বান্দরবান জেলায় পাহাড়ী তুলার নতুন জাত উদ্ভাবন

বান্দরবান জেলায় পাহাড়ী
তুলার নতুন জাত উদ্ভাবন

এক সময়ে তুলা উৎপাদনে সমৃদ্ধ পার্বত্য অঞ্চলের নাম ছিল কার্পাস মহল। আর এই নামটির সঙ্গে পরিচিত নয় বর্তমান সময়ের চাষীরা। তুলা উৎপাদনের ক্ষেত্রে পার্বত্য অঞ্চলের সেই জৌলুস আর নেই। এই হারানো জৌলুস ফিরে আনতে প্রাণন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বান্দরবানের পাহাড়ী তুলা গবেষণা কেন্দ্র। দীর্ঘ গবেষণা শেষে আর এই সাফল্য ধরা দিয়েছে পাহাড়ী তুলা গবেষকদের কল্যাণে। পাহাড়ী তুলার নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন তুলা গবেষক মংসানু মারমা ও বান্দরবান পাহাড়ী তুলা গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক র্কমকর্তা নুর হোসেন চৌধুরী। উদ্ভাবিত পাহাড়ী তুলার নতুন জাতের নাম পাহাড়ী তুলা-৩।
পাহাড়ী তুলার নতুন জাতের উদ্ভাবক গবেষক মংসানু মারমা বলেন,পাহাড়ী তুলার নতুন জাত উদ্ভাবনের জন্য গবেষনা শুরু করেন ২০০৭ সালে। দীর্ঘ গবেষণা শেষে তুলার নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন তিনি। উদ্ভাবিত নতুন জাতের নাম পাহাড়ী তুলা-৩। নতুন এই জাতটি অন্যান্য অর্থাৎ পুরনো পাহাড়ী তুলার চাইতে অনেক বেশি গুনগত মানে ভালো। নতুন জাতের পাহাড়ী তুলার একেকটি বলের সাইজ প্রায় ৫ গ্রাম। একটি গাছে প্রায় ২০-২৫টি বল ধরে। গাছের পাতা আকৃতি ছোট বিধায় আলো বাতাস ঠিকমতো পায়। রোগ ও পোকার আক্রমনও কম। সার ও কীটনাশক প্রয়োগও কম লাগে বলে এই গবেষক জানান।
বান্দরবান জেলা পাহাড়ী তুলা গবেষণা সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ সময় ধরে পাহাড়ী তুলা জাত ১ ও ২ চাষীরা জুম চাষের সঙ্গে নিয়মিত উৎপাদন করে আসছেন। পাহাড়ী তুলা জাত ১ ও ২ এর বলের সাইজ মাত্র দুই গ্রাম। একটি গাছে বল ধরে সর্বোচ্চ ১০টি। তারমধ্যে সর্বোচ্চ ৫-৬টি বলে তুলা উৎপাদন হয়। পাহাড়ী জুম চাষীরা পাহাড়ে ধানের সঙ্গে তুলা, ভুট্টা, টক পাতা, মিষ্টি কুমড়া, তিল, মারফাসহ অন্যান্য জাতের ফসল একসঙ্গে রোপন করে থাকে। পাহাড়ে এক্ষেত্রে চাষীরা একটি তুলা গাছে খুবই কম তুলা উৎপাদন করে। পাহাড়ী জাতের তুলার কম উৎপাদন হওয়াতে চাষীরা দিনদিন তুলা চাষ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। পাহাড়ী তুলার নতুন জাতের উদ্ভাবনের ফলে চাষীদের মাঝে আগ্রহ সৃষ্টি হবে বলে আশা করছে পাহাড়ী তুলা গবেষণা কেন্দ্র।
জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে থেকে বান্দরবানের বালাঘাটায় অবস্থিত পাহাড়ী তুলা গবেষণা কেন্দ্রটি প্রজনন বিভাগসহ কৃষিতাত্ত্বিক,কীটতাত্ত্বিক এবং রোগতাত্ত্বিক বিভাগের একদর বিজ্ঞানীর তত্ত্বাবধানে তুলার নতুন জাত উদ্ভাবনের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক ড: ফরিদ উদ্দিনের নেতৃত্বে প্রজনন কাজগুলো সুচারুভাবে সম্পন্ন হয়ে আসছে।
বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে বিজ্ঞানী মংসানু মারমা তত্ত্বাবধানে পাহাড়ী তুলা-৩ অর্থাৎ এইচসি-৩ (হিল কটন-৩) নামক একটি তুলার জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এটি দেশের জন্য সাফল্য বয়ে আনবে বলে মনে করছেন গবেষকরা। পাহাড়ী তুলার নতুন জাতটি ভবিষ্যতে দেশের তুলার চাহিদা পূরণে উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এ জাতটি বর্তমানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধিন বীজ প্রত্যয়ন বিভাগ থেকে জাতের ছাড়পত্র পেয়েছে। অচিরেই মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031