শিরোনাম
প্রচ্ছদ / খাগড়াছড়ি / খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি ও মাটিরাঙ্গায় জমে উঠেছে কোরবানির হাট

খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি ও মাটিরাঙ্গায় জমে উঠেছে কোরবানির হাট

মোহাম্মদ আবু তৈয়ব, খাগড়াছড়ি থেকে:-খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় ‘করোনা’ প্রাদুর্ভাবে থমকে দাঁড়িয়েছে দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ধমীয় কর্মকান্ড। দীর্ঘ সময় আয়-রোজগার বঞ্চিত মানুষজনের মাঝে ঈদ-আনন্দের আমেজ নেই। বিশেষ করে মাঝারী পরিবারেও কোরবানের প্রস্তুুতি অনেক কম। ফলে আসন্ন কোরবানকে ঘিরে জেলার ৯টি উপজেলার ছোট-বড় অর্ধশত গো-খামার ও কৃষকের ঘরে মোটাতাজা কয়েক হাজার দেশী-বিদেশী জাতের গরু নিয়ে দুশ্চিতায় গো-খামারীরা। করোনাভাইরাস সংক্রমণ উপেক্ষা করে পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে খাগড়াছড়ির ৯টি উপজেলায় জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে হাট পরিচালনা করতে স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা থাকলেও অনেককে মাস্ক পরে হাটে যেতে দেখা যায়নি। হাটের প্রবেশদ্বারে হাত ধোয়ার কোনো ব্যবস্থা চোখে পড়েনি। তাছাড়া ক্রেতা-বিক্রেতা ছাড়াও অনেক দর্শনার্থীর ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। লাইভ ওয়েট পদ্ধতিতে বিক্রিতেও তেমন সাড়া নেই গো-খামারে। ফলে এসব খামারীরা পুঁজি হারানো ভয়ে শংকিত।
কৃষকের ছোট ও মাঝারী গরু অনায়াসে বাজারে উঠানো গেলেও গো-খামারের ৫শ-৮শ কেজি ওজনের গরু বাজারে উঠানো খুবই কষ্টকর। যার ফলে লাইফ ওয়েট পদ্ধতিতে আমরা বড় গরুগুলো বিক্রি করে থাকি। এ বছর ক্রেতার সাড়া নেই। এছাড়া উপজেলার গ্রামে-গঞ্জের হাজারো কৃষক নিজ গৃহে কয়েক হাজার দেশী বলদ, ষাঁড় মোটাতাজা করে থাকে। ইতোমধ্যে হাট-বাজারে কৃষকের ছোট-মাঝারী গরু উঠালেও ক্রেতাশুন্য বাজার! ফলে খামারে মোটাতাজা করা গরু নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত গো-খামারীরা। বিগত সময়ে কোরবানকে ঘিরে এখানকার হাট-বাজার, গ্রামে-গঞ্জে পাইকারদের আনা-গোনায় মূখরিত হয়ে উঠে কোরবানের বেচা-কেনা। আর এ বছর ‘করোনা’ আতংকে এখন পর্যন্ত জনপদের কোথাও কোরবানের গরুর খোঁজে কেউই আসেনি। হাট-বাজারগুলোতে দেশী গরু বিক্রির উদ্দেশ্যে আনা হলেও ক্রেতাশূণ্য বাজার দেখে দুঃচিন্তাতায় পড়েছে গো-খামারীরা। বৃহষ্পতিবার বড় বাজারে প্রচুর দেশী ছোট ও মাঝারী গরু উঠলেও ক্রেতা না থাকায় বিক্রেতাদের মূখে হাসি নেই। গরু ব্যবসায়ী আনু মিয়া বলেন, প্রতি বছর কোরবানির বাজারে দেশী গরুর চাহিদা প্রচুর। কোরবানের এক দেড় মাস আগ থেকেই শহরের ব্যবসায়ীরা গরুর খোঁজে বাড়ি বাড়ি আসতে শুরু করেন। যার ফলে এখানকার ঘরে ঘরে কম-বেশি দেশী বলদ, ষাঁড় দেশী পদ্ধতিতে লালন-পালন করা হয়। অনেক আবার এ খাতে ২০/৫০লক্ষ টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় গরু বর্গা দিয়ে রাখেন।
স্থানীয় গরু ব্যাবসায়ী মো: আব্দুল আলী বলেন, ব্যাপক গরু ছাগলের সমাগম হলেও দাম এবং ক্রেতার সংখ্যা কম। ফলে আমার নিজেরও বেশ লোকসান দিতে হবে। চট্রগ্রাম থেকে গরু ক্রয় করতে আসা আবুল কালাম জানান, অতীতের তুলনায় দাম কিছু কম হলেও আমরা বেশ শঙ্কা ও ঝুঁকি নিয়ে গরু কিনতে এসেছি। গ্রামের দেশী গরু পছন্দ বিধায় রিস্ক নিয়েও চলে এসেছি। একসত্যা পাড়ার মো: আবুল কালাম বলেন, আমরা নিজ বাড়ীতে দেশীয় পদ্ধতিতে যৎসামান্য পুঁজি বিনিয়োগ করে ৫/৭টি দেশীয় বলদ.ষাড় লালন-পালন করেছি। এ বছর ‘করোনা’র ছোবলে দূর্বিসহ জনজীবনে কোরবানের আনন্দে ভাটার আশংকা দেখা দিয়েছে। ফলে বাজারে ক্রেতা নেই বললেই চলে। গিরিকলি এগ্রো ফার্মের মালিক মো: লুৎফর রহমান বলেন, শখের বসে এ বছর থেকে গরু ফার্ম শুরু করেছি। কিন্তু ব্যবসার শুরুতেই মোটাতাজা গরু নিয়ে বিপাকে পড়লাম। ক্রেতাশুন্য মার্কেটে ব্যবসার ভবিষৎ নিয়ে শংকিত। আমার ফার্মে মাঝারী ও বড় ১৫/২০টি গরু মোটাতাজা করেছি। কিন্তু এখনো পর্যন্ত ক্রেতাদের সাড়া মিলছেনা।
এদিকে মানিকছড়ির বাজার ইজারাদার উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান মো: তাজুল ইসলাম বাবুল বলেন, শনিবার(১৮ জুলাই) মানিকছড়ির বাজারের প্রচুর দেশী গরু উঠেছে। কিন্তু পাইকার নেই, স্থানীয় ক্রেতারা সাধারণত গরু কিনে শেষ সময়ে। তাই গত ২/৩টি বাজার গেছে ক্রেতাশুন্য অবস্থায়! উপজেলার ‘একে এগ্রো ডেইরী’ ফার্মের মালিক ও উপজেলা ডেইরী ফার্ম মালিক সমিতির সভাপতি এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় ডেইরী ফার্ম মালিক সমিতির সভাপতি হাজী মো: ইকবাল হোসেন বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবার উপজেলার ছোট, মাঝারী ও বড় ৩৯টি খামারের পাশাপাশি কৃষকের ঘরে মোটাতাজা দেশীয় পদ্ধতিতে সু-স্বাদু খাবারে পালিত গরু বাজারজাত করা নিয়ে আমরা দুঃচিন্তায় আছি। এছাড়া উপজেলার গো-খামারগুলোতে প্রায় সহ¯্রাধিক গরু বাজারজাতের অপেক্ষায় রয়েছে। ‘করোনা’য় ক্ষতিগ্রস্থ অনেক পরিবারে এবার কোরবানের প্রস্তুুতি না থাকায় চরম মূল্য দিতে হতে পারে খামারীদের! ফলে দুশ্চিতায় পড়েছে খামারী ও কৃষকরা।
মানিকছড়ির উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস ও গো-খামার মালিক সূত্রে জানা গেছে, মানিকছড়ি উপজেলায় ছোট-বড় গো-খামার রয়েছে ৩৯টি। এতে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও কোরবানে বাজারজাত করার উদ্দেশ্যে সহস্রাধিক দেশী-বিদেশী গরু মোটাতাজা করা হয়। উপজেলা প্রাণী সম্পাদ কর্মকর্তা ডা: সুচয়ন চৌধুরী বলেন, উপজেলার ৩৯টি তালিকাভুক্ত ছোট-বড় খামারসহ অসংখ্য কৃষক কোরবানকে ঘিরে সু-স্বাদু খাবার ও আধুনিক পদ্ধতিতে গরু গুলোতে মোটাতাজা করছে। এখন কোরবানের বাজার ও খামারে গরু বেচা-কেনা এবং পরিচর্যায় আমরা নজরদারী বাড়িয়েছি। যাতে কেউ কোনভাবে প্রতারিত না হয়। অপরদিকে মাটিরাঙ্গা উপজেলা ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়ের অফিসের পাশে ছাগলের হাট এবং পথের দু-ধারে বসছে গরুর হাট। অত্র উপজেলার গোমতী ও মাটিরাঙ্গাকে সবচেয়ে বড় পশুর হাট বলে ধারণা করেন অনেকে। মাটিরাঙ্গা উপজেলায় সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার গোমতী এবং প্রতি শনিবার মাটিরাঙ্গায় গরু ছাগলের হাট বসে। এসব হাটে দেশীয় প্রজাতির গরু ও ছাগলের আধিক্য বেশি থাকায় সবাই এ দুই প্রজাতির পশু দিয়েই কোরবানি করে থাকেন। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে ক্রেতা সমাগম কম থাকায় আশানুরূপ দামে পশু বিক্রি করতে পারেননি অনেকে। অত্র উপজেলার খেদাছড়া, বেলছড়ি, গোমতী, শান্তিপুর, রামশিরা, বোর্ড অফিস, ডাকবাংলা, তবলছড়ি ও তাইন্দং বাজারে সুবিধাজনক দিনে কোরবানির পশুর হাট বসে। স্থানীয় এবং দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পশু ব্যাবসায়ী এবং ক্রেতারা এসব বাজার থেকে গরু, ছাগল ক্রয় করে থাকেন। দেশী গরুর কদর বেশি হওয়ায় এসব স্থান থেকে পশু ক্রয়-বিক্রয়ে আগ্রহ থাকে অনেকের।
গত বছরের তুলনায় এ বছরের কোরবানির চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া অনেকেই কোরবানি দিতে অনিচ্ছুক বলে জানিয়েছেন। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশু ক্রয়-বিক্রয় জরুরি উল্লেখ করে মাটিরাঙ্গা বাজার ব্যাবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো: সোহাগ মজুমদার বলেন, স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে ক্রয় বিক্রয় করতে বাজার ইজারাদারদের অবগতি করলে তারা বলেন, বেচাকেনা কম হওয়ার কারনে তারা পশুর হাট অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন না। মাটিরাঙ্গা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: পলাশ কান্তি চাকমা জানান, অত্র উপজেলায় বড় ৫টি বাজারে আমাদের মেডিকেল টিম কাজ করছে। তারা সুস্থ ও অসুস্থ পশু চিহ্নিতকরণে সবাইকে সহযোগীতা করবে। উলেখ্য পার্বত্য জেলা পাহাড়ের প্রাকৃতিক সবুজ ঘাসে লালিত-পালিত দেশী-বিদেশী গরু কোরবানে চাহিদা থাকায় এ গো-খাতে লক্ষ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেন সাধারণ কৃষক ও গো-খামারীরা। গো-খামারে এবং গ্রামের পালিত গরুর নিয়মিত খাবারের তালিকায় প্রাকৃতিক সবুজ ঘাস, ভূষি, খৈল এবং খেড়। এসব খাবার সু-স্বাদু হওয়ার কারণে অল্প সময়ে গরু মোটাতাজায় পরিপুষ্ট হয়। ফলে এসব গরু কোরবানে বেশ চড়া দামে বিক্রি করে লাভবান হয় ব্যবসায়ীরা।

পড়ে দেখুন

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

॥ ডেস্ক রিপোর্ট ॥ অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের শহীদদের …