॥ কাজী মোশাররফ হোসেন, কাপ্তাই ॥ কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনায় অবস্থিত কর্ণফুলী পেপার মিল (কেপিএম) দীর্ঘ দিনের অব্যাহত লোকসানের কবল থেকে বেরিয়ে আসছে। ইদানিং কারখানায় দৈনিক উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে। শ্রমিক কর্মচারি ও কর্মকর্তারা কেপিএম কারখানাকে লাভজনক করতে দিনরাত প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে তিন মাসের মাথায় কেপিএম ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে কেপিএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী খান জাভেদ আনোয়ার আশা প্রকাশ করেন।
শনিবার (২৩ জুলাই) বিসিআইসির পরিচালক (পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন) মোঃ লুৎফর রহমান কেপিএম পরিদর্শনে আসলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী খান জাভেদ আনোয়ার উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কেপিএম অতিথি ভবনে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় উপরোক্ত বক্তব্য রাখেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন কেপিএমের মহাব্যবস্থাপক (উৎপাদন) প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাস, প্রাক্তন মহাব্যবস্থাপক (এমটিএস) বিনয় প্রকাশ চাকমা, মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোঃ আনোয়ার হোসেন, সিবিএ সভাপতি তৌহিদ আল মাহবুব চৌধুরীসহ অন্যান্য কর্মকর্তা বৃন্দ।
প্রকৌশলী খান জাভেদ আনোয়ার বলেন কেপিএম ইতিমধ্যে ৭০ মেঃ টন পেপার উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে। প্রতিদিন ৫০ টনের উপরে কারখানায় উৎপাদন হচ্ছে। দৈনিক ৮০ থেকে ৯০ মেঃ টন পেপার উৎপাদন করতে প্রচেষ্টা চলছে বলেও তিনি জানান। এই কাজে কেপিএমের সকল কর্মকর্তা, সিবিএ নেতৃবৃন্দ এবং সর্বস্তরের শ্রমিক কর্মচারি দিনরাত কঠোর পরীশ্রম করছেন। শ্রমিক কর্মচারি কর্মকর্তা ছাড়াও রাঙ্গামাটির উর্দ্ধতন কর্মকর্তা এবং কাপ্তাই ও রাঙ্গুনিয়ার সর্বস্তরের জনগণও এই কাজে উৎসাহ যোগাচ্ছেন বলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী খান জাভেদ আনোয়ার জানান।
বিসিআইসির পরিচালক (পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন) মোঃ লুৎফর রহমান তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিসিআইসির চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে সবাই এখন কেপিএম নিয়ে আশার আলো দেখছেন। দুই মাস আগেও কেপিএমে দৈনিক ১৫ টন, ২০ টন সর্বোচ্চ ২৫ টন কাগজ উৎপাদন হতো। উৎপাদনের এই অবস্থায় বিসিআইসির চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টরা হতাশ হতেন। কেপিএমকে দাঁড় করাতে বিসিআইসির পক্ষ থেকে অনেক চেষ্টা করেও সফলতা পাওয়া যায়নি। বিসিআইসির চেয়ারম্যান শেষ প্রচেষ্টা হিসেবে প্রকৌশলী খান জাভেদ আনোয়ারকে কেপিএমের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব দেন। প্রকৌশলী খান জাভেদ আনোয়ার দায়িত্ব নিয়েই সকলের সহযোগিতায় কারখানার উৎপাদন বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ নেন। কেপিএম পুরাতন কারখানা হওয়ায় কিছুটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তারপরও আমরা শুনেছি প্রকৌশলী খান জাভেদ আনোয়ার নিজে গভীর রাত পর্যন্ত কারখানা অভ্যন্তরে অবস্থান করেন এবং শ্রমিক কর্মচারি ও কর্মকর্তাদের কাজের তদারকি করেন। কারখানার যেকোন সমস্যায় নিজে উপস্থিত থেকে সমাধানের চেষ্টা করেন।
বিসিআইসির পরিচালক (পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন) মোঃ লুৎফর রহমান আরো বলেন, প্রতিদিন সকালে যখন বিসিআইসির চেয়ারম্যান দেখেন কেপিএমের উৎপাদন ৫৫ টন, ৬৮ টন এমনকি ৭০ টন পর্যন্ত হয় তখন তিনি গর্ববোধ করেন। কেপিএমের সাফল্যের খবর অন্যেদের শোনান। কেপিএম নিয়ে এখন সমগ্র বিসিআইসি আশাবাদী বলেও তিনি জানান। কেপিএমের আর্থিক সমস্যা রয়েছে উল্লেখ করে পরিচালক (পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন) মোঃ লুৎফর রহমান বলেন, কেপিএমকে এখন অর্থ যোগান দিতে খুব বেশি ভাবতে হবেনা। তিনি বলেন কেপিএম লাভ না করুক অন্তত নো লস নো প্রফিটে থাকলেও বিসিআইসি খুশি।
কেপিএম এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (সিবিএ) সভাপতি তৌহিদ আল মাহবুব চৌধুরী বলেন, আগে ৫ টন ১০ টন এমনটি মাঝে মাঝে উৎপাদনের ঘর শুন্য ছিল। কিন্তু এখন কিভাবে উৎপাদন ৭০ টনে পৌঁচেছে! তিনি বলেন গত ২ মাসে কেপিএমে শুধু ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরিবর্তন হয়েছে। নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক কারখানার উৎপাদনের ব্যাপারে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। নিজে যেমন কঠোর পরীশ্রম করছেন অন্যদেরও কঠোর পরীশ্রম করতে বাধ্য করছেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী খান জাভেদ আনোয়ার কেপিএম নিয়ে যেভাবে যুদ্ধে নেমেছেন তাতে আগামী ৩ মাসের মধ্যে কাঙ্খিত সফলতা আসবে বলেও তৌহিদ আল মাহবুব আশা প্রকাশ করেন। কেপিএম থেকে বিভিন্ন সময় কিছু দক্ষ কর্মকর্তাকে অন্যত্র বদলী করায় তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করেন। যেসব দক্ষ কর্মকর্তাকে অন্যত্র বদলী করা হয়েছে তাদের আবার কেপিএমে ফিরিয়ে আনতে তিনি পরিচালক (পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন) এর সহযোগিতা কামনা করেন।
কেপিএম যেহেতু ভালো কিছু করে দেখাতে পারছে তাই এ ব্যাপারে বিসিআইসির চেয়ারম্যান ইতিবাচক সাড়া দেবেন বলে পরিচালক (পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন) লুৎফর রহমান আশ্বস্থ করেন।
