রাঙ্গামাটি জেলা এখন মৃত্যু পুরীতে পরিণত

॥ নন্দন দেবনাথ ॥  রাঙ্গামাটি জেলা এখন মৃত্যু পুরীতে পরিণত হয়েছে। রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় শহরে চলছে এখন লাশের মিছিল। নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০৮ জনে দাড়িয়েছে। রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধসের মৃতের সংখ্যা শুধুই বাড়ছে। ক্ষতিগ্রস্থ  হয়েছে এক হয়েছে এক হাজার দুই শত মানুষ। স্বজন আর ঘরবাড়ি হাড়িয়ে দিশেহারা মানুষ যে যেখানে পারছে দল সেখানে আশ্রয় নিচ্ছে। আশ্রয় কেন্দ্রে শোকাহত মানুষ হতবিহবল হয়ে পড়েছে। চলছে চারিদিকে হাহাকার।
রাঙ্গামাটির ভেদভেদী এলাকার নতুনপাড়া ও পশ্চিম মুসলিমপাড়ার বাসিন্দা আখিঁ ও ইব্রাহিম জানান, এমন প্রচন্ড বজ্রপাত আর একটানা এত ভারী বর্ষন আর কোন দিন দেখেনি। টেপের পানি ছাড়লে পানি যে ভাবে পড়ে সেভাবেই বৃষ্টি হয়েছে টানা দুদিন। আর সাথে ছিল প্রচন্ড রকমের বজ্রপাত। এই টানা বজ্রবৃষ্টির ফলেই তাদের চোখের সামনেই অনেক ঘরবাড়ি পাহাড়ধসে মাটিচাপা পড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে শহতশতঘর বাড়ি। হতাহত হয়েছে প্রায় আড়াইশতাধিক । ঘরবাড়ি হাড়িয়ে ক্ষতিগ্রমÍদের এখন থাকার মতো কোনো জায়গাও নেই।
এমন দুটি এলাকা নতুনপাড়া ও মুসলিমপাড়া । এই এলাকার ক্ষতিগ্রস্তরাা এখন আশ্রয় নিয়েছে রাঙ্গামাটি বেতার কেন্দ্রে। আশ্রয় কেন্দ্র না হলেও জীবন বাঁচাতে তারা বেতার কেন্দ্রের আশপাশে অবস্থান নিয়েছে ২০ পরিবারের ৪৫ জন ।
রাঙ্গামাটির নতুনপাড়া এলাকায় পাহাড় ধসে আহত হয়ে হাসপাতালে অচেতন অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন অটোরিক্সা চালক নুরন্নবী। তার বসতঘরে মাটি চাপা পড়ে স্ত্রী ,মেয়ে ছেলে ও নাতনীসহ মারা গেছে ৬ জন। তার পার্শবর্তী ঘরের প্রতিবেশি ইব্রাহীম জানান, উদ্ধারকারীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। তিনি তার পরিবার পরিজন ও সহায় সম্বল সব হারিয়েছে। নুরন্নবীর মতো আরো অনেকে পরিবার পরিজন ও ঘরবাড়ি হারিয়েছে আবার অনেক ঘরবাড়ি হাড়িয়ে নিৎস্ব হয়েছে। রাঙ্গামাটি আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে আশ্রয় নেয়া লোকজন চরম দুর্বিসহ দিন কাটাচ্ছে।
ব্যাপক পাহাড় ধসে রাঙ্গামাটি চট্টগ্রাম , রাঙ্গামাটি –খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি-কাপ্তাই সড়ক যোগাযোগ বিছ্চিন্ন। রাঙ্গামাটির বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনে পাহাড় ধসে গাছপালা ভেঙ্গে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ। বিদ্যুৎ না থাকায় পানি সরবরাহ বন্ধ। শহরে দেখা দিয়েছে তীব্র জ্বালানী সংকট। জ্বালানী তেলের অভাবে শহরে বন্ধ হয়ে গেছে যানবাহন চলাচল। বাজারে জ্বালানী তেল মজুদ করে কৃত্রিম সংকট তৈরী করা হচ্ছে। দ্রব্য মূল্যও বাড়ছে হু হু করে। বাজারে মোমবাতি আর কেরোসিন পাওয়া যাচ্ছেনা। তেলের অভাবে জেনারেটর চালু রাখতে না পারায় সরকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ হয়নি। ব্যাংক গুলোতে লেন দেন বন্ধ হয়ে গেছে। ভেঙ্গে পড়েছে নাগরিক জীবন।
রাঙ্গামাটি ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক দিদারুল আলম জানান রাঙ্গামাটি শহরের মানিকছড়ি, শিমুলতলী, ভেদভেদী এলাকায় পাহাড় ধ্বসে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় তারা উদ্ধার কাজ চালাচ্ছেন।
বিভিন্ন গ্রুপে তারা উদ্দার কাজ করছেন।  তিনি জানান তৃতীয় দিনে এক সেনা সদস্য সহ এক নারী ও এক পুরুষ মিলে দুপুর পর্যন্ত আরো তিনটি লাশ উদ্ধার করেছেন উদ্ধারকর্মীরা। বিকাল ৩টায় রাঙ্গামাটি শহরে আবারো বৃষ্টি শুরু হওয়ায়  উদ্ধার তৎপরতা কঠিন হয়ে পড়ে। তারপরও মৃতদেহ উদ্ধারে চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান।
গত তিন দিন ধরে রাঙ্গমাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, রাঙ্গামাটি- কাপ্তাই সড়ক, রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি সড়ক বিছিন্ন রয়েছে।
রাঙ্গামাটির দূর্গত মানুষের জন্য সরকার ৫০ লক্ষ টাকা নগদ ১০০ মেট্রিক টন চাল, প্রত্যেককে ৫শত বান্ডিন টিন ও ৩ হাজার করে টাকা প্রদানের ঘোষণা দেয়ার পর জেলা প্রশাসন ক্ষতি নিরুপনে তিনটি কমিটি গঠন করেছে।
এছাড়া দুর্গতের পাশে দাঁড়িয়েছেন রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ। রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমার নেতৃত্বে পরিষদের সদস্যরা রাঙ্গামাটি জেলা সদর সহ ১০ উপজেলায় দুর্গতদের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছে।
রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা বলেন, আমরা রাঙ্গামাটি জেলার দুর্গতের দাঁড়িয়েছি। সরকারের অংশ হিসাবে নিহতদের প্রতি পরিবারকে ২০ হাজার টাকা এবং ২০ কেজি করে চাল প্রদান করেছি।
তিনি বলেন, রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালে আহত যত গুলো আছে তাদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করার সকল প্রকার ব্যবস্থা নিয়েছি। তিনি বলেন, ডাক্তার সার্বক্ষণিক রয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন যতগুলো রোগী রয়েছে তাদের সকল ব্যয় ভার আমরা গ্রহণ করবো।
রাঙ্গামাটি সিভিল সার্জন ডাঃ শহীদ তালুকদার বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা প্রদানে আমরা চিকিৎসকরা উপস্থিত রয়েছি। কিন্তুবিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ না থাকায় চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে।
রাঙ্গামাটি হাসপাতালে কালায়ন চাকমা নামে এক পাহাড়ি জানান তার জীবনে এ বড় বিপর্যয়  রাঙ্গামাটিতে  এর আগে কখনো দেকেন নি । এ ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগে এস প্রানহানীর ঘটনা তিনি দেখেন নি।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031