২-০ ব্যবধানে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজ জিতল টাইগাররা

সময় যত গড়ালো ততই উইকেট থেকে সহায়তা পেলেন স্পিনাররা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সকালের শিশির শুকালে বল ভয়ানক টার্ন এবং স্কিড করল। সেই সঙ্গে উঠা-নামা করল। কখনও লাফিয়ে উঠল, মাঝে মধ্যে নিচু হয়ে গেল। এর সদ্ব্যবহার করলেন বাংলাদেশ বোলাররা।

আধিপত্য বিস্তার করে বোলিং করলেন মেহেদী হাসান মিরাজ, সাকিব আল হাসান, তাইজুল ইসলাম ও নাঈম হাসান। তাদের স্পিন ভেলকি কোনোভাবেই বুঝে উঠতে পারলেন না ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানরা। বলির পাঁঠা হয়ে একে একে এলেন আর গেলেন। সবশেষ যাওয়া-আসার মিছিলে যোগ দিলেন শারমন লুইস। ২১৩ রানে অলআউট হলেন অতিথিরা। এতে এক ইনিংস ও ১৮৪ রানে জিতল বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে ২-০ ব্যবধানে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজ জিতল টাইগাররা।

নিজেদের ১৮ বছরের টেস্ট ইতিহাসে এটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়। এসময়ে কখনও ইনিংস ব্যবধানে জেতেনি তারা। এর আগে সাকিবদের বড় জয় ২২৬ রানের। ২০০৫ সালে চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এ ব্যবধানে জেতে তারা। রানের ব্যবধানে উইন্ডিজের বিপক্ষে জয়টি চতুর্থ সর্বোচ্চ।

প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের করা ৫০৮ রানের জবাবে ১১১ রানে অলআউট হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ফলে ফলোঅনে পড়ে সফরকারীরা। ৩৯৭ রানে পিছিয়ে থেকে পরে ব্যাট করতে নেমেও শুরুটা শুভ হয়নি তাদের।

সূচনালগ্নেই ফিরে যান দুই টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও অতিথি শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন সাকিব। ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটকে এলবিডব্লিউ করে ফেরান তিনি। প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই ছোবল মারেন মিরাজ। কাইরন পাওয়েলকে মুশফিকুর রহিমের স্ট্যাম্পিং করে ফেরান তিনি।

খানিক বাদে সুনিল আমব্রিসকে এলবিডব্লিউ করে প্রতিপক্ষদের চাপে ফেলেন তাইজুল। এর মধ্যে রোস্টন চেজকে মুমিনুল হকের ক্যাচে পরিণত করে বিপর্যয়ে ফেলেন তিনি।

সেই বিপর্যয়ের মধ্যে শিমরন হেটমায়ারকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন শাই হোপ। সফলও হচ্ছিলেন তারা। তবে বিষয়টি ভালোভাবে নিতে পারেননি মিরাজ। সাকিবের ক্যাচ বানিয়ে হোপকে (২৫) ফিরিয়ে তাদের প্রতিরোধ ভাঙেন তিনি। এতে হেটমায়ারের সঙ্গে তার ৫৬ রানের জুটি ভাঙে। স্পিনে দক্ষ এ ব্যাটসম্যান ফিরতে ফের পথ হারায় উইন্ডিজ। এর পর পরই নাঈমের শিকার হয়ে ফেরেন শান ডাওরিচ। স্লিপে দারুণ ক্যাচে তাকে ফেরান সৌম্য সরকার।

এরপর মিরাজ-সৌম্য যুগলবন্দি। তাদের জোটের কামড়ে ফেরেন দেবেন্দ্র বিশু। একে একে সবাই ফিরলেও শিকড় গেঁড়ে বসেন হেটমায়ার। খাদের কিনারে থেকেও টাইগার বোলারদের ওপর স্টিম রোলার চালান তিনি। রীতিমতো ব্যাটিং তাণ্ডব চালান। স্ট্রোকের ফুলঝুরি ছুটিয়ে ধীরে ধীরে সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যান। তবে তা হতে দেননি মিরাজ। মোহাম্মদ মিঠুনের তালুবন্দি করে তাকে সেঞ্চুরি বঞ্চিত করেন তিনি। ফেরার আগে ৯২ বলে ৯৩ রান করেন হেটমায়ার। ৯ ছক্কার বিপরীতে মাত্র ১টি চারে এ বিধ্বংসী ইনিংস সাজান তিনি।

সেই আউট উৎসবের মাঝেই জোমেল ওয়ারিক্যানকে কট অ্যান্ড বোল্ড করে ফেরান মিরাজ। এ নিয়ে টানা দুই ইনিংসে ৫ উইকেট নেন তিনি। পাশাপাশি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে টেস্টে দ্বিতীয়বার ১০ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েন এ অফস্পিনার। এর আগে এ নজির আছে সাকিবের। ফলে জয় সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।

তবে শেষদিকে ঝামেলা পাকান শেষ দুই লোয়ারঅর্ডার ব্যাটসম্যান। দশম উইকেটে ৪২ রানের পার্টনারশিপ গড়েন কেমার রোচ ও লুইস। অবশেষে লুইসকে ফিরিয়ে কাঙ্ক্ষিত জয় এনে দেন তাইজুল। ফলে ক্রিকেটের অভিজাত সংষ্করণে নিজেদের সবচেয়ে বড় জয়ের আনন্দে মাতেন সাকিব বাহিনী। বাংলাদেশের হয়ে মিরাজ ৫টি, তাইজুল ৩টি ও সাকিব নেন ২টি উইকেট।

এর আগে ফলোঅনের শঙ্কা নিয়ে তৃতীয় দিন খেলতে নামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দ্বিতীয় দিনের ৫ উইকেটে ৭৫ রান নিয়ে নতুন দিনে খেলা শুরু করে সফরকারীরা। হেটমায়ার ৩২ ও ডাওরিচ ১৭ রান নিয়ে খেলতে নামেন। স্বাভাবিকভাবেই তাদের দিকে তাকিয়ে ছিল তারা।

তবে আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি এ জুটি। শুরুতেই মিরাজের কট অ্যান্ড বোল্ড হয়ে ফেরেন হেটমায়ার। ফেরার আগে ৫৩ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৩৯ রান করেন তিনি। সেই রেস না কাটতেই দেবেন্দ্র বিশুকে সাদমান ইসলামের ক্যাচ বানিয়ে ফেরান মিরাজ। এ নিয়ে ৫ উইকেটের কোটা পূরণ করেন তিনি।

এতেই ক্ষ্যান্ত হননি মিরাজ। পরক্ষণেই লিটন দাসের তালুবন্দি করে দেবেন্দ্র বিশুকে ফেরান এ অফস্পিনার। সবাই নিয়মিত বিরতিতে যাওয়া-আসা করলেও একপ্রান্ত আঁকড়ে ছিলেন ডাওরিচ। অবশেষে তাকেও উপড়ে ফেলেন তিনি। নির্ভরযোগ্য এ ব্যাটসম্যানকে এলবিডব্লিউ ফাঁদে ফেলে ৫৮ রানে ৭ উইকেট শিকার করেন মিরাজ। এটি তার ক্যারিয়াসেরা বোলিং। আগেরটি ছিল ৭৭ রানে ৬ উইকেট, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৬ সালে।

এ নিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারে ষষ্ঠবারের মতো ৫ উইকেট এবং বাংলাদেশের চতুর্থ বোলার হিসেবে ইনিংসে সাত বা এর বেশি উইকেট পেলেন মিরাজ। দেশের হয়ে এ কীর্তি আছে তিনজনের-এনামুল হক জুনিয়র, সাকিব ও তাইজুলের।

ক্যারিবীয় শিবিরে শেষ পেরেকটি ঠুকেন সাকিব। তৃতীয় শিকার হিসেবে লুইসকে এলবিডব্লিউ করে ফেরান তিনি। এতে ১১১ রানে অলআউট হয় উইন্ডিজ। ফলে ৩৯৭ রানে পিছিয়ে ফলোঅনে পড়েন অতিথিরা।

এ নিয়ে নিজেদের ১৮ বছরের টেস্ট ইতিহাসে কোনো দলকে প্রথমবারের মতো ফলোঅনে ফেলে বাংলাদেশ। সবচেয়ে বড় লিডও নেয়। ফলে প্রথমবারের মতো ইনিংস জয়ের অপেক্ষায় ফের বোলিং শুরু করে টাইগাররা।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031