৫৩ জঙ্গির তালিকা নিয়ে মাঠে পুলিশ

দেশজুড়ে গুপ্তহত্যার মধ্যে জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত চট্টগ্রামের ৫৩ জনের তালিকা তৈরি করে মাঠে নেমেছে পুলিশ। এসব জঙ্গির অধিকাংশই পলাতক। কয়েকজন বিদেশে আছেন। কয়েকজন গ্রেফতারের পর জামিনে বেরিয়ে এসেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, তালিকাভুক্ত জঙ্গিরা নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতুল মোজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), আনসারউল্লাহ বাংলা টিম, হিযবুত তাহরির ও হরকাতুল জিহাদ এবং শহীদ হামজা ব্রিগেডের সঙ্গে যুক্ত আছে। চট্টগ্রামে আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের নেতৃত্বে আছেন সাংবিধানিক পদধারী এক ব্যক্তির সন্তান। এছাড়া তালিকাভুক্ত অধিকাংশই উচ্চশিক্ষিত যুবক এবং ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান।
জেলা পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পলাতক জঙ্গিদের গ্রেফতারের সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। যারা জামিনে আছে তাদের নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে।
চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, যাদের স্থায়ী ঠিকানা চট্টগ্রামে তাদের আমরা তালিকাভুক্ত করেছি। তবে বাড়ি চট্টগ্রামে বলে এমন না যে তারা শুধু চট্টগ্রামেই জঙ্গি কার্যক্রম চালায়। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকা, সিলেট, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে। তবে যেখানেই থাকুক না কেন, আমরা তাদের গ্রেফতারের সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।
সূত্রমতে, সাঁড়াশি অভিযান শুরুর আগে ৩৮ জন জঙ্গির একটি তালিকা পাঠিয়ে তাদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো.শফিকুল ইসলাম। জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা তালিকাটি যাচাইবাছাই করে তিনজনের নাম দু’বার লেখা হয়েছে দেখতে পায়। তিনজন বাদ দেয়ার পর বাকি থাকে ৩৫ জন। আরও ১৮ জনের নাম যুক্ত করে ৫৩ জনের সমন্বিত একটি তালিকা তৈরি করেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মুহাম্মদ রেজাউল ‍মাসুদ।
তবে তালিকায় কাদের নাম আছে তা ‍চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার একেএম হাফিজ আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মোস্তাফিজুর রহমান এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মুহাম্মদ রেজাউল মাসুদের কাছে জানতে চাইলে তারা এ বিষয়ে তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
জেলা পুলিশের তৈরি করা তালিকাটি গেছে রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরেও।
সূত্রমতে, জেলা পুলিশের তালিকাভুক্ত ৫৩ জনের মধ্যে ৩৮ জন হিযবুত তাহরির, ৪ জন জেএমবি, ৫ জন শহীদ হামজা ব্রিগেড, একজন আনসারউল্লাহ বাংলা টিম এবং ৪ জন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সঙ্গে সম্পৃক্ত। এছাড়া আরও একজন নিষিদ্ধ ঘোষিত একটি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার তথ্য পুলিশ পেলেও সঠিকভাবে সংগঠনের নাম জানতে পারেনি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আনসারউল্লাহ বাংলা টিম সংগঠনটির চট্টগ্রামে যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন তার সম্পর্কেই শুধু তথ্য আছে পুলিশের কাছে। সংগঠনটির কর্মী পর্যায়ে কারা আছেন তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পুলিশের কাছে নেই। আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের চট্টগ্রামের নেতৃত্বে আছেন উচ্চশিক্ষিত বিবাহিত যুবক আসিফ আদনান (২৬)। তার বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশে, বাসা রাজধানীর শাহবাগ থানার সেগুনবাগিচায়। এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক আসিফ আদনানের বাবা সাংবিধানিক উচ্চ পদে থাকা একজন ব্যক্তি।
শহীদ হামজা ব্রিগেডের সঙ্গে আছেন ৫ জন। এরা হলেন, হাটহাজারীর আবুল কাশেম (৬০), আল ফাত্তাহ (৩৫), আজিজ ও ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা এবং বাঁশখালীর মাওলানা মো.মোবারক। এদের মধ্যে আবুল কাশেম মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী এবং হামজা ব্রিগেডের অর্থ জোগানদাতা। ‍মাওলানা মো.মোবারক দুই মাস আগে মালয়েশিয়ায় মারা গেছে বলে তথ্য আছে পুলিশের কাছে। তবে মৃত্যুর তথ্য এখনও নিশ্চিত নয় পুলিশ।
জেএমবির সঙ্গে আছেন ৪ জন। এরা হলেন, হাটহাজারীর মঞ্জুরুল মুরাদ ওরফে আবদুল্লাহ মো.মুরাদ ওরফে আবদুল্লাহ আল রায়হান মুরাদ, হাফেজ আহমেদ কাদের মঈনুদ্দিন ওরফে উদয় (১৯) ও সিরাজুল মোস্তফা প্রকাশ সোলায়মান (১৯) এবং সীতাকুণ্ডের আইয়ূব আলী ওরফে আবু জর। এদের মধ্যে আবু জর জেএমবি নেতা বাংলা ভাইয়ের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে পুলিশের তালিকায় উল্লেখ আছে।
হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সঙ্গে আছেন ৪ জন। এরা হলেন, মিরসরাইয়ের মিনহাজুল ইসলাম সাজিব (২৪), সন্দ্বীপের মনির হোসেন (৬৫) ও মাওলানা আকবর হোসাইন, সাতকানিয়ার একটি মসজিদের ইমাম আব্দুল হান্নান (২৪)। এদের মধ্যে মাওলানা আকবর হোসাইন নারায়ণগঞ্জের একটি মাদ্রাসার শিক্ষক।
নিষিদ্ধ ঘোষিত একটি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে আছেন সন্দ্বীপের মাকসুদুর রহমান রনি।
তালিকাভুক্ত বাকি ৩৮ জন যুক্ত আছেন হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে। এরা হলেন, মিরসরাইয়ের কামরুল হাসান (২৭), ইফতেখারুল ইসলাম (১৯) ও সালাহউদ্দিন স্বপন (২০), আনোয়ারার লোকমান গণি (২৩), বাঁশখালীর জুনায়েদ (৩৪), মুফতি হারুন বিন ইজাহার ও আমজাদ হোসেন (২৪), লোহাগাড়ার আতিক সাবরাজ হিমেল (২৩), সাতকানিয়ার আহসান আলী রিয়াজ, ইমতিয়াজ হোসেন, তন্ময় সুফিয়ান, নূর মোহাম্মদ, নগরীর আন্দরকিলালার একটি প্রকাশনা সংস্থার কর্মচারি শাহাদাৎ হোসেন (১৯) ও শিক্ষানবীশ আইনজীবী সফয়সাল রহমান লিমন (২৫), বোয়ালখালীর হাবিবুন্নবী প্রকাশ আশিকুর রহমান, রায়হানুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত এক আনসার কমাণ্ডারের ছেলে রেজাউল ইসলাম ও এমদাদুল ইসলাম (২৩), রাঙ্গুনিয়ার শরফুল আউয়াল ও ইউএসটিসি থেকে ফার্মেসি অনুষদে মাস্টার্স করা নাজমুল কাদের (২৬), রাউজানের বাসিন্দা কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এস এম জুলহাস নাঈম ও বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র মহিবুল আলম, পটিয়ার ফরমান উল্লাহ, সীতাকুণ্ডের আব্দুল কাদির, আলাউদ্দিন প্রকাশ রুবেল, জুলফিকার আলী, মিনহাজ উদ্দিন রুবেল (২৩), তানজিব হোসেন, কাজী আহাম্মদ এরফান ইকরাম (২১) ও ডেন্টাল সার্জন মোরশেদুল আলম, ফটিকছড়ির সাফায়েত ইয়াছিন ও তার ভাই সোহান ইয়াছির, ফটিকছড়ির বাসিন্দা ওমানপ্রবাসী সাহেদ হোসাইন সাকের, হাটহাজারীর ইসমাইল হোসেন, মোবারক হোসেন, আতিকুর রহমান (২৬), ইমতিয়াজ সেলিম এবং মোন্তাসির আলম রাজিব (২৫)।
তালিকায় হারুন বিন ইজাহারের পরিচয় হিযবুত তাহরীর হিসেবে উল্লেখ থাকলেও তিনি মূলত যুক্ত আছেন হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে। তিনি সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক। হরকাতুল জিহাদের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত হেফাজত নেতা মুফতি ইজাহারুল ইসলাম তার পিতা।
হিযবুত সংশ্লিষ্ট মোন্তাসির আলমের বড় ভাই সাজিব বিন আলমের পরিচয় সাংবাদিক হিসেবে তালিকায় উল্লেখ আছে।
পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সারা দেশে জঙ্গিদের পরিচিত স্টাইলে মোট ৪৬টি হামলার ঘটনা ঘটেছে, যাতে নিহত হয়েছেন ৪৮ জন৷ দেশব্যাপী গুপ্তহত্যা বন্ধে ইতোমধ্যে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালিত হয়েছে।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930