বিপদসীমার ওপরে কাপ্তাই হ্রদের পানি

॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে কাপ্তাই হ্রদের পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বর্তমান পানি লেভেল ১০৮.৮৮ এম,এস,এল (মিনস সী লেবেল) ওপর প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বাঁধ রক্ষার্থে স্প্রীলওয়ের ১৬টি গেইট গতকাল ৩ অক্টোবর সোমবার সকাল ৯ টা থেকে ছয় ইঞ্চি করে খুলে দিয়ে ৯ হাজার কিউসেক পানি ছেড়ে দেয়া হচ্ছে
এদিকে হ্রদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে লেকের পার্শ্ববর্তী অনেক বসতবাড়ী ইতিমধ্যে তলিয়ে গেছে। রাঙ্গামাটি শহরের পৌর কলোনী, আসামবস্তী, পুরাতনবস্তী, গর্জনতলী, রাজবাড়ী এলাকা সহ বেশী কিছু নিচু এলাকার বাড়ী ঘরে পানি উঠে গেছে।
হ্রদের পানি বৃদ্ধির ফলে রাঙ্গামাটির পর্যটন কর্পোরেশনের ঝুলন্ত ব্রীজ এখন ৪ ফুট পানির নিচে ডুবে আছে। পানি নিচে ডুবে থাকার কারণে পর্যটনে ঘুরতে আসা পর্যটকরা হতাশা হয়ে ফিরে যাচ্ছে।
কাপ্তাই পিডিবি কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মোঃ আবদুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের স্বার্থে হ্রদের পানিকে যথা সম্ভব কাজে লাগানো হচ্ছে। হ্রদের পানি কাল রাত থেকে বেশী বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের ধারণ ক্ষমতার উপরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।  তাই সকাল ৯ টা থেকে ৬ ইঞ্চি খুলে দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, এছাড়াও কাপ্তাই হ্রদের পানি ব্যবসার করে পাওয়ার হাউজে ৫টি ইউনিটে দিয়ে ২২০ মেগাওয়ার্ট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ৫ টি ইউনিট দিয়ে ৩০ হাজার কিউসেক পানি ছাড়া হচ্ছে। কাপ্তাই হ্রদের পানির অবস্থা বুঝে হয়তো ¯প্রীলওয়ের আরো বেশী খুলে দেয়া সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্র জানিয়েছে, কাপ্তাই বাঁধের মাধ্যমে কাপ্তাই লেকে পানির সর্বোচ্চ পানির ধারণক্ষমতা ১০৯ এমএসএল। কিন্তু শনিবার ১০৫ এম এস এল পানি জমা হওয়ার পরই কাপ্তাই বাঁধের স্প্রিলওয়ে খুলে দেয়ায় কর্ণফুলী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা জানান, পাহাড়ি ঢল এবং বর্ষণ অব্যাহত থাকায় কাপ্তাই লেকে পানির উচ্চতা বিপদসীমা যেকোন মুহূর্তে অতিক্রম করতে পারে। এ ছাড়া কাপ্তাই লেকে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লেকের উপরিভাগ রাঙ্গামাটি জেলার বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। লেকের পানির উচ্চতার কারণে আরও নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আমাদের কাপ্তাই সংবাদদাতা জানান, পাহাড়ে হঠাৎ ভারী বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে কাপ্তাই লেকে অস্বাভাবিক পরিমাণে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে কাপ্তাই লেকে ১০৮.৮ ফুট মীন সি লেভেল (এমএসএল) পানি রয়েছে বলে জানা গেছে। লেকে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ সোমবার (৩ অক্টোবর) সকাল ১১টা থেকে ৬ ইঞ্চি হারে পানি ছেড়ে দিয়েছে। কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবদুর রহমান লেক থেকে পানি ছাড়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১৬টি গেইট দিয়ে সমান হারে ৬ ইঞ্চি পরিমানে পানি ছাড়া হচ্ছে। লেকে যতক্ষণ পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে ততক্ষণ পানি ছাড়া অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান। আর পানি বৃদ্ধি মাত্রা কমলে পানি ছাড়া বন্ধ করা হবে।
এদিকে কাপ্তাই লেকে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি জেনারেটর থেকে বর্তমানে ২২০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। প্রকৌশলী আবদুর রহমান বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি সুত্র জানায় চলতি বছর এবারই প্রথম লেক থেকে পানি ছাড়া হলো। তবে পানি ছাড়ার মাত্রা কম থাকায় লেকের পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হবার খবর পাওয়া যায়নি। সুত্র জানায় বর্ষা মউসুম শেষ হলেও পাহাড়ি অঞ্চলে এখনো প্রায় সময় মুষলধারে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। পুরো অক্টোবর জুড়ে মাঝে মধ্যে এভাবে ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলেও সুত্র আভাস দিয়েছে।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930