সোমবার রাজধানীর উত্তর সিটি করপোরেশনের একটি ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটি ওয়ার্ডে নির্ধারিত ক্যাম্পে সকাল ৯টা থেকে নাগরিকদের স্মার্ট কার্ড বিতরণ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন।
এছাড়া কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বিলুপ্ত ছিটমহল দাশিয়ারছড়ায় স্মার্ট কার্ড বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ।
ইসির জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদু্জামান বলেন, সোমবার উত্তরার এক নম্বর ওয়ার্ডে হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পে উত্তরা থানার মডেল টাউনের সেক্টর ১ ও ২ এর নারী-পুরুষ সব ভোটার এবং রমনার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ ক্যাম্পে কাকরাইলের রমনা ও মতিঝিল থানার অংশ, ডিআইটি কলোনি, নিউ বেইলি রোডের সব ভোটারের মধ্যে স্মার্ট কার্ড দেওয়া হচ্ছে।
দক্ষিণে রমনার থানা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুবা মমতা হেনা জানান, তারা সকাল ৯টায় নির্ধারিত সময়ে বিতরণ শুরু করার পর প্রথমেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রাণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জিন্নাতুন নাহার শাহানা তার স্মার্টকার্ড সংগ্রহ করেন।
সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ ক্যাম্পের অন্যান্য বিতরণ কেন্দ্র থেকেও বিতরণ কাজ চলছে বলে জানান হেনা।
তবে ‘কারিগরি ত্রুটির কারণে’ উত্তরা হাই স্কুল ও কলেজ কেন্দ্রে বিতরণ শুরু করতে কিছুটা দেরি হয়েছে বলে থানা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শাহজালাল জানান।
স্মার্ট কার্ড নিতে ভোটাদের বিতরণ কেন্দ্রে হাজির হয়ে পুরনো লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দিতে হচ্ছে। যারা নিবন্ধিত হয়েছেন কিন্তু এনআইডি হাতে পাননি, তাদের মূল নিবন্ধন স্লিপ দেখাতে হবে।
যাদের এনআইডি বা স্লিপ হারিয়ে গেছে তাদের থানায় জিডি করে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন আসাদুজ্জামান।
ভোটারদের কাছ থেকে লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্রটি নেওয়ার পর ১০ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি রেখে তাদের দেওয়া হচ্ছে ১০ ডিজিটের স্মার্টকার্ড, যা বিভিন্ন নাগরিক সেবা পেতে তাদের ব্যবহার করতে হবে।
হেল্প ডেস্ক ১০৫
জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত যে কোনো তথ্য জানাতে একটি হেল্প ডেস্ক খুলেছে এনআইডি উইং। যে কোনো ফোন থেকে ১০৫ নম্বরে কল করলে নাগরিকদের তথ্য জানাবে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন বিভাগের কর্মকর্তারা।
এসএমএস-এর মাধ্যমে বিতরণের তারিখ ও কেন্দ্র জানতে যে কোনো মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে SC লিখে স্পেস দিয়ে ১৭ ডিজিটের এনআইডি নম্বর লিখতে হবে (যাদের এনআইডি নম্বর ১৩ ডিজিটের, তারা প্রথমে জন্ম সাল যুক্ত করে) ১০৫ নম্বরে পাঠাতে হবে।
যারা ভোটার হয়ে এখনও এনআইডি পাননি তাদের প্রথমে SC লিখে স্পেস দিয়ে F লিখে স্পেস দিয়ে নিবন্ধন স্লিপের ফরম নম্বর স্পেস দিয়ে D লিখে yyy-mmm-ddd ফরম্যাটে জন্মতারিখ লিখে ১০৫ নম্বরে মেসেজ পাঠাতে হবে। ফিরতি মেসেজে বিতরণের তারিখ ও বিতরণ কেন্দ্র জানিয়ে দেবে এনআইডি উইং।
চার ওয়ার্ডে তিন সপ্তাহ ধরে বিতরণ
উত্তরা থানা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজালাল জানান, পরীক্ষামূলকভাবে উত্তরার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ৬৩ হাজারেরও বেশি ভোটারের কাছে স্মার্ড কার্ড বিতরণ শুরু হয়েছে। ৩ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত উত্তরা হাই স্কুল ও কলেজে বিতরণকাজ চলবে।
রমনা থানা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুবা মমতা হেনা জানান, তার এলাকায় ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটাররা সিদ্ধেশ্বরী গার্লস হাই স্কুল ও কলেজ কেন্দ্রে ৩ অক্টোবর থেকে ১০ অক্টোবর, ২০ ওয়ার্ডে সেগুন বাগিচা হাই স্কুল কেন্দ্রে ১৩ অক্টোবর থেকে ২০ অক্টোবর এবং ২১ নম্বর ওয়ার্ডে উদয়ন স্কুলে ২২ অক্টোবর থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত ভোটাররা এসে স্মার্ট কার্ড নিতে পারবেন।
সকাল ৯টায় শুরু হয়ে এ কার্যক্রম বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলবে প্রতিদিন।
এই চার ওয়ার্ডে অভিজ্ঞতা নিয়ে ঢাকায় পুরোদমে স্মার্ট কার্ড বিতরণ শুরু হবে বলে জানান জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দিন।
বিতরণ কাজের জন্য ইতোমধ্যে ঢাকার দুটি থানার জন্য ৫৫ জন অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। উত্তরায় ৩০ জন এবং রমনার জন্য ২৫ জন অপারেটর কাজ করছেন।
ঢাকার বাইরে কুড়িগ্রামে
রাজধানীর পাশাপাশি কড়িগ্রামেও বিতরণ শুরু হয়েছে প্রথম দিন থেকে। বিলুপ্ত ছিটমহল দাশিয়ারছড়ায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিতরণ কাজের উদ্বোধন করেছেন সকালে।
প্রাথমিকভাবে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলায় ভোটারদের স্মার্টকার্ড দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে সেখানে তিনটি ইউনিয়নের বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীও স্মার্টকার্ড পাবেন।
ঢাকা ও কুড়িগ্রামের পর পর্যায়ক্রমে সারাদেশে বিতরণে যাবেন নির্বাচন কমিশন। আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এ কার্যক্রম শেষ করবে ইসি।
রোববার এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মার্টকার্ড কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেওয়া হয়। পরে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মার্টকার্ড তুলে দেন সিইসি।
চার পর্যায়ে দেশজুড়ে বিতরণ
প্রথম পর্যায়: ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও কুড়িগ্রাম; দ্বিতীয় পর্যায়: খুলনা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, রংপুর ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন; তৃতীয় পর্যায়: ৬৪টি সদর উপজেলা; চতুর্থ পর্যায়: বাকি সব উপজেলায় স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হবে।
নির্ধারিত সময়ে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এবং মাইকিং, ব্যানার, ফেস্টুন দিয়ে প্রচারের মাধ্যমে বিতরণের দিন তারিখ ও স্থান জানিয়ে দেবে নির্বাচন কমিশন।