চট্টগ্রামে সরকারি কর্মকর্তাদের মাঝে ‘দুদক’ আতংক!

চট্টগ্রামের বিভিন্ন সরকারি অফিসে অনিয়মের সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের মাঝে বিরাজ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আতঙ্ক। চট্টগ্রাম সিটি করপোরশনের এক উপ-কর কর্মকর্তাকে দুদকের ফাঁদে আটকের পর এ আতঙ্ক দেখা দেয়। এছাড়া দুদকের লোকজন ছদ্মবেশে বিভিন্ন সরকারি অফিসে ঘোরাফেরা করায় এ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), চসিক, জেলাপরিষদ, সাবরেজিষ্টার কার্যালয়, এলজিআরডি, সড়ক ও জনপদ, কাস্টমস, ভুমি ও রেলওয়েসহ কয়েকটি সরকারি অফিস ঘুরে কর্মকর্তাদের মাঝে দুদক আতঙ্কের কথা জানা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি কার্যালয়ের অনিয়মের সাথে জড়িত কর্মকর্তারা অফিসে প্রবেশে যেমন কড়াকড়ি আরোপ করেছে। তেমনি কেউ প্রবেশ করলে তার দিকে ফেল ফেল করে দু‘চোখে চেয়ে থাকে অসহায়ের মতো। পরিচয় পাওয়ার পর স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে কথা শুরু করেন তারা। গণমাধ্যম কর্মীদেরও বিশ্বাস করছেন না অনিয়মের সাথে জড়িত কর্মকর্তারা।
কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, দুদকের ছদ্মবেশি টিম নগরীর ভুমি ও নিবন্ধন, এলজিইডি, কাস্টমস, সড়ক ও জনপথ, রেলওয়েসহ সরকারি বিভিন্ন অফিস-আদালতে ঘুরাফেরা করছে। গত রোববার ভুমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান জাভেদ হাটহাজারী, বাকলিয়াসহ কয়েকটি ভূমি অফিস পরিদর্শনের সময় ছদ্মবেশে দুদকের টিম ছিল বলে জানান ভুমি অফিসের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা।
দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হক বলেন, বিধি অনুযায়ী দুদকের র্ট্যাপ কেস স¤পূর্ণ বৈধ ও যুক্তিসংগত। ঘুষখোরদের ধরতে এর কোনও বিকল্প নেই। আইনজীবীরা জানান, র্ট্যাপ কেস দুদকের ভালো উদ্যোগগুলোর একটি। এতে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত সরকারি দপ্তরগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একটু হলেও সাবধান হবে।
দুদক সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে দুদক কর্মকর্তারা ফাঁদ পদ্ধতির মাধ্যমে গত ছয়মাসে ৫ জন সরকারি কর্মকর্তাকে ঘুষসহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেছে। পরে তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে নগরের বিভিন্ন থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
সূত্র জানায়, গত ৭ ফেব্রুয়ারি দুদকের ফাঁদে ধরা পড়েন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (রাজস্ব সার্কেল-২) উপ-কর কর্মকর্তা আলী আকবর। তাকে ২০ হাজার ঘুষের টাকাসহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেন দুদক কর্মকর্তারা।
তবে ঘুষের টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে আলী আকবর সাংবাদিকদের বলেন, তার কাছ থেকে ঘুষের কোনো টাকা পাওয়া যায়নি। তার পকেটে মাত্র ৩২৪ টাকা ছিল। আগ্রাবাদ থেকে অফিসে আসার পরপরই দুদক কর্মকর্তারা তাকে আটক করে।
এছাড়া চান্দগাঁও রূপালি আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মো. জামাল উদ্দিনের কাছে গৃহকর নির্ধারণ ও বাড়ির মালিকের নাম পরিবর্তনের জন্য ৪০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেছিলেন রাজস্ব সার্কেল-২-এর কর্মকর্তা আলী আকবর। অভিযোগ পেয়ে ফাঁদ পেতে আলী আকবরকে গ্রেপ্তার করে দুদক।
গত বছর ১৭ আগস্ট দুপুরে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) চট্টগ্রামের উপ-সহকারী প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন ও টেলিফোন অপারেটর হুমায়ুন কবিরকে ২০ হাজার টাকা ঘুষ দেওয়ার সময় হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে দুদক।
তার অফিস কক্ষে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করা হয় তার স্ত্রীর নামে করা ৮৩ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও নগদ ৮০ হাজার টাকা। একই অভিযানে বিটিসিএলের বিভাগীয় প্রকৌশলী ফোন্স (অভ্যন্তরীণ) প্রদীপ দাশকেও গ্রেপ্তার করে দুদক।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাব্বির রহমান সানির নেতৃত্বে বুধবার দুপুরে নন্দনকানন অফিসে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।এর আগে ২০১৪ সালের ১৩ জুলাই দুপুরে আগ্রাবাদ নিজ কার্যালয় থেকে ২০ হাজার ঘুষের টাকাসহ চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-৪ এর প্রধান সহকারী কর কর্মকর্তা জাহিদ ইকবাল খানকে গ্রেপ্তার করে দুদক।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031