হাটহাজারীতে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি

হাটহাজারী প্রতিনিধি : চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে মঙ্গলবার থেকে গতকাল বুধবার বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। হালদা নদীর উপজেলার ধলই ইউনিয়নের কাজীপাড়া ও মাইজপাড়া এলাকায় ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। প্রবল বর্ষণের ফলে সৃষ্ট পাহাড়ী ঢলের তোড়ে নদীর এ দুই জায়গায় ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে।
বর্ষণের ফলে সৃষ্ট পাহাড়ী ঢলে উপজেলা আওতাধীন নি¤œাঞ্চলের সাথে উপজেলা সদর এর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তাছাড়া চট্টগ্রাম-নাজিরহাট –খাগড়াছড়ি মহাসড়কের এনায়েতপুর ও মুন্সিরমসজিদ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। অপরদিকে হাটহাজারী- রাউজন মহাড়কের সুবেদার পুকুরপাড় ও পশ্চিম পাশ এবং ইছাপুর এলাকা ও বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। এসময় ইছাপুর ফয়েজিয়া বাজারের দোকানপাট এবং সুবেদার পুকুর পাড় এলাকার দোকানপাটে বন্যার পানি ঢুকে পড়ে। নাজিরহাট মহাসড়কের ভাঙ্গাপুল এলাকার দোকানপাটে ও বন্যার পানি ঢুকে পড়ে। মিরেরহাট সংলগ্ন মুন্দরীছরার তিন স্থানের বেড়ি বাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে পাহাড়ী ঢলের পানি লোকলয়ে ঢুকে পড়ে। হাটহাজারী-নাজিরহাট মহাসড়ক ও হাটহাজারী-রাউজান মহাসড়কের একাধীক স্থান পানি নিচে তলিয়ে যাওয়ায় গাড়ী চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এসময় মহাসড়কের উল্লেখিত স্থানে দীর্ঘ যানযটের সৃষ্টি হয়। বন্যার পানি নিমজ্জিত এলাকার সড়ক পাড় হতে যাত্রীদের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়। এসব এলাকায় পাড় হওয়ার সময় নারী পুরুষদের কাপড় ভিজিয়ে পায়ে হেঁটে পাড় হতে হয়েছে। অবশ্য কিছু কিছু ভ্যানগাড়ী দেড়শ দুইশ মিটার বন্যা নিমজ্জিত এলাকার সড়ক ভ্যান গাড়ীকে পাড় হওয়ার সময় জন প্রতি ২০/২৫ টাকা দিতে হয়েছে বলে ভ’ক্তভোগীরা জানান। অনেকেই টাকা দিয়ে পাড় হতে চাইলে ও ভ্যান গাড়ীর সংকট থাকায় তারা বাধ্য হয়ে কাপড় ভিজিয়ে পায়ে হেঁটে পাড় হতে হয়েছে। উপজেলা আওতাধীন ১৪ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভার প্রায় প্রত্যক এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। মহাসড়কে পানি জমে থাকায় রোগী ও লাশ বাহী গাড়ীকে সীমাহীন ভোগান্তি পড়তে হয়। তাছাড়া গৃহস্থ পরিবারের মধ্যে যারা গবাদী পশু পালন করে তাদেরকে এসব গাবাদী পশু নিয়ে দূর্র্ভোগে পড়তে হয়। অনেক পরিবারে গবাদী পশু গুলো বাধ্য হয়ে বন্যার পানির মধ্যে দাড় করিয়ে রাখতে হয়েছে। বন্যা দূর্গত এলাকার পানিয় জলের নলকুপ বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় সুপেয় পানিয় জলের সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। শৌচাগার গুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায় লোকজনকে প্রকৃতির ডাকে সারা দেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এক সময় হাটহাজারীর নি¤œ এলাকার লোকজনের বন্যার সময় ব্যবহারের জন্য প্রচুর নৌকা ছিল। বেশ কয়েক বছর যাবত এতবড় বন্যা না হাওয়ায় অনেকের পুরানো নৌকা নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে বন্যার সময় নৌকা না থাকায় লোকজনের চলাচল কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। বন্যা কবলিত এলাকার নি¤œ আয়ের এবং কাচা ঘর বাড়ির বাসিন্দারা দূর্যোগের জন্য নিধারিত আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যানুসারে প্রবল বর্ষণের কারণে ৩০ হেক্টর মৌসুমী তরিতরকারির ক্ষেত পানি নিচে তলিয়ে গেছে। উপজেলা ম স্য কর্মকর্তা আজাহারুল আলম জানান, প্রাথমিক ভাবে ২ শ টি পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। তাছাড়া ১ হাজারটি পুকুর বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলী মো: কামরুজ্জামান জানান, প্রবল বর্ষণের ফলে সৃষ্ট পাহাড়ী ঢলের তোড়ে প্রত্যক ইউনিয়নের রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বন্যার শেষে ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক গুলোর অবস্থা জেনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপন করা হবে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাঈদা আলম জানান, উপজেলার নি¤œ এলাকার বেশ কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যার পানি ঢুকে গেছে। তিনি বিদ্যালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্তদের মেসেস দিয়ে এব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করতে নিদের্শনা প্রদান করেছেন। গতকাল বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্র্মকর্তা আক্তার উননেছা শিউলী ও প্রকল্প বাস্তবায়নক কর্মকর্তা নিয়াজ মোরশেদ এবং ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন কর্র্মকর্তা জাকের হোসেন বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তাছাড়া দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সিন্ধান্তনুসারে বিভিন্ন বিভাগীয় কর্মকর্তাদের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা নিরুপনের জন্য তাগাদা প্রদান করেছেন।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930