শোলাকিয়ায় নিহত ‘হামলাকারী’ নর্থ সাউথের ‘নিখোঁজ’ ছাত্র

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন খান শুক্রবার বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিহত হামলাকারীর পরিচয় আমরা জানতে পেরেছি। তার নাম আবীর রহমান।
সে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বিবিএ ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র ছিল।”
২২ বছর বয়সী আবীরের বাবার নাম সিরাজুল ইসলাম, বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বারে। ঢাকায় তাদের বাসা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ডি ব্লকে।
পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এসএম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, আবীরের বড় ভাই আশিকুর রহমান গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ভিডিও দেখে তাকে শনাক্ত করেন।
গত মার্চ থেকে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে ঢাকার ভাটারা থানায় একটি জিডি করা হয়েছিল বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টিউটোরিয়াল থেকে ‘এ লেভেল’ পাশ করার পর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএতে ভর্তি হন আবীর।
গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় কমান্ডো অভিযানে নিহত পাঁচ সন্দেহভাজন হামলাকারীর মধ্যে নিব্রাস ইসলামও নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন।
সাইট ইনটেলিজেন্স গ্রুপ আইএস এর বরাতে হামলাকারীদের ছবি প্রকাশ করলে সাবেক সহপাঠীরা শনাক্ত করে ফেইসবুকে তার আগের ছবি ও পরিচয় সামনে নিয়ে আসেন।
গুলশানের ওই হামলার এক সপ্তাহের মাথায় বৃহস্পতিবার ঈদের সকালে শোলাকিয়া মাঠের আড়াইশ মিটার দূরে পুলিশের ওপর বোমা হামলা হলে দুই কনস্টেবল নিহত হন। পরে গোলাগুলির মধ্যে বাড়ির জানালা দিয়ে গুলি ঢুকে মৃত্যু হয় স্থানীয় এক গৃহবধূর।
হামলার পর পুলিশের অভিযানের মধ্যে সন্দেহভাজন এক হামলাকারীও নিহত হন। তার লাশের কিছুটা দূরে একটি চাপাতি পড়ে থাকতে দেখা যায়। তার ঢোলা পোশাকে অস্ত্র রাখার ‘বিশেষ পকেট’ থাকার কথাও পুলিশ কর্মকর্তারা জানান।

নীল পাঞ্জাবি ও পায়জামা পরা ওই যুবককেই পরে শনাক্ত করে পরিবার। শুক্রবার তার পরিচয় প্রকাশ করে পুলিশ।
সন্দেহভাজন হামলাকারীদের মধ্যে আর গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পিস্তলসহ র্যাবের হাতে ধরা পড়েন এক যুবক।
শফিউল ইসলাম ওরফে আবু মোকাদ্দেল নামের ১৯ বছর বয়সী ওই যুবক দিনাজপুরর এক মাদ্রাসার ছাত্র। আলিম পরীক্ষা শেষ না করেই সে ‘ওস্তাদের নির্দেশে’ শোলাকিয়ায় হামলা চালাতে আসে বলে র্যা্বের ভাষ্য।
এদিকে গুলশানের হামলাকারী হিসেবে যে পাঁচজনের ছবি আইএস প্রকাশ করেছে, তাদের সবাই গত কয়েক মাস নিখোঁজ ছিলেন বা পরিবারের যোগাযোগের বাইরে ছিলেন বলে স্বজনরা জানিয়েছেন।
তাদের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর আরও দশ ১০ যুবকের সন্ধান চেয়ে তাদের প্রতি ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছে তাদের অভিভাবকরা।
এরা হলেন- ঢাকার তেজগাঁওয়ের মোহাম্মদ বাসারুজ্জামান, বাড্ডার জুনায়েদ খান (পাসপোর্ট নম্বর- এ এফ ৭৪৯৩৩৭৮), চাপাইনবাবগঞ্জের নজিবুল্লাহ আনসারী, ঢাকার আশরাফ মোহাম্মদ ইসলাম (পাসপোর্ট নম্বর-৫২৫৮৪১৬২৫), সিলেটের তামিম আহমেদ চৌধুরী (পাসপোর্ট নম্বর-এল ০৬৩৩৪৭৮), ঢাকার ইব্রাহীম হাসান খান (পাসপোর্ট নম্বর-এ এফ ৭৪৯৩৩৭৮), লক্ষ্মীপুরের এ টিএম তাজউদ্দিন (পাসপোর্ট নম্বর- এফ ০৫৮৫৫৬৮), ঢাকার ধানমণ্ডির জুবায়েদুর রহিম (পাসপোর্ট নম্বর-ই ১০৪৭৭১৯), সিলেটের মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ ওজাকি (পাসপোর্ট নম্বর-টি কে ৮০৯৯৮৬০) ও জুন্নুন শিকদার (পাসপোর্ট নম্বর-বি ই ০৯৪৯১৭২)।
সাম্প্রতিক সময়ে উচ্চবিত্ত পরিবারের বহু ছেলে এভাবে বাড়ি ছেড়ে জঙ্গিবাদে ঝুঁকছে বলে ইতোমধ্যে অভিভাবকদের সতর্ক করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ বিষয়ে অভিভাবকদের তথ্য দিতে অনুরোধ করেছেন।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031