কবি নজরুল বৈষম্যের বিরুদ্ধে সাহসের প্রতীক: প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা: সব জাতি, ধর্ম ও সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সাহসের প্রতীক ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (২৫ মে) জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী ও তাঁর অসামান্য বিখ্যাত কবিতা ‘বিদ্রোহী’র শতবর্ষ উপলক্ষে তাঁর অম্লান স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব জাতি, ধর্ম ও সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সাহসের প্রতীক। কবি নজরুল তাঁর প্রত্যয়ী ও বলিষ্ঠ লেখনীর মাধ্যমে এদেশের মানুষকে মুক্তি সংগ্রামে অনুপ্রাণিত ও উদ্দীপ্ত করেছিলেন। তাঁর গান ও কবিতা সব সময় যেকোনো স্বাধীনতা আন্দোলনে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। নজরুল সাহিত্যের বিচিত্রমুখী সৃষ্টিশীলতা আমাদের জাতীয় জীবনে এখনও প্রাসঙ্গিক।

শেখ হাসিনা বলেন, নজরুল জন্মেছিলেন এবং বেড়ে উঠেছিলেন একটি পরাধীন সমাজে। পরাধীনতার গ্লানি তিনি উপলব্ধি করেছেন মর্মে মর্মে। কবি নজরুলের আজীবন সাধনা ছিল সমাজের শোষিত ও নিপীড়িত মানুষের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি এবং মানুষের সামাজিক মর্যাদার স্বীকৃতি অর্জন। এছাড়াও তিনি অন্যায়, অসত্য, নির্যাতন-নিপীড়ন, নানামাত্রিক অসাম্য ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে আমাদের যুগিয়েছেন প্রতিবাদ প্রতিরোধের অনাবিল প্রেরণা।

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামের অবদান স্বাতন্ত্র মহিমায় সমুজ্জ্বল থাকবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কালজয়ী প্রতিভার অধিকারী কবি নজরুল তাঁর লেখনির মাধ্যমে আমাদের সাহিত্য, সংগীত ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছেন। তাঁর সাহিত্যকর্মে উচ্চারিত হয়েছে পরাধীনতা, সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামের বাণী। অসামান্য ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী কবি নজরুল ছিলেন অসাম্প্রদায়িক ও জাতীয়তাবোধের মূর্ত প্রতীক।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের জীবনাদর্শ একই দর্শনের ধারাবাহিক রূপ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনিও দেশের জন্য, জাতির জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করেছেন এবং দীর্ঘদিন কারাবরণ করেছেন। মহান মানবতাবাদী কবি নজরুলের সংগ্রামশীল জীবন এবং তাঁর অবিনাশী রচনাবলী জাতির জন্য অন্থহীন প্রেরণার উৎস।

শেখ হাসিনা বলেন, কবি নজরুলের সাহিত্য ও সংগীত শোষণ, বঞ্চনা ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে মুক্তিরও দীক্ষাস্বরূপ। তাঁর ক্ষুরধার লেখনির স্ফুলিঙ্গ যেমন ব্রিটিশ শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল, তেমনি তাঁর বাণী ও সুরের অমিয় ঝর্ণাধারা সিঞ্চিত করেছে বাঙালির হৃদয়কে। তিনি প্রকৃতই প্রেমের এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার কবি। ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে মানবতার জয়গান গেয়েছেন, নারীর অধিকারকে করেছেন সমুন্নত। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি যিনি ব্রিটিশ অধীনতা থেকে ভারতকে মুক্ত করার জন্য স্বরাজের পরিবর্তে পরিপূর্ণ স্বাধীনতার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন কবির প্রতি একান্ত অনুরক্ত উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী পর্যায়ে তাঁরই ঐকান্তিক আগ্রহে কবিকে কলকাতা হতে বাংলাদেশে এনে জাতীয় কবির সম্মানে অধিষ্ঠিত করা হয়। নজরুল যে অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন, তারই প্রতিফলন আমরা পাই জাতির পিতার সংগ্রাম ও কর্মে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন নজরুলের রচনা আমাদের কর্ম, চিন্তা ও মননে সকল কূপমুণ্ডকতা এবং প্রতিবন্ধকতা দূর করে একটি অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, শান্তিপূর্ণ, সুখী-সমৃদ্ধ ও আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহীত সব কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন তিনি।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31