টেকনাফে সংবাদ সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অস্বীকার করা যাবেনা না
তবে পরিসংখ্যান বিজিবির কাছে নেই
বিশ্বব্যাপী আলোচিত মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে চলমান সহিংস ঘটনায় সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে ২৫ নভেম্বর দুপুরে টেকনাফে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল আবুল হোসেন এনডিসি পিএসপি। টেকনাফস্থ ২ বিজিবি এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। টেকনাফ স্থলবন্দরের মালঞ্চ কটেজ প্রাঙ্গনে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্টিত হয়।
এসময় তিনি বলেন, ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের মংডুর বিজিপি ক্যাম্পে দূর্বৃত্ত্বরা হামলা চালায়। এরপর মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে সহিংস ঘটনায় রোহিঙ্গারা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা করছে। স্থানীয় দালালদের সহায়তায় কিছু রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে এটা অস্বীকার করার কোনো অবকাশ নেই। তবে অনুপবেশের পরিসংখ্যান বিজিবির কাছে নেই।এরা বিভিন্ন কৌশলে দালালদের সহযোগিতায় বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে আত্মীয়ের বাড়ীতে আশ্রয় নেয় ও বনাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে ঢুকে পড়ে। পরবর্তীতে লোকালয়ে ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছড়িয়ে যায়। এদের আকৃতি, ভাষা ও পোষাক সীমান্তবর্তী বসবাসকারীদের অনুরুপ হওয়ায় সনাক্ত করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তবুও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় এদেরকে সনাক্ত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে কি পরিমাণ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে তার পরিসংখ্যান বিজিবির কাছে নেই। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে। রোহিঙ্গা অনপ্রবেশ বন্ধে লোকাল কমিউনিটি এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি বলেন যেসব পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ ঘটছে সেসব পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে। তাছাড়া নতুন পয়েন্টও সৃষ্টি হচ্ছে। মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের রয়েছে ঘেরা বিহীন দীর্ঘ সীমান্ত। তবুও যথাসম্ভব পয়েন্টগুলোতে বিজিবির বাড়তি নজরদারি রয়েছে। সেই সাথে সীমান্তে বিজিবির জনবলও বৃদ্ধি করা হয়েছে। মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক রয়েছে। আছে অগাধ বিশ্বাস ও আস্থা। সেই আস্থা-বিশ্বাসের প্রেক্ষিতে ঘটনার শুরুতেই মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ২ জনকে মিয়ানমারে হস্তান্তর করা হয়েছে। সীমান্ত দিয়ে যাতে সন্ত্রাসী, চোরাচালান, মাদক ও অবৈধ অনুপ্রবেশ ঘটতে না পারে সেজন্য নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মিয়ানমারের সাথে টেকনাফের ৬৩ কিলোমিটার সীমান্ত অত্যন্ত কঠিন হলেও অন্যান্য বারের চেয়ে অনুপ্রবেশ কম হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিজিবি প্রধান বলেন মিয়ানমারে কি হচ্ছে এটি বিশ্ববাসী দেখছে। এরপরও বিজিবি যেসব রোহিঙ্গা আটকের পর ফেরত পাঠায় তাদের সকল মানবিক সহযোগিতা দিয়ে থাকে।
অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে বলেন এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ চিন্তা করছে। বিজিবির দায়িত্ব সীমান্ত পাহারা দেওয়া। বিজিবি অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এজন্য কঠোরভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে সীমান্তে কাঁটা তারের বেড়া, পুশব্যাক, অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সীমান্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন বৃহস্পতিবার টেকনাফে পৌঁছান। শুক্রবার সীমান্তের বিভিন্ন বিওপি পরিদর্শন, নাফনদী ও টেকনাফ-শাহপরীরদ্বীপ ঘুরে দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিজিবি চট্টগ্রাম রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খোন্দকার ফরিদ হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সেলিম মাহমুদ চৌধুরী, কক্সবাজার সেক্টরের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার কর্নেল এম এম আনিসুর রহমান, টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়ন কমান্ডার লে. কর্নেল আবুজার আল জাহিদ, টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শফিউল আলমসহ পদস্থ কর্মকর্তা এবং টেকনাফ ও কক্সবাজারে কর্মরত প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক, অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।