সাজেকে খাদ্য সংকট মোকাবেলায় সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে নিরাপত্তাবাহিনী

বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের খাদ্য সংকট মোকাবেলায়  সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়ন। বুধবার সকাল থেকে হেলিকাপ্টার যোগে প্রত্যন্ত দূর্গম এলাকার গ্রামগুলোতে খাদ্য প্রেরণ ও বিতরণ শুরু হয়েছে। নিরাপত্তাবাহিনীর এ উদ্যোগে স্বস্তি ফিরে এসেছে। নিরাপত্তাবাহিনী এমন মহতি উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে এলাকাবাসী। জুমের ফলন  কম হওয়া, বনজসম্পদ কমে যাওয়া এবং পাশাপাশি একটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের জুম চাষের চাঁদাবাজির কারণে সাজেকে খাদ্য সংকটের অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছেন, জুম চাষ ও বনজসম্পদের উপর আয় নির্ভর এসব গ্রামের ভুক্তভোগীরা।

দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভারতের মিজোরাম রাজ্য সন্নিহিত প্রাকৃতিক রূপে রূপময় ও  অপার সম্ভাবনার জনপথ সাজেক। সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৩ হাজার ফুট উচু পাহাড়ের চুড়ায় সাজেক অবস্থিত। এ পাহাড়ের চুড়া থেকে মিজোরামের লুসাই পাহাড়ের নয়নাভিারাম দৃশ্য দেখে বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়বে যে কোন আগন্তুক।

দেশের সর্ব বৃহৎ ইউনিয়ন সাজেক। আয়তন ৬০৭ বর্গ মাইল। যা দেশের যে কোন জেলার চেয়েও বড়। সাজেকে লোকসংখ্যা প্রায় ৫২ হাজার। সাজেকের রয়েছে, ঢেউ খেলানো অসংখ্য উচ্চু-নিচু পাহাড় বেষ্টিত হৃদয়গ্রাহী সবুজ বনানী পূর্ণ। সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে নয়নাভিরাম নানান দৃশ্য। পাহাড়ের বুক চিরে  আপন মনে বয়ে চলেছে নাম না জানা অসংখ্য নদ-নদী। নদীতে ভাসছে বাঁশের চালি। যা যাবে কাপ্তাই লেক হয়ে কর্ণফুলী পেপার মিলে। রাস্তার দু’ধারে-চোখে পড়বে উপজাতীয়দের বসত বাড়ি বিচিত্রময় জীবন ধারা।

এক সময় সাজেক যাওয়া ছিল অনেকটা স্বপ্ন। নিরাপত্তাবাহিনীর ১৯ ইসিবি’র সুবাধে বছর কয়েক আগে সাজেক পর্যন্ত রাস্তা হয়েছে। ফলে সাজেক এখন দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রও। নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে সাজেকে প্রতিদিন শত শত পর্যটকের আগম ঘটছে। সে সাথে বদলে যেতে শুরু করেছে সাজেকবাসীর জীবন চিত্র। তবে সাজেকে বেশ কিছু দুর্গম এলাকা রয়েছে যেখানে উন্নয়নের ছোয়া পৌঁছেনি। প্রত্যন্ত এ সব  গ্রামগুলোতে পৌঁছতে ৫/৭ কিমি পায়ে হাঁটা পথ।

সাজেকবাসীর আয়ের উৎস মূলত জুম চাষ ও বনজসম্পদ। দুর্গম এলাকা উচু-নিচু পাহাড়ের আগুন জ্বালিয়ে আগাছা পুড়িয়ে প্রাকৃতিক সার তৈরি করে ধান, ভুট্টা, কুমড়াসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের চাষ অর্থাৎ জুম চাষের উপরই ঐতিহ্যগত ভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল। বর্ষা শুরুর আগেই জুম চাষীরা পাহাড়কে চাষাবাদের উপযোগী করে তোলেন আর বর্ষা শুরু হলেই সাথে সাথে জুমে বীজ বপন শুরু হয়। পুরো বছর জুমের ফসল বেচাকেনা করেই চলে জুম চাষীদের জীবন।

সাজেক ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শান্তি কুমার ত্রিপুরা জানান, গত বছর জুমের ধানসহ অনান্য ফসলের ফলন  কম হওয়ার কারণে প্রায় দু’মাস আগে থেকেই  খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রামে।  খাদ্যাভাবসহ আর্থিক অনটনে ভূগছে সাজেকের উদোলছড়ি, নতুন জৌপুই, পুরান জৌপুই, নিউথাংমাং, নিউলংকর, ব্যাটলিংপাড়া, শিয়ালদাই, নিমুইপাড়া, হাগড়াকেজিং, দুলুছড়ি, দুলবন্যাসহ বিশটি গ্রামের প্রায় সাড়ে চার শতাধিক পরিবার।

সাজেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নেলসন চাকমা জানান, গত বছর জুমে ফলন কম হওয়া ও এলাকায় গাছ-বাঁশ কমে যাওয়ায় মানুষের আয়ও কমে গেছে। ফলে এলাকায় খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

তবে স্থানীয় এক কার্বারী নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, একটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের সন্ত্রাসীরা গত বছর থেকে জুম চাষে আগাম চাঁদা ধায্য করে দেওয়ায় জুমিয়া পরিবার গুলো  খাদ্য ও আর্থিক সংকটে পড়েছে। তবে নিরাপত্তাবাহিনী অসহায় মানুষগুলোর মাঝে খাদ্য বিতরণ শুরু করায় স্বস্তি ফিরেছে জুমিয়াদের মাঝে।

এদিকে বুধবার থেকে সাজেকের প্রত্যন্ত দুর্গম এলাকায় নিরাপত্তাবাহিনীর উদ্যোগে ও বিজিবির সহযোগিতায় চাউল বিতরণ শুরু হয়েছে। সকাল থেকে হেলিকাপ্টারে করে দুর্গম এলাকায়  চাউল পৌঁছে দেওয়া হয়। বাঘাইহাট জোন কমান্ডার লে.কর্ণেল মুহাম্মদ ইসমাইল খাঁ দুপুরে কংলাক পাড়ায় নিজে চাউল বিতরণ করেন।এ সময় সাংবাদিকদের জানান, সাজেকে সাময়িক খাদ্য সংকট দেখা দেওয়ায় আত্মমানবতা সেবার অংশ হিসেবে ২৪ পদাতিক ডিভিশন ও খাগড়াছড়ি রিজিয়নের পক্ষ থেকে সাজেকের প্রত্যন্ত দুর্গম এলাকায় চারটি হেলিকাপ্টারের সাহায্যে চাউল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে এবং  অসহায়  মানুষের মাঝে বিতরণ শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।

কংলাক পাড়ার কার্বারী লাল তনা লুসাই নিরাপত্তাবাহিনীর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এভাবে চলতে থাকলে সাজেকে দূ্র্ভিক্ষ দেখা দেওয়ার আশঙ্কা ছিল।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031