রাঙ্গামাটির মুক্তিযোদ্ধাদেরও কোন খবর নেই

রাঙ্গামাটির মুক্তিযোদ্ধাদেরও কোন খবর নেই
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
নিরবে নিভৃতে পার হয়ে গেলো দেশের ৭ বীর শ্রেষ্ঠে একজন আব্দুর রউফের শাহাদাৎ বার্ষিকী। বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস বিভিন্ন দিবস আসলে বীর শ্রেষ্ঠদের খোঁজ রাখলেও দেশের জন্য যুদ্ধ করে ২০ এপ্রিল প্রাণাহুতি দিলেও সরকারী, বেসরকারী এবং বিজিবির পক্ষ থেকেও কোন আনুষ্ঠানিকতা ছিলো না। যা দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাবিয়ে তোলে।
যে জাতি তার ইতিহাস মনে রাখে না, তার বীরদের সম্মান দেয়না সে জাতি উন্নতি করতে পারেনা, আর কোন বীরের জন্ম দেয়না।
দিবসটি পালনে তাঁর সমাধিক্ষেত্র রাঙ্গামাটিতে ছিলনা রাষ্ট্রীয় কোনো আয়োজন। তবে গ্রামবাসীর উদ্যোগে পারিবারিকভাবে ফরিদপুরের মধুখালীতে মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
মুন্সি আব্দুর রউফ ১৯৪৩ সালের ৮ মে ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার (পূর্বে বোয ালমারী উপজেলার অন্তর্গত) সালামতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মুন্সি মেহেদী হোসেন এবং মাতার নাম মকিদুন্নেসা। কিশোর বয়সে আব্দুর রউফ-এর পিতা মারা যান। ফলে উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন আব্দুর রউফ। তিনি অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। আব্দুর রউফ ১৯৬৩-র ৮ মে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস-এ ভর্তি হন। তাঁর রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ১৩১৮৭।
১৯৭১ এর ২৫ মার্চ স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতে চট্টগ্রামে ১১ নম্বর উইং এ কর্মরত ছিলেন। সে সময  তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি কোম্পনীর সাথে মুন্সি আব্দুর রউফ পার্বত্য চট্টগ্রামে রাঙ্গামাটি-মহালছড়ি জলপথ প্রতিরোধ করার জন্য বুডি ঘাটে অবস্থান নেন।
৮ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কমান্ডো ব্যাটেলিয়নের দুই কোম্পানী সৈন্য, সাতটি স্পীড বোট এবং দুটি লঞ্চে করে বুড়িঘাট দখলের জন্য অগ্রসর হয়। তারা প্রতিরক্ষি বূহ্যের সামনে এসে ৩” মর্টার এবং অন্যান্য ভারী অস্ত্র দিয়ে হঠাৎ অবিরাম গোলা বর্ষন শুরু করে। গোলাবৃষ্টির তীব্রতায় প্রতিরক্ষার সৈন্যরা পেছনে সরে বাধ্য হয়। কিন্তু ল্যান্সনায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ পেছনে হটতে অস্বীকৃতি জানান। নিজ পরিখা থেকে মেশিনগানের গুলিবর্ষণ শুরু করেন।
মেশিনগানের এই পাল্টা আক্রমণের ফলে শত্রুদের স্পীড বোট গুলো ডুবে যায়। হতাহত হয় এর আরোহীরা। পেছনের দুটো লঞ্চ দ্রুত পেছনে গিয়ে নিরাপদ দুরত্বে অবস্থান নেয়। সেখান থেকে শুরু করে দুরপাল্লার ভারী গোলাবর্ষণ। এক পর্যায়ে মর্টারের ভারী গোলা এসে পরে আব্দুর রউফের উপর। লুটিয়ে পড়েন তিনি, নীরব হয়ে যায় তাঁর মেশিনগান। শহীদ হলেন ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ। বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ তার জীবনের বিনিময়ে রক্ষা করে গেছেন তার প্রায় ১৫০ জন সহযোদ্ধার জীবন এবং পাকিস্তানী বাহিনীর বহু সৈন্যকে হতাহত করেছেন।
এদিকে মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবসে রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিবাদী বক্তব্য উপস্থাপন করলেও একজন বীর শ্রেষ্ঠের শাহাদাৎ বার্ষকীতে তাদের কোন খোঁজ নেই।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930