বান্দরবানে জমে উঠেছে কোরবানীর ঈদের গরুর বাজার

॥ রাহুল বড়–য়া ছোটন, বান্দরবান ॥ শেষ মুহুর্তে ক্রেতা বিক্রেতাদের পদচারনায় সরগরম পার্বত্য জেলা বান্দরবানের গরু-ছাগলের হাট। কোরবানীর সময় ঘনিয়ে আসা এবং হাটের শেষ সময়ে দিনভর ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারনায় ব্যস্ত ছিলো জেলা সদরের গরু-ছাগলের হাট। সকাল থেকে রাত অবধি জেলার বিভিন্ন স্থানে বসছে এই হাট। জেলার রাজার মাঠে, বালাঘাটা, কালাঘাটা ও হাফেজঘোনা ছাড়া ও কয়েকটি স্থানে বিভিন্ন সময়ে বসেছে গরুর হাট। বান্দরবান ছাড়া ও পাশ্ববর্তী জেলার ক্রেতারা প্রতিদিনই বিভিন্ন বাজারে গরু কিনতে ছুটে যাচ্ছে।
হাটের ইজারাদাররা জানিয়েছেন, ভারত বা মায়ানমার থেকে এবার সীমান্ত পথে কোন গরু জেলায় ঢুকতে পারেনি, তাই স্থানীয় এবং দেশীয় গরুর ওপরই নির্ভর হয়ে থাকতে হয়েছে ক্রেতাদের। এদিকে গতবছরের চেয়ে এবার গরুর দাম অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন অনেক ক্রেতা। কারণ হিসেবে বিক্রেতারা বলছেন চাহিদার তুলনায় বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকা এবং লালনপালন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবার স্থানীয় গরুর দাম তুলনামূলক বেশি। শেষ সময়ে বাজারে বিভিন্ন দামে গরুর বেচাকেনা হচ্ছে, আর ক্রেতা বিক্রেতাদের সমাগমে জমজমাট পশুর হাটগুলো।
বালাঘাটা বাজারে গরু বিক্রি করতে আসা অংচিং মার্মা জানান, আমি ছয়টি গরু বাজারে এনেছি বিক্রির জন্য, দাম এক লক্ষ ত্রিশ হাজার,এক লক্ষ টাকা, আশি হাজার টাকা  ও বিভিন্ন দামের গরু আমার রয়েছে। তিনি আরো জানান, ক্রেতারা বিভিন্ন দামে গরুগুলো ক্রয়ের জন্য দাম হাকাঁচ্ছে, তবে দাম মনের মত না হওয়ায় গরুগুলো বিক্রি করছি না।
একই বাজারে গরু বিক্রি করতে আসা মোহাম্মদ ইসমাইল জানান, আমি প্রতি বছরই গরু বিক্রি করি এবার ও বিক্রি করার জন্য তিনটি গরু এনেছি, একটি গরু ষাট হাজার টাকার বিক্রি করেছি, বাজার বেশ ভালো আছে। তিনি আরো বলেন, হঠাৎ করে বাজার চলাকালীন সময়ে বৃষ্টির কারণে অনেক ক্রেতা বাজারে আসছে না তাই গরু বিক্রি করতে দেরি হচ্ছে।
পার্বত্য জেলা বান্দরবানের আদিবাসীদের পালিত গরুর প্রতি বিশ্বাস অনেকের। এই এলাকার আদিবাসীরা গরুকে মোটা তাজাকরনে কোন ওষধ খাওয়ায় না,তাই পাহাড়ে বেড়ে ওঠা গরুর চাহিদা সকলের। কোরবানের জন্য তাই আদিবাসিদের পালিত গরুর খোঁজে বিভিন্ন দুর্গম পাহাড়েঁ চড়ে বেড়ায় গরুর ক্রেতারা।
বাজারে গরু কিনতে আসা মো:রফিক এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমার বাজেট সত্তর হাজার টাকা। আমি মুলত প্রতি বছরই বান্দরবান থেকে গরু কিনি, কেননা পাহাড়ের গরুগুলো বেশ ভালো হয়।
দোহাজারী থেকে বান্দরবান বাজারে গরু কিনতে আসা মামুন জানান, বান্দরবানের গরুগুলো স্বাস্থ্য সম্মত, এখান থেকে গরু কিনলে কম দামে পাওয়া যায় এবং গরুগুলোতে কোন অসুখ বা মোটাতাজাকরন করা হয় না।
এদিকে জেলা সদরের কোরবানীর পশুর হাটগুলোতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার কোন খবর পাওয়া যায়নি। প্রতিটি বাজারে ইজারাদারদের স্বেচ্ছাসেবকরা অক্লান্ত কাজ করছে যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। পাশাপাশি জাল টাকা সনাক্তকরণের জন্য বিভিন্ন গরুর বাজারে ব্যাংক কৃর্তক জাল টাকা চেক করার বুথ বসানো হয়েছে এবং যে কেউ সহজেই বাজারে এসে জাল টাকা সনাক্তকরণ করতে পারছে।
বালাঘাটা গরুর বাজারে জাল টাকা সনাক্তকরণ বুথের বান্দরবান অগ্রনী ব্যাংকের কর্মকর্তা জ্ঞান চাকমার সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমরা ব্যাংক কর্মকর্তারা সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি গরু বাজারে জাল টাকা সনাক্তকরণের জন্য কাজ করছি, তবে অনেক সময় বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ থাকায় আমরা মেশিন চালাতে না পারায় ভোগান্তিতে পড়ছি।
এদিকে বান্দরবান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: রফিকউল্লাহ বলেন, বান্দরবানের প্রতিটি গরুর হাটের নিরাপত্তায় আইনশৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্য ও সাদা পোষাকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা কর্মরত রয়েছে, ক্রেতা ও বিক্রেতারা যাতে নিবিঘেœ হাটে এসে গরু ক্রয় ও বিক্রয় করতে পারে তার জন্য সার্বিক নিরাপত্তা প্রদান করছে পুলিশের সদস্যরা।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31