॥ মোহাম্মদ আবু তৈয়ব, রামগড় থেকে ফিরে ॥ আসল জমির মালিক কে? খাগড়াছড়ির রামগড়ে জমিটি কারা দখল করতে চেষ্টা চালাচ্ছে, প্রশাসনের হস্তক্ষেপ, দু’চোখে বেদনার অশ্রু ফেলছে মিনতি বালা যে মাটির নিচে শুয়ে আছে কোন না কোন বাঙ্গালী সন্তানের পিতা। যেখানে তাদের বংশ পরম্পরা বসবাস ছিলো। যে মাটিতে লেগে আছে বাঙ্গালী বাবা ভাইয়ের রক্ত সে মাটি কি সন্ত্রাসীদের আখড়ার জন্য ছেড়ে দিতে হবে- দু’চোখে বেদনার অশ্রুর প্লাবন ঝরিয়ে এই প্রতিনিধির কাছে ক্ষোভের সাথে কথাগুলো বললেন পার্বত্য অধিকার ফোরাম নেতা মো. মাইনুদ্দীন।
সম্প্রতি গুইমারা, মাটিরাঙ্গা ও রামগড়ে বাঙালীদের কবুলিয়ত প্রাপ্ত ও সরকারী খাস জমি খাগড়াছড়িতে একটি আঞ্চলিক সংগঠন কর্তৃক একের পর এক দখল কাছে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি আরো বলেন, প্রশাসন এখানে অসহায়। অঞ্চলিক সংগঠন একেরপর এক ভূমি দখল করেই যাচ্ছে আর প্রশাসন মাপজোখ, দলিল খতিয়ান চেক করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়ী আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর বাঙ্গালী বা সরকারী খাস জমি দখল করার চিরাচরিত পন্থা হচ্ছে, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের নামে জোর করে জায়গা দখল ও পরে ভাগ করে নেয়া অথবা নিজেদের দলীয় কাজে ব্যবহার করা। কখনো এসব জমি নিজ দলীয় ক্যাডারদের মাঝে ভাগ করেও দেয়া হয়। শুধু খাস জমি বা বাঙালীদের কবুলিয়ত প্রাপ্ত জমিই নয়, এই ষড়যন্ত্রের কবল থেকে পাবর্ত্য অঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর পরিত্যাক্ত স্থাপনা বা ক্যাম্পগুলোও রক্ষা হচ্ছে না। অবস্থান ও কৌশলগত গুরুত্বের কারণে পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের প্রধান আকর্ষণ পরিত্যাক্ত ক্যাম্পগুলো। আর ক্যাম্পের জায়গা দখলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নাম। পাহাড়ের নিরস্ত্র, অসহায়, নিরীহ জনগণের শেষ আশ্রয়স্থল নিরাপত্তা বাহিনী। কিন্তু আজ তাদের ক্যাম্পের জায়গাই দখল হয়ে যাচ্ছে। ফলে ভেঙে পড়ছে সাধারণ মানুষের ভরসা ও নিরাপত্তার চিন্তা। সকলের মনে এখন একটিই প্রশ্ন, উপজাতীয় সন্ত্রসীদের এই ষড়যন্ত্রের হাত থেকে মুক্তি কীভাবে হবে? কবে পাওয়া যাবে মুক্তি? খাগড়াছড়ির রামগড়ে সংখ্যালঘু পরিবারের একমাত্র জমি জোরপূর্বক দখল করে একটি আঞ্চলিক সংগঠনের নামে স্কুলের নামে নিজেদের ট্রেনিং সেন্টার বানানোর চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।
ংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ মে (বুধবার) খাগড়াছড়ি রামগড় উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়নের গরুকাটা এলাকার লালছড়িতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাসিন্দা জগদীশ চন্দ্র নাথ (৫৫) এর জায়গা জোরপূর্বক দখল করে একটি স্কুল ঘর তুলেছে একটি আঞ্চলিক সংগঠন সশস্ত্র দলের কিছু সদস্য। এভাবে তারা পার্বত্য অঞ্চলে বহু বাঙ্গালীর বসতভিটা, বন্দবস্তকৃত বৈধ ভূমি জবর দখল করে নিয়েছে অস্ত্রের মুখে সম্প্রতি, রামগড় বিজিবি জোনের খাগড়াছড়ি সিআইও ক্যাম্প থেকে টহল দল ঘটনাস্থলে গেলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, উক্ত জায়গায় স্কুল ঘর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে রাতের আঁধারে গত ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ আঞ্চলিক সংগঠনের একটি গ্রুপ স্কুল ঘরের ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন করে ফেলে। এদিকে গত ১৬ সেপ্টেম্বর (রবিবার) স্কুলের নামে তথাকথিত ট্রেনিং সেন্টারটি প্রশাসনের নজর এড়াতে স্কুলের নাম দিয়ে ৪ জন উপজাতি রামগড় উপজেলা শিক্ষা অফিসে একটি আবেদনপত্র জমা দিতে গেলে অফিস সহকারী আবেদনটি গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানানো হয়। উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে কথা বলে আবেদনটি জমা দিতে বলেন। এরপর ঐ ৪ উপজাতি ব্যক্তি জগদীশ চন্দ্রের বাড়িতে গিয়ে ‘জমিটি স্কুলের নামে লিখে দিতে হবে- না হয় জীবন শেষ করে ফেলার’ হুমকি দেন। এই ভয়ে জগদীশ চন্দ্র কোন অভিযোগ দিতে বা হুমকিদাতাদের নাম বলতে রাজি হননি। পরে ঐ ৪ উপজাতি ব্যক্তি কর্তৃক আবেদনটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট জমা দেওয়া হলে সেখান থেকে হুমকিদাতাদের সণাক্ত করতে সক্ষম হয় প্রশাসনসহ অন্যন্যরা। আবেদনে বিষু ত্রিপুরার নাম থাকায় রামগড় বিজিবি তাকে খোঁজার চেষ্টা করে। কিন্তু বিষু পলাতক থাকায় তাকে খুঁজে পায়নি বলে জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রামগড় বিজিবি জোন উপজেলা প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করে। সংখ্যালঘুর জমি জোরকরে দখল করার কারণে উপজেলা প্রশাসন আবেদন গ্রহণ করেনি। জগদীসের স্ত্রী মিনু বালা জানিয়েছেন, জমি হারিয়ে শোকে তার স্বামী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছে। খাগড়াছড়ির রামগড় হাসপাতাল চট্রগ্রাম নিয়ে যেতে বলছেন। দুই সন্তান আর অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে মানবেতর জীবন পার করছেন। এই জমিটা ছাড়া তাদের অন্য কোন জমি নেই। বিগত দশ বছর আগে অনেক কষ্টে নিজের হাতের বালাসহ অন্যান্য জিনিস বিক্রি করে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে জমিটি ক্রয় করেছিলেন তারা। আর সে জমি জোর করে নিয়ে যাচ্ছে সেটা জগদীস সইতে না পেরে রীতিমত অসুস্থ। এখন স্বমীকে চিকিৎসা করবে নাকি জমি রক্ষা করবে সেটাই বুঝে উঠতে পারছেন না মিনু বালা। এ বিষয়ে স্কুল নির্মাণের সভাপতি বিষু ত্রিপুরার নিকট মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি আঞলিক সংগঠনের ট্রেনিং সেন্টার তৈরির কথা অস্বীকার করে বলেন, আমাদের এলাকায় কোন স্কুল না থাকায় আমরা এলাকাবাসীরা এক হয়ে স্কুলটি করেছি। তবে জমির মালিকের নিকট থেকে লিখিত কাগজ না নেওয়ায় তাদের ভুল হয়েছে মর্মে জানান তিনি। জমির মালিক মৌখিকভাবে জমি দিবে বলায় আমরা স্কুলের কাজ করেছি। ইউএনও অফিসে আবেদনও করা হয়েছে। কিন্তু বিজিবির সদস্যরা কেন আমাদের সাইনবোর্ড নিয়ে গেছে তারা জানে না। প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, জমির মালিককে কোন ক্ষতিপূরণ দেননি। বর্তমানে স্কুলের কাজ বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে পতাছড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন বলেন, কারো যদি স্কুলের প্রয়োজন হয় তাহলে প্রশাসনসহ সকলের সহযোগিতা নিয়ে স্কুল তৈরি করবে। সরকারী খাস জায়গার কোন অভাব নেই পাতাছড়ায়। স্কুলের নামে জোর করে বাঙ্গালীদের জমি দখল করা কারো প্রত্যাশিত হতে পারে না। তিনি এসব জোরপূর্বক দখলের বিষয়ে নিন্দা জানান। খাগড়াছড়ির রামগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এভাবে জোর করে জমি দখল করার বিষয়ে নিন্দা জানিয়ে বলেন, ভুক্তভোগী কেউ থানায় আসেনি আসলে আইনগত ব্যবস্থা নিবো। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ৪জন উপজাতি ব্যক্তি স্কুলের নামে একটি আবেদন নিয়ে এসেছিলেন। রামগড় জোন সদর থেকে জানতে পেরেছি জগদীস চন্দ্র নাথ নামে এক ব্যক্তির জায়গায় জোর করে স্কুল তৈরি করা হয়েছে। বিষয়টি অবগত থাকায় স্কুলের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন থেকে কোন অনুমতি দেয়া হয়নি।
সাম্প্রতিক ভুমি দখলের আরো কিছু ঘটনাঃ
জেলার মানিকছড়িতে গত ২৩ মে ২০১৮ তারিখে দুইজন বাঙ্গালী মো. জামাল উদ্দিন ও আনোয়ারুল ইসলাম এর মালিকানাধীন জায়গায় উপজাতী রিপ্রুচাই মারমা (৪০) জোর করে জঙ্গল পরিস্কার করে ঘর নির্মাণ করলে উভয়পক্ষে বিরোধের সূত্রপাত ঘটে। পরবর্তীতে নিরাপত্তা বাহিনীর সমন্বিত উদ্যোগের ফলে বৈধ কাগজপত্র না দেখানো পর্যন্ত উক্ত জমিতে উভয় পক্ষের কেও প্রবেশ করিবে না মর্মে সম্মত হয়। ২. সিন্দুকছড়ির তিন্দুকছড়িতে পরিত্যাক্ত আর্মি ক্যাম্প সংলগ্ন পাশ্ববর্তী টিলায় গত ৪ জুলাই ২০১৮ টিন দিয়ে একটি নতুন ঘর তৈরি করে এই সন্ত্রাসী দল। একটি আঞ্চলিক দল সমর্থিত সিন্দুকছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রেদাক মারমা বলেন, প্রথমে তিনি নিজে এ ব্যাপারে অবগত নন। পরে বলেন, ভূলবশতঃ জনৈক ব্যক্তি কর্তৃক ঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে। তবে, ঘরটি পরদিন সরিয়ে নেয়া হবে বলে নিরাপত্তা বাহিনীর টহল সদস্যদের জানান। কিন্তু ৫ জুলাই ২০১৮ তারিখে, রাতের আধাঁরে উক্ত ঘরে ১০ ইঞ্চি উচ্চতার একটি বৌদ্ধ মূর্তি স্থাপন করে জায়গাটি দখলে নেয় তারা। পরবর্তীতে, নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক মানিকছড়ি উপজেলার ভূমি কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে উক্ত জায়গার মালিকানা যাচাইপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়। বর্তমানে উপজেলা ভূমি অফিস কর্তৃক জায়গার মালিকানা যাচাই এর কার্যক্রম চলমান। সিন্দুকছড়ি জোন থেকে মহালছড়ি ভূমি অফিসকে সার্ভে করার জন্য পত্র লেখা হয়। মহালছড়ি ভূমি অফিস হতে ১টি সার্ভেয়ার টীম গত ২৮ আগষ্ট ২০১৮ তারিখে সিন্দুকছড়ি জোনের টহল দলের সাথে উক্ত স্থানে গমন করে এবং উক্ত এলাকা সার্ভে করে। সার্ভে টীম কর্তৃক সরেজমিনে সার্ভে করার পর জানানো হয় যে উক্ত জায়গাটি ৫৫ নং দাগের অর্ন্তভূক্ত এবং এটি সরকারী খাস জমি যা পাহাড়ীরা জোরপূর্বক দখল করেছে। ৩. মাটিরাঙ্গার কুকিছড়া এলাকায় গত ২৪ জুন ২০১৮ তারিখে নিরাপত্তা বহিনী পরিত্যাক্ত ক্যাম্পের জায়গায় একটি কিয়াং ঘর নির্মাণ করছে শুনে নাইক্যাপাড়া নিরাপত্তাবাহিনীর ক্যাম্পের একটি টহল দল ঘটনা স্থলে গিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য, পাড়ার কারবারীদের নিকট জানতে চান, কেন কোন প্রকার অনুমতি বা তথ্য ছাড়া এই কিয়াং ঘর নির্মাণ করা হয়েছে? তখন স্থানীয় উপজাতীয়রা অনুমতিপত্র ছাড়া কাজ করবে না মর্মে জানালেও পরবর্তীতে ২০-২১ মে ২০১৮ উক্ত পরিত্যক্ত ক্যাম্পে কিয়াং ঘর স্থাপনের কাজ পুণরায় শুরু করে। ইতোমধ্যে কিয়াং ঘরের নির্মাণ কাজ প্রায় সমাপ্ত হয়েছে এবং উক্ত কিয়াং ঘরে ৮ (আট) ফুট উচ্চতার একটি বৌদ্ধমূর্তিও স্থাপন করেছে তারা। কিন্তু কিয়াং ঘরটি ধর্মীয় কাজে ব্যবহার এখনও শুরু হয়নি।নির্মাণাধীন উপাসনালয়টির প্রায় ৩০০ গজ রেডিয়াসের ভেতর আরো ২ টি উপাসনালয় রয়েছে। তাছাড়া দূর্গম পাহাড়ী এলাকাটি এত ঘনবসতি নয় যে সেখানে আরো উপাসনালয় নির্মাণের প্রয়োজন রয়েছে। অর্থাৎ কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে অবস্থিত পরিত্যক্ত এই নিরাপত্তাবাহিনীর ক্যাম্পের জায়গাটি দখল করে তাদের আধিপত্য বিস্তারের কাজে ব্যবহারের জন্যই এই কিয়াংটি নির্মাণ করা হয়েছে। ৪. রামগড় তৈছাগাড়া, থানা চন্দ্রপাড়ায় গত ৩ জুন ২০১৮ তারিখ ১০ জন বাঙ্গালীর সর্বমোট ৭০.৫০ একর জায়গা উপজাতীয় ব্যক্তিবর্গ ছোট ঝুপড়ি ঘর তৈরী করে দখলে নেয়। পরবর্তীতে সংশিষ্ট বাঙ্গালীরা উক্ত জায়গার মালিকানা দাবী করে তাদেরকে বাধা প্রদান করলে উপজাতীয়রা বলেন, এ এলাকার জায়গাসমূহ বেনামী (কারো নামে রেকর্ডভূক্ত নয়) এবং একটি আঞ্চলিক (মূলদল) এর সদস্যরা তাদের এখানে এনে বসিয়েছে। এ সময় একটি আঞ্চলিক (মূল দল) এর সদস্যরা সংশিষ্ট বাঙ্গালীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বলেও জানা যায়। অভিযোগ প্রাপ্তির পর রামগড় বিজিবি জোন থেকে টহল দল উক্ত স্থানসমূহে যায় এবং বাঙ্গালীদের নামে রেকর্ডকৃত জায়গা হওয়ায় উপজাতীয়দেরকে জবরদখলকৃত স্থান থেকে নিজের ভূমিতে ফেরত যাওয়ার জন্য পরামর্শ প্রদান করা হয়। তথাপি, ও উপজাতীয়রা ঘটনাস্থল ত্যাগ না করে উক্ত স্থানে এখনো বসবাস করছে। ৫. গত ১৮ জুলাই ২০১৮ রামগড় জোনের আওতাধী পাতাছড়া ইউনিয়নের গৈয়াপাড়া এলাকায় জনৈক বাঙ্গালী মো. সুলতান আহমেদ (৭০) এর মালিকানাধীন জায়গায় একটি আঞ্চলিক সংগঠনের এর ইন্ধনে উপজাতীয়রা ৩/৪টি বাড়ী নির্মাণ করেছে মর্মে রামগড় জোন সদর জানতে পারে। উল্লেখ্য, উক্ত এলাকা পার্বত্য চট্টগ্রামের বাহিরে চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলায় অবস্থিত। পরবর্তীতে, আরো জানা যায় যে, উক্ত পাড়ার জনৈক চিকন কারবারী কর্তৃক লক্ষীছড়ি এলাকা হতে ৩টি উপজাতীয় পরিবারকে ঘর নির্মাণের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। খাগড়াছড়ি রামগড় জোন সদর কর্তৃক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করা হয়। মো. সুলতান আহমেদ রামগড় জোন সদরে উপস্থিত হয়ে বেআইনীভাবে বসবাসকারী উপজাতীয়দের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করে এবং একটি আঞ্চলিক সংগঠন এর সহায়তায় তারা বাড়ী নির্মাণ করেছে জানায়। এই সময় রামগড় জোন সদরের পরামর্শ অনুয়ায়ী বাদী সুলতান আহমেদ রামগড় থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। দখলকারী তিনটি পরিবারের মধ্যে একটি পরিবার উক্ত স্থান হতে চলে গেলেও দুইটি পরিবার এখনও আছে তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা হয় নাই। মো. সুলতান আহমদের ৫ একর জমির টিলা গাছ কেটে পরিস্কার করে একটি আঞ্চলিক সংগঠনের সন্ত্রাসীরা ৩টি ঘর নির্মাণ করে পাহাড়ী পরিবারকে দিয়েছে। উক্ত ঘটনাটি খাগড়াছড়ির রামগড় জোনের অধীনস্থ খাগড়াবিল বিজিবি ক্যাম্প থেকে ৫ কি. মি. দক্ষিণে গৈয়াপাড়া মনকুমার চাকমাপাড়া। উক্ত ঘরগুলোতে এখনও পাহাড়ী পরিবার বসবাস করছে। সেখানে জমির মালিক সুলতান আহমেদ বসবাস করেন না। তিনি স্বপরিবারে পার্শ্ববর্তী দাতারামপাড়া এলাকায় বসবাস করেন। ৬. গত ২০ আগস্ট ২০১৮ রামগড় উপজেলার রামগড় ইউনিয়নের আওতাধীন সোনাইআগা নোয়াপাড়া নামক স্থানে বসবাসকারী মো. আব্দুল মান্নান (৪২) কে একটি আঞ্চলিক সংগঠন এর ১০-১২ জন সন্ত্রাসী মারধর করে আহত করে। পরবর্তীতে, স্থানীয়রা আহত ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য রামগড় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। আব্দুল মান্নানের তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় যে, একটি আঞ্চলিক সংগঠনের এর সন্ত্রাসীরা সোনাইআগা নোয়াপাড়া থেকে বাঙ্গালীদেরকে বাড়ি ঘর ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য হুমকি দিয়ে উক্ত এলাকা পাহাড়ীদের বলে দাবী করে। আব্দুল মান্নান কর্তৃক রামগড় থানায় একটি জিডি এন্ট্রি করা হয়েছে এবং উক্ত বাড়ীতে আব্দুল মান্নান এখনও বসবাস করছেন। সন্ত্রাসীদের ভয়ে সে স্থান থেকে বের হতে সাহস করছে না। এভাবেই পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি আগ্রাসন চালাচ্ছে। এ কাজে জনগণ ও মিডিয়ার সমর্থন পেতে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা সামাজিক প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে। ফলে নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসন অনেক ক্ষেত্রে অসহায় হয়ে পড়ে। অন্যদিকে সন্ত্রাসীদের অস্ত্র ও প্রাণের হুমকির ভয়ে ক্ষতিগ্রস্তরাও অসহায় । একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইলে সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে ইউপিএফ কেন্দ্রীয় নেতা ও সংগঠক মাইকেল চাকমা জানা, যে স্থানে স্কুলটি নির্মিত হয়েছে সেখানে মূলত কখনো কোন বাঙ্গালীর বসবাস ছিল না। যদি কেউ জমির মালিক হয়ে থাকে তাহলে সে আদালতের আশ্রয় নিতে পারে। স্কুলটি এলাকাবাসীর উদ্যোগে নির্মিত হলেও ইউপিডিএফের সহযোগিতা ছিলো বলে তিনি স্বীকার করেন। তিনি আরো বলেন, সারা দেশে আওয়ামীলীগ, বিএনপি স্কুল তৈরি করে, আমরা কি সহযোগিতাও করতে পারবো না।
