সেগুনাবিগচার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আলোচনা সভা পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে সন্তু লারমার সহযোগিতা চাইলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু

প্রায় দুই দশক আগে করা পার্বত্য শান্তিচুক্তির অবাস্তবায়িত অংশ বাস্তবায়নে জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার (সন্তু লারমা) সহযোগিতা চাইলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
সেগুনবাগিচার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে শনিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় এ সহযোগিতা চান তিনি।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তিচুক্তির শর্ত অনুযায়ী ১৯৯৮ সালের ১৫ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেই মন্ত্রণালয়ের ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মন্ত্রণালয়ের আয়োজনেই অনুষ্ঠিত হয় এই বিশেষ আলোচনা সভা।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে আমাদের সমতল ভূমির মানুষের ধারণা অনেক ক্ষেত্রেই অপ্রতুল। তাই এই অঞ্চলের মানুষের পক্ষে পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। আমি সন্তু লারমার প্রতি আহ্বান জানাব চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়নে আপনি আমাদের আরেকটু সহযোগিতা করেন। এ ছাড়া ওই এলাকার সংসদ সদস্য ও অন্যান্য জনপ্রতিনিধিরাও এক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।’
চুক্তি বাস্তবায়নে বিলম্বের কারণে কিছু ভুল থাকতে পারে স্বীকার করে ইনু বলেন, ‘কাজ করলে মানুষ কিছু করে। এ জন্যই তো জবাবদিহিতার জন্য সংসদ রয়েছে। তাই সন্তু লারমা যদি আমাদের সহযোগিতা করেন আশা করি কাজের ক্ষেত্র অনেকটা সহজ হবে। উনাকে বলব আমাদের সরকারের সঙ্গে আরেকটু ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেন।’
পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি উল্লেখ করে ইনু বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম আমাদের গর্ব। এটা বাংলাদেশকে করেছে বৈচিত্র্যময়। এই অঞ্চলের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতিসত্তার প্রমাণ পাওয়া যায়। স্বাধীনতার বহু পূর্ব থেকেই তারা সেখানে আছেন। তারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৭৩ সাল থেকেই জাতীয় সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে।’
এমন একটি অঞ্চল নিয়ে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে কৌশল নির্ধারণে ভুল ছিল বলে স্বীকার করেন তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে আমাদের ঐতিহাসিক রাজনৈতিক ভুল ছিল। আমরা সে সময় সংবিধানে তাদের কথা উল্লেখ করিনি। কিন্তু পরবর্তীতে শেখ হাসিনা সরকারের নেতৃত্বে পার্বত্য শান্তিচুক্তি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। আমরা সংবিধানের ২৩ (ক) অনুচ্ছেদে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর স্বীকৃতি দিয়েছি। ব্রিটিশ আমল থেকে ওই অঞ্চলের মানুষের যে অধিকার স্বীকৃত ছিল শান্তিচুক্তির মাধ্যমে তা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়, আঞ্চলিক পরিষদ, জেলা পরিষদ ও ভূমি কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সমতা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার বাকিটুকু কার্যকর হয়েছে। এখন সেগুলোকে কাগজের পাতা থেকে জীবনের খাতায় আনতে পারলেই হবে।’
সেই আইনি প্রক্রিয়া কার্যকরে চ্যালেঞ্জসমূহ তুলে ধরেন হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, ‘শাস্তি চুক্তির ধারা কার্যকর, জেলা পরিষদ নির্বাচনের ব্যবস্থা, ভূমি কমিশনের মাধ্যমে ভূমি বিরোধের নিষ্পত্তি ও সরকারের ৩৩টা বিভাগীয় কাজকে জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর করা। এগুলো করতে না পারলে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে না। কারণ বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়ন জড়িয়ে আছে।’
উন্নয়নের জন্য পার্বত্য অঞ্চলে সমতল ভূমি থেকে বাড়তি জনসংখ্যা স্থানান্তর বন্ধ করার উপর জোর দেনন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কাপ্তাই হ্রদ হওয়ার পর সেখানে আবাদী জমি কমে গেছে। ১৬ লাখ জনসংখ্যা সেখানে আছে। পাহাড় অঞ্চল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। তাই পার্বত্য অঞ্চল আর বাড়তি জনসংখ্যার চাপ নিতে পারবে না।’
পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রও চিহ্নিত করেন হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, ‘বনাঞ্চলের ব্যবস্থাপনা করা, প্রাণী সম্পদ সংরক্ষণ, পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন করতে হবে। এ ছাড়া পরিবেশের ক্ষতি না হয় সেদিকে যেন লক্ষ্য রাখতে হবে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে সেখানে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প সম্প্রসারণ, সৌর বিদ্যুৎ সরবরাহ, শিক্ষা ও নারীর উন্নয়নে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে কাজ করতে হবে।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নব বির বিক্রম কিশোর ত্রিপুরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কামাল উদ্দিন তালুকদার।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031