহানারা ফেরদৌস, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারুফা বেগম নেলী, প্রশাসকের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাশেম, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শফিকুল মান্নান সিদ্দীকী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশল ঝুলন কুমার দাশ, নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাদাত মোহাম্মদ তৈয়ব, প্রকৌশলী রেজাউল বারী, স্থানীয়দের মধ্যে হাজী মোহাম্মদ ইলিয়াছ, আবদুর রহমান মিয়া, রেজাউল করিম কায়সার, মোর্শেদ আলী, জাকির মিয়া, হাবিব শরিফ,আজিজুর রহমান আজিজ, ইমরান আহমেদ ইমু, ও রনি মির্জাসহ শত শত স্থানীয় গণ্যমান্যব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930