বাংলাদেশের তরুণ জনশক্তির সুবিধা নিন: জাপানে প্রধানমন্ত্রী

সেই সঙ্গে বাংলাদেশে বিদেশি নাগরিক ও বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের নিরাপত্তা দেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “আমাদের দরজা আপনাদের জন্য খোলা। আমি চাই আমাদের জাপানি বন্ধুরা বাংলাদেশে আসবেন, তরুণ কর্মীবাহিনী এবং অন্যান্য সুযোগসুবিধাগুলো কাজে লাগাবেন।”
রোববার টোকিওতে জাপানের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে এক প্রাতরাশ বৈঠকে এই আহ্বান জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এই সফরে তার সঙ্গে থাকা বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারাও ম্যান্ডারিন ওরিয়েন্টাল হোটেলের লিন্ডেন কক্ষে এই প্রাতরাশ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এবং জাপানের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থা জেইটিআরও এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
প্রাতরাশ বৈঠকে শেখ হাসিনা জাপানি ব্যবসায়ীদের বলেন, তার সরকার বাংলাদেশে ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও আইটি পার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে; এর মধ্যে ৩৩টির কাজ এগিয়ে চলেছে।
“আমরা আশা করছি, আগামী চার বছরে বাংলাদেশের শিল্প উৎপাদন খাতে যুক্ত হবে আরও ১ কোটি মানুষ।”
জাপানকে বাংলাদেশের সবচেয়ে ‘পরীক্ষিত বন্ধু’ অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কর্মনিষ্ঠার কারণে জাপানের বিনিয়োগকারীদের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের গভীর আস্থা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে বৈঠকে জাপানের ‘রিভাইটালাইজেশন স্ট্র্যাটেজি’ এবং অবকাঠামো খাতে অংশীদারিত্বের বিষয়ে আলোচনার কথাও শেখ হাসিনা ব্যবসায়ীদের সামনে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন,“আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠী, তাদের দক্ষতা ও সৃজনশীলতা, বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান, উন্নয়ন আকাঙ্ক্ষা এবং শিল্পায়ন পরিকল্পনা জাপানের রিভাইটালাইজেশন পরিকল্পনার সঙ্গে মিলে যাবে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুটি পাবলিক-প্রাইভেট অর্থনৈতিক সংলাপের মধ্য দিয়ে দুই দেশের বোঝাপড়া আরও দৃঢ় হয়েছে বলে তিনি জেনেছেন। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশের প্রশাসনিক কার্যক্রম আরও সহজ করতে তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
আর এসব বিষয়ে জাপানি ব্যবসায়ীদের মতামত ও পরামর্শ জানার আগ্রহের কথাও তিনি অনুষ্ঠানে জানান।
বিনিয়োগকারীদের চাহিদা অনুযায়ী প্রণোদনা দেওয়া, জ্বালানি সরবরাহ ও অন্যান্য সংযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা এবং কিছু ক্ষেত্রে কর কাঠামো শিথিল করারও প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশে নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, জাপানি নাগরিক এবং তাদের স্থাপনায় সম্ভাব্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশনা তিনি দিয়ে রেখেছেন।
“বাংলাদেশে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার প্রেক্ষিতে বিদেশি নাগরিক ও বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে আপনারা হয়তো উদ্বিগ্ন। আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছি, বাংলাদেশ সরকার যে কোনো ধরনের সন্ত্রাস ও উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে কাজ করছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় ওষুধ ও জাহাজ নির্মাণ শিল্প হয়তো জাপানি ব্যবসায়ীদের আগ্রহী করবে। বাংলাদেশের সমুদ্রভিত্তিক ব্লু ইকোনমিও তাদের সামনে নতুন অনেক সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।
জাপান যেভাবে থাইল্যান্ডের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতে সাফল্য পেয়েছে, সেই সুযোগ বাংলাদেশেও রয়েছে বলে ব্যবসায়ীদের জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী তথ্যপ্রযুক্তি, তৈরি পোশাক ও হালকা প্রকৌশল খাতে জাপানি ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন এবং পাট,মৎস্য আহরণ ও টেক্সটাইল ম্যানুফেকচারিং খাতের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানান।
বাংলাদেশ সরকারি বন্ড ছাড়ার উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপানি ব্যাংকগুলো হয়তো এ বিষয়ে আগ্রহী হবে।
জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অরগানাইজেশনের চেয়ারম্যান হিরোইয়ুকি ইশিগে, জাপান-বাংলাদেশ কমিটি ফর কমার্শিয়াল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের (জেবিসিসিইসি) চেয়ারম্যান তেরু আসাবা, তোশিবা করপোরেশনের প্রেসিডেন্ট মাশাশি মুরোমাচি, হোন্ডা মটরসের অপারেটিং অফিসার শিনজি অয়ামা, সিমিজু করপোরেশনের প্রেসিডেন্ট কাজুইয়ুকি ইনু, ওয়াইকেকে করপোরেশনের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট হিরায়োকি ওতানি, মারুহিশা লিমিটেডের প্রেসিডেন্ট মাশাহিরো হিরাইশি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এই প্রাতরাশ বৈঠকে অংশ নেন।
জি-সেভেন আউটরিচ মিটিংয়ে যোগ দিতে গত বৃহস্পতিবার জাপান পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এবং শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ অন্যান্য সরকারপ্রধান এবং সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয় শেখ হাসিনার।
চারদিনের এই সফর শেষে রোববার সন্ধ্যায় টোকিও থেকে দেশের পথে রওনা হবেন প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930