আস্থা রাখুন: হাসিনা

বাংলাদেশে প্রথম এই ধরনের ঘটনার পর শনিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, “আমাদের উপর আস্থা রাখুন। ৩০ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব আমরা যে কোনো মূল্যে রক্ষা করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।”
গত দেড় বছর ধরে একের পর এক হত্যাকাণ্ডের পর শুক্রবার রাতে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক নিয়ে গুলশানের একটি ক্যাফেতে হামলা হয়, যাকে জঙ্গি হামলা বলছেন শেখ হাসিনা।
মূলত বিদেশিদের লক্ষ্য করে চালানো এই হামলায় ২২ জনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়, যার দায়িত্ব স্বীকার করে আইএসের নামে বার্তা এসেছে ইন্টারনেটে।
বাংলাদেশে আইএসের উপস্থিতি প্রমাণ করে অগ্রগতি ব্যাহত করার উদ্দেশ্য থেকে এই ধরনের হামলা হচ্ছে বলে আগেই বলে আসছিলেন শেখ হাসিনা।
শনিবার সকালে গুলশানের ওই ক্যাফেতে কমান্ডো অভিযান চালিয়ে সঙ্কটের অবসানের পর এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যেও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের কথা বলেছিলেন জাতির জনকের মেয়ে হাসিনা।
জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র ঠেকাতে জনগণকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান।
“দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে যে কোনো মূল্যে আমরা ষড়যন্ত্রকারীদের চক্রান্ত প্রতিহত করব।”
‘মুষ্টিমেয়’ বিপথগামী সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি, কম্যুনিটি পুলিশ এবং সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করে সন্ত্রাস মোকাবেলায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
বিপথগামীদের সঠিক পথে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি ইসলামের মর্যাদা সমুন্নত রাখার আহ্বানও জানান।
যারা কিশোর ও যুবকদের বিপথে পরিচালিত করছেন তাদের উদ্দেশে করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,“মানুষকে হত্যা করে কী অর্জন করতে চান? ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলামের নামে মানুষ হত্যা বন্ধ করুন।”
সন্তানরা যেন বিপথে না যায়, সেদিকে নজর রাখতে অভিভাবকদের প্রতিও আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
কমান্ডো অভিযান শেষে হলি আর্টিজান বেকারি
এই জঙ্গি হামলার পর এক বিবৃতিতে সর্বদলীয় ও সমন্বিত উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
পৃথক আরেক বিবৃতিতে সর্বদলীয় বৈঠকের আয়োজন করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, “আসুন, আমরা সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একটি নিরাপদ বাংলাদেশ, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় একযোগে কাজ করি।”
সন্ত্রাসীদের সমূলে নির্মূল করে বাংলাদেশকে শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্রে পরিণত করার দৃঢ় সংকল্প জানিয়ে তিনি বলেন, “কোনো ষড়যন্ত্রই আমাদের অগ্রযাত্রাকে প্রতিহত করতে পারবে না।”
হলি আর্টিজেন বেকারিতে হামলার ঘটনাকে ‘বর্বর ও কাপুরুষোচিত’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বাংলাদেশে এই হামলা নজিরবিহীন।
রোজার মাসে এশার নামাজের সময়ে এই হামলায় জড়িতদের ধর্মে বিশ্বাস নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
“পবিত্র রমজান মাসে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা যখন এশা ও তারাবির নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন এই হামলা ধর্ম ও মানবিকতাকে অবমাননা করেছে।”
কমান্ডো অভিযানে তিন বিদেশিসহ ১৩ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধারের তথ্য তুলে ধরে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের কাজের প্রশংসা করেন সরকার প্রধান। হামলা ঠেকাতে গিয়ে নিহত দুই পুলিশ কর্মকর্তার সাহসিকতার প্রশংসাও করেন তিনি।
জিম্মি উদ্ধার অভিযানে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান
জিম্মি সঙ্কট অভিযানে অংশ নেওয়া পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিসসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানান সরকার প্রধান।
এই হামলায় নিহতদের মধ্যে ইতালীয় ও জাপানি নাগরিকদের পাশাপাশি একজন ভারতীয় রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।
বিশ্ব সম্প্রদায়ের যেসব নেতা বাংলাদেশের প্রতি একাত্মতা ও সংহতি প্রকাশ করেছেন তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ যখন একটি আত্ম-মর্যাদাশীল এবং আত্ম-নির্ভরশীল দেশ হিসাবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তখন দেশি-বিদেশি একটি চক্র বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে বানচালের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে।”
বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিত করতেই অস্ত্রের মুখে নিরীহ সাধারণ মানুষকে জিম্মি করা হয়েছিল বলেও প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন।
“গণতান্ত্রিক পথে মানুষের মন জয় করতে ব্যর্থ হয়ে এরা সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে। কোমলমতি যুবক-কিশোরদের ধর্মের নামে বিভ্রান্ত করে বিপথে ঠেলে দিচ্ছে। তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে মানুষ হত্যা করছে।”

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031