॥ অনুপম মারমা ॥ অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক সমস্যা , মজ্ঞুরী ও কর্মসংস্থা অভাব, দুর্গমতা ও পাহাড়ী পথে পায়ে হাঁটে চলাচল করার এক মাত্র অবলম্বন। আর কোন বিকল্প পথ না থাকার কারন ও বিগত বছরে পাহাড়ী জুমের ফলন কম হওয়া, তীব্র খরায়, মৌসুমী ফল ও উৎপাদিত কৃষিজ পণ্য বাজারজাত করনে নানা সমস্যা সৃষ্টি হওয়া ফলে, গত মার্চ থেকে শুরু হয়েছিল খাদ্য অভাব । অর্থ থাকলে ও খাদ্য সংগ্রহে ব্যর্থতা মঙ্গা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে এই অভাবকে সম্প্রতিকালে কিছু সংখ্যক জনপ্রতিনিধিদের বরাত দিয়ে সামাজিক মাধ্যম, গনমাধ্যমে বিশাল খাদ্য সংকটকে প্রধান্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হলেও বাস্তব চিত্র ছিল অন্যরকম।ঔসব গনমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে ভিত্তিতে থানছি উপজেলা তিন্দু ইউনিয়নের ৭,৮ও ৯নং ওয়ার্ডে এই প্রতিনিধি গত ২৮,২৯,৩০শে মে ৩দিন ব্যাপী সরেজমিনে গেলে উপরোক্ত চিত্র পাওয়া যায়।
২৮শে মে শনিবার দুপুর ১১ ঘটিকায় তিন্দু ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে রুনাজন ত্রিপুরা পাড়ায় ২৯ টি পরিবারের জনসংখ্যা ১০০থেকে দেড় শতজন তৎমধ্যে কোমলমতি শিক্ষার্থী আছে ৬৫জন ঔ পাড়ার ইউএনডিপি শিক্ষিকা রনজিতা ত্রিপুরা ২৬ সাথে কথা হলে তিনি বলেন, মজ্ঞুরী ও কর্মসংস্থা অভাব,অর্থনৈতিক অভাব, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ,পাহাড়ী পথ জুমের ফলস হ্রাস পাওয়ার অত্র পাড়ায় ১৭ পরিবার গত ইউপি নির্বাচন হতে খাদ্য অভাবে দিন কাটাচ্ছে। বাকি পরিবার গুলি থেকে সহযোগীতায় এক বেলা ভাত আর চলতি বছরে জুমের ধান না উঠার পর্যন্ত আগামি ৪ মাসের কথা বিবেচনা করে এক বেলা ভাত আর এক বেলা আলু খেয়ে বেঁচে রয়েছে। শিক্ষক রশিদ চন্দ্র ত্রিপুরা,লরেন্স ত্রিপুরা,শিক্ষিকা অনিতা ত্রিপুরা সহ পাড়ার অবস্থানরত প্রায়ই একই কথা বললেন। শিক্ষকেরা আরো বলেন দির্ঘ ১ বছর যাবৎ ইউএনডিপি বেতন না পাওয়ার তারা ও অর্থ সংকট আর খাদ্য অভাব অবস্থা পরিনত হওয়ার আশংখা করেছেন । তারা সরকারি ভাবে জুম চাষের ফসল উঠার পর্যন্ত প্রায় ৪ মাস ব্যাপী সহযোগীতা আবেদন জানান, অভাব থেকে কাটিয়ে উঠতে পারবো বলে দৃঢ় বিশ্বাস । পরে ২ ঘন্টা পাহাড়ী পথ হেঁটে তিন্দু ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডে হরিশ চন্দ্র পাড়ায় ১৩টি পরিবারের ও একই দশা ভূগছে বলে হরিশ চন্দ্র ত্রিপুরা ৬০ জানান । সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ৬নং ওয়ার্ডে থুইসা খিয়াং পাড়া অর্থাৎ জিন্নান পাড়া বিজিবি ক্যাম্প সাথে ১০০ গজ দূরত্বে পাড়াটি অবস্থান, পাড়ায় ২৯টি পরিবারের মধ্যে ২১ পরিবার একই চিত্র দেখা মিলল। পর দিন বিকাল ৩টায় ৮নং ওয়র্ডে জ্যোতি ত্রিপুরা পাড়া ৭ পরিবার,সাজেন খিয়াং পাড়া ৭ পরিবার,মংখয় খিয়াং পাড়া ৪ পরিবার, ও একই কথা বলল পাড়ায় অবস্থানরত সকলের । সন্ধ্যা ৭ টায় ৯নং ওয়ার্ডে লালদো ত্রিপুরা পাড়া ৪ পরিবার,বর্জুন ত্রিপুরা পাড়া ৬ পরিবার,ইচ্ছামনি ত্রিপুরা পাড়া ৩২ পরিবার মধ্যে ৩১ পরিবার ও বাধুন্যা ত্রিপুরা পাড়া ৯ পরিবার একই চিত্র । এর পর সোমবার সকাল ৯ টায় রেমাক্রী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে নিয়াউ ম্রো কারবারী জানান ১৩ পরিবার খাদ্য অভাব, তবে আজ বিজিবি রেশন পাঠানো জন্য ৯জন শ্রমিক কাজ করতে গেচ্ছে তারা দৈনিক ৩শত টাকা করে দিলে চাউল ক্রয় করে আসলে সবাই মিলে ভাগ করবো।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সূত্রে জানা যায়, উপজেলা ৬ হাজার পরিবারের কৃষি ও জুম জমি রয়েছে ২৭৫০ হেক্টর , ২৮শত পরিবার কৃষি কাজে লিপ্ত নয় ৩৮৫০ পরিবার কৃষি কাজের সাথে নিয়োজিত,তৎ মধ্যে চাহিদা ৪ হাজার ৫শত মে:টন উদ্পাদন হয় ৩ হাজার ৭শত ৩৫ মে;টন, ঘাতটি থাকে ৫শত মে:টন,গত ২০১৪ সালে মোট উদ্পাদন হয়েছে ২০১৫ সালে থেকে কম ৩২২৪ মে:টন । তবে বাজারের ব্যাবসায়ীদের মাধ্যমে আমদানী করে ৩ থেকে ৪ শত মে;টন বান্দরবান থেকে আনে তা বিক্রি করে উপজেলা বিভিন্ন বাজার এবং জন সাধারনে নিকট।জুমের ফসল আউজ ধান ২৭৫০ হেক্টরে ৩৫শত মে:টন,আমন ধান ৪০ হেক্টরে ১১০ মে:টন,বুরে্যা ধান ৩২ হেক্টরে ১৩২ মে:টন উদ্পাদন হয়েছে। তবে সমতলের জমিতে হেক্টরপ্রতি ধান উৎপাদন ৩ থেকে সাড়ে ৩ টন হলেও জুম চাষে ধান উৎপাদন হয় এক টনের কিছুটা বেশি। এর মধ্যে গত বছর অতিবৃষ্টির ফলে জুমের ফলন কমেছে। সম্প্রতি তীব্র তাপদাহে জুমের অন্যান্য সাথী ফসলও কমে আসছে। তাছাড়া জনসংখ্যা বাড়তে থাকায় পাহাড়ে অতিমাত্রায় জুম চাষের ফলে মাটির গুণাগুণ কমে ফলনও কমতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় বিকল্প কৃষি ব্যবস্থা চালু করা না গেলে জুম চাষের মাধ্যমে পাহাড়ী নৃ-গোষ্ঠীর জীবনধারণ আগামী কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন যোগাযোগ করা হলে জানালেন, কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির।
তিন্দু ইউনিয়নের সরেজমিনের পরিদর্শনের সময় থানছি উপজেলা চেয়ারম্যান ক্যহ্লাচিং মারমা,দৈনিক বনিক বার্তা এর স্টাব রিপোটার সুজিদ চন্দ্র সাহা, ফটোগ্রাফার মোহাম্মদ গোলাম মুর্তুজা আলী,
উপজেলা চেয়ারম্যান ক্যহ্লাচিং মারমা বলেন, উপজেলা প্রায় ২শত পাড়া মধ্যে মাত্র ১৬টি সরকারি প্রাথমিক স্তরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তৎমধ্যে থেকে দুর্গম এলাকা শিক্ষা আলো পিছিয়ে, শিক্ষা আলো যদি না থাকে, তাহলে সামাজিক আচার আচারণসহ নিজের কর্মসংস্থা বা মজ্ঞুরী খোজার শক্তি থাকেনা , তবে আদি প্রথাগত জুম চাষ হলো এক মাত্র অবলম্বন । জুমের ফসল না হলে সাধারণ ভাবে আর্থিক সংকট হয় । আর্থিক সংকট হলে খাদ্য অভাব চলে আসবে সামনে ।আর যোগাযোগ এক মাত্র পায়ের হাঁটার ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকলনা। এ অবস্থায় পাহাড়ী এলাকার নৃ-গোষ্টী মানুষদের জুম চাষ থেকে বিকল্প কর্মসংস্থানের পাশাপাশি পার্বত্য এলাকার উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও শিক্ষা আলো ছড়ানোসহ খাদ্য অভাবগ্রস্ত এলাকায় আগামি ৪ মাস অক্টোবর পর্যন্ত সহযোগীতা ব্যবস্থা গ্রহনে অত্যন্ত জরুরী বলে মনে করছেন তিনি।
