রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরে কয়েক দিন ধরে পাহাড়ি-বাঙালির উত্তেজনা বিরাজ করছে। আনারস বাগান কেটে দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ পরিস্থিতির উদ্ভব হয় বলে জানা গেছে। তবে পরিস্থিতি বর্তমানে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে বলে জানিয়েছে পুলিশ প্রশাসন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বুধবার সকালের দিকে নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাট ইউনিয়নের পুলিপাড়া ও হাতিমরা এলাকায় পাহাড়ি-বাঙালির মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে আতংকে পাহাড়িদের অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদে পালিয়েছে।
জানা যায়, শনিবার রাতে বুড়িঘাট ইউনিয়নের পুলিপাড়া নামক এলাকায় দুই বাঙালি কৃষকের আনারস গাছ কেটে দুটি বাগান ধ্বংস করে দেয় কিছু দুর্বৃত্ত। এ ঘটনায় স্থানীয় পাহাড়িদের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় মামলা দেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। মামলায় সোমবার উপরপুলিপাড়ার রেনু মারমা (৫০), চাইনুরী মারমা (৫৬), হ্লাথোয়াই মারমা (৩০), মংলা অং মারমা (৫৫) ও আসি প্রু মারমা (২৫) নামে পাঁচ পাহাড়িকে আটক করা হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই সেখানে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।
অন্যদিকে আটকের ঘটনার প্রতিবাদে এবং আটককৃতদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে মঙ্গলবার নানিয়ারচরে সড়ক ও নৌপথে অবরোধ পালন করেন স্থানীয় পাহাড়িরা। সকাল-সন্ধ্যা শান্তিপূর্ণ অবরোধে রাঙ্গামাটি-মহালছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়ক এবং রাঙ্গামাটি-বুড়িঘাট-নানিয়ারচর নৌপথে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। অবরোধে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
এলাকাবাসী জানান, ৫ দফা দাবি নিয়ে মঙ্গলবার অবরোধ পালন করেছেন তারা। দাবিগুলো হচ্ছে- আটককৃতদের নি:শর্ত মুক্তি, ষড়যন্ত্রমুলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভুমিকা, বেদখলকৃত জমি ফেরত দেয়া এবং ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা।
এদিকে বুধবার সকালের দিকে পুলিপাড়ার বাসিন্দা রুইজুই খই মারমার ছেলে মংসানু মারমার জায়গায় স্থানীয় বাঙালিদের একদল জঙ্গল কাটতে যান বলে জানা যায়। এতে পাহাড়িরা বাধা দিতে যায়। এ সময় তাদেরকে বাঙালিরা ধাওয়া করেন। পরে পাহাড়িরাও দলবল নিয়ে বাঙালিদের পাল্টাধাওয়া করেন। উভয়ের মধ্যে এ ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা খবর পেয়ে ঘটনাস্থল গিয়ে হাজির হন স্থানীয় সেনাক্যাম্পের সদস্যরা। এ সময় উভয়কে নিবৃত করে পরিস্থিতি সামাল দেন তারা। তবে আতংকে পাহাড়িরা বাড়িঘর ছেড়ে জঙ্গলে নিরাপদে পালিয়ে গেছেন বলে জানান, স্থানীয় লোকজন।
যেগাযোগ করা হলে স্থানীয় পাহাড়িরা দাবি করে বলেন, তারা বুড়িঘাট ইউনিয়নের পুলিপাড়ায় বাঙালিদের আনারস বাগান ধ্বংসের ঘটনায় কেউ জড়িত নন। প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কেও কেউ কিছুই জানেন না। সম্ভবত নিজেরাই নিজেদের বাগান ধ্বংস করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এর মূল উদ্দেশ্য হল- পাহাড়িদের জমি দখল করা।
তারা অভিযোগ করে আরও বলেন, এ ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক পরিস্থিতি তৈরি করে মিথ্যা মামলা দিয়ে অন্যায়ভাবে নিরীহ পাহাড়িদের ধরপাকড় ও গ্রেফতার করা হচ্ছে। বর্তমানে এলাকায় আতংক ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। বাঙালিরা পাহাড়িদের ওপর আক্রমণাত্মক অবস্থানে। তারা পাহাড়িদের ভূমি বেদখলে নিতে তৎপর।
বুড়িঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রমোদ খীসা বলেন, পুলিপাড়া, হাতিমরা ও মহাপুরুম এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়িদের ভূমি বেদখলে নেয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এ কারণে এলাকায় কয়েক দিন ধরে উত্তেজনা চলে আসছে। আতংকে পাহাড়িদের অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদে পালিয়ে যেতে বাধ্য হতে হয়েছে।
বুড়িঘাট ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, মো. জামাল ও মধু মিয়া নামে দুই কৃষক বছরভিত্তিক চুক্তি করে স্থানীয় মারমাদের কাছ থেকে জমি নিয়ে আনারস বাগান করেছেন। অথচ জমি নিয়ে কোনো বিরোধ ছিল না। কিন্তু শনিবার রাতে দুটি বাগানের প্রায় ৪২ হাজার আনারস গাছের সবগুলো কেটে দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে যোগাযোগ করা হলে রাঙ্গামাটির পুলিশ সুপার সাঈদ মো. তারিকুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমানে নানিয়ারচরের বুড়িঘাটে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, বুধবার সকালের দিকে ওই এলাকায় বাঙালিদের কিছু লোক গাছ কাটতে যায়। এতে পাহাড়ি লোকজন বাধা দিতে যায়। ওই সময় উভয়ের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। খবর পেয়ে স্থানীয় সেনাক্যাম্পের লোকজন ঘটনাস্থল গিয়ে উভয়কে বুঝিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন। বর্তমানে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ও শান্তিপূর্ণ রয়েছে। এ ঘটনায় কোনো ধরপাকড় বা কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, নিরাপত্তাবাহিনী ও প্রশাসনের নজরদারি রয়েছে।
