মফস্বল, স্থানীয়, আঞ্চলিক ও গ্রামীন সংবাদপত্রগুলোকে বাঁচাতে বিজ্ঞাপন নীতিমালা পরিবর্তন

॥ এ কে এম মকছুদ আহমেদ
বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অর্থাৎ মফস্বল, স্থানীয়, আঞ্চলিক ও গ্রামীন সংবাদপত্র যেটা বলা হউক না কেন এগুলোকে বাঁচাতে বর্তমান বিজ্ঞাপন নীতিমালা পরিবর্তন করে উপজেলার বিজ্ঞাপন এবং সম্প্রতি বন্ধ করে দেয়ায় বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন সরাসরি উল্লেখিত সংবাদপত্রগুলোতে দেয়া জরুরী হয়ে পড়েছে। নতুবা এসব সংবাদপত্রগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। কয়েকশ সংবাদপত্র ইতিমধ্যে শেষ ঘন্টা বাজিয়েছে। এমনিতেই বর্তমানে সরকারের উদার নীতির ফলে অনলাইন এর ঠেলাঠেলিতে মুদ্রিত সংবাদপত্রগুলোর ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। এছাড়াও বর্তমান বিজ্ঞাপন নীতিমালার ফলে তেলামাথায় তেল দেয়াতে উল্লেখিত সংবাদপত্রগুলোর রিজিক চলে গেছে ঢাকার পত্রিকাগুলোর হাতে। অন্যদিকে বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদ বিলুপ্ত করে মালিকদের সংগঠন নৌযাবের কারণে আমাদের নিকট মরার উপর খঁড়ার ঘাঁ এর মত অবস্থা। ঢাকার বড় সংবাদপত্রগুলো বিজ্ঞাপনের উপর নির্ভর করতে হয় না। বিক্রির উপর দিয়ে সহজে চালানো যায়। এছাড়াও বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের এবং ব্যাংক, বীমা, করপোরেশন গুলোর প্রধান কার্যালয় ঢাকাতে এবং বিভাগীয় শহরগুলোতে। আমাদের গ্রামাঞ্চলে শিল্প কারখানা খুবই কম। কোন কোন এলাকাতে একেবারেই শিল্প কারখানা নেই। আমাদেরকে ইতিপূর্বে নির্ভর করতে হতো উপজেলার বিজ্ঞাপনের উপর। উপজেলা বন্ধ করে দেয়ার পর বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগের উপর নির্ভর করতে হতো। অতিসম্প্রতি বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বন্ধ করে দেয়াতে একেবারেই মাঠে মারা যাওয়ার অবস্থা।
ঢাকার পত্রিকাগুলো সরকারী, বেসরকারী, স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ক্রোড়পত্র পেয়ে থাকে। এচাড়া সরকারী ক্রোড়পত্রের রঙ্গিন বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। আর আমাদের দেয়া সাদাকালো বিজ্ঞাপন। এতেও বৈষম্যমূলক ব্যবহারেও অতিষ্ট অনেকেই। অথচ নতুন বিজ্ঞাপন নীতিমালা অনুযায়ী তথাকথিত ওয়েজ বোর্ডের মিথ্যা বাস্তবায়ন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন হার অনেক বেশীই নিচ্ছে। তার উপরে রঙ্গিন এর জন্য অতিরিক্ত চার্জ নেয়ার কারণে সরকারী ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। আমাদের কিছু কিছু খুব কম সংখ্যক দৈনিক পত্রিকা ব্যাংক ও কর্মচারীদের যোগসাজশে ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন দেখিয়ে বেশী বিজ্ঞাপন হার নিচ্ছে। অথচ তথাকথিত ওয়েজ বোর্ডে যে বেতন স্কেল দেয়া হয়েছে সেটা আমাদের মতো পত্রিকাগুলোর পক্ষে কোন অবস্থাতেই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এত বেশী অসামাঞ্জ্যস্য যে ঢাকায় হাতে গোনা কয়েকটি পত্রিকা এবং চট্টগ্রামের ২টা, খুলনায় ২/৩টি ছাড়া অন্য পত্রিকাগুলোর পক্ষে মোটেও সম্ভব নয় ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন। ঢাকার অধিকাংশ পত্রিকাই শুধুমাত্র কিছু সংখ্যক ডেক্সের ষ্টাফদের দিয়ে বাস্তবায়ন দেখাচ্ছে। অথচ জেলা শহর এবং মফস্বলের কাউকে নতুন ওয়েজ বোর্ড দেয়া হচ্ছে না। ২০০৫ সনে বেগম খালেদা জিয়ার শেষ সময়ে বিজ্ঞাপন নীতিমালা বদলিয়ে মফস্বল বাদ দিয়ে শুধু ঢাকার ২টি জাতীয় পত্রিকাকে একটি ইংরেজী ও একটি বাংলা পত্রিকাকে পর পর দুইবার বিজ্ঞাপন দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে বিভিন্ন আবেদন নিবেদনের পর মফস্বলের জন্য উক্ত বিধান রেখে নতুন বিজ্ঞাপন নীতিমালা দুইবার করা হলেও তথাকথিত ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নের অজুহাতে সফস্বলের পত্রিকা উক্ত হার দিচ্ছে না। অথচ ইতিপূর্বে একটি বিজ্ঞাপন কমপক্ ে৬ থেকে ১২টি পত্রিকাকে দেয়া হতো। এছাড়াও মরহুম জিয়াউর রহমানের আমলে ৬০% এবং ৪০% হারে বিজ্ঞাপন বন্টন করা হতো। মফস্বলের বিজ্ঞাপন মফস্বলের পত্রিকাকে ৬০% এবং ঢাকার পত্রিকাকে ৪০% এবং ঢাকার বিজ্ঞাপন ঢাকার পত্রিকায় ৬০% মফস্বলের পত্রিকায় ৪০% দেয়ার বিধান ছিল। গ্রহনযোগ্য বিজ্ঞাপন নীতিমালা এবং ওয়েজ বোর্ড সংশোধন করে স্থিতিশীল অবস্থা ফিরিয়ে আনা দরকার। (লেখক-সম্পাদক-প্রকাশক, দৈনিক গিরিদর্পণ, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ গ্রামীন সংবাদপত্র পরিষদ ও জাতীয় সংবাদপত্র পরিষদ)।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031