সম্প্রতি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঘোষিত ৭ দফা পড়ে যেটি পরিস্কার তাহলে- এর কোথাও নেই গণদাবি বা জনমানুষের আকাঙ্খার প্রতিফলন, বরং পুরোটাই ঠাসা নিজেদের আর জোটের এজেন্ডা বাস্তবায়নে।
১. অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদাসহ সকল রাজবন্দির মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার নিশ্চিত করতে হবে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রথম দফায় যারা শুধুমাত্র রাজনীতি পেশার সাথে জড়িত, তাদের কথা বলা হয়েছে। সমাজে বিভিন্ন পেশার মানুষ বাস করে। সরকারে কাছে তাদের চাওয়া কম টাকায় ভালো খাবার, সুচিকিৎসা, একটা সুন্দর ঘর, নিরাপত্তা, বিনোদন, আধুনিক শিক্ষা, ন্যায় বিচারের মত কিছু মৌলিক অধিকার। এখানে নির্বাচন, সংসদ বাতিল, আলাপ আলোচনা, সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকার আর রাজবন্দীর মুক্তি মামলা-মোকদ্দমার বিষয়ে ছাড়া দেশের বাকী জনমানুষের চাওয়া উপেক্ষা করা হয়েছে।
২. গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। বাংলাদেশ গণপ্রজাতন্ত্রী দেশ অর্থাৎ, জনগণ যে তন্ত্র সে অনুযায়ী বাংলাদেশ চালাবে, সরকার সেই তন্ত্র অনুযায়ী দেশ চালাতে বাধ্য থাকবে।
জনগণের মৌলিক অধিকারের কথা দ্বিতীয় দফায়ও অনুপস্থিত। প্রথম দফার মত নির্বাচনের কথা এ দফায় আবারও বলা হয়েছে।
৩. বাক, ব্যক্তি, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সকল রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা এবং নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেইং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে হবে।
৪. কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সাংবাদিকদের আন্দোলন এবং সামাজিক গণমাধ্যমের স্বাধীন মত প্রকাশের অভিযোগে ছাত্র-ছাত্রী, সাংবাদিকসহ সবার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির নিশ্চয়তা দিতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সকল কালো আইন বাতিল করতে হবে।
প্রমাণিত অভিযুক্তদের মুক্তির দাবির আইনের শাসন পরিপন্থী। কয়েকশ ব্যক্তির জন্য কোটা বা ডিজিটাল নিরাপত্তার মত বিষয় তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নয়।
৫. নির্বাচনের ১০ দিন পূর্ব থেকে নির্বাচনের পর সরকার গঠন পর্যন্ত ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত করতে হবে।
যথারীতি পঞ্চম দফাতেও নির্বাচন, সেনা ম্যাজিস্ট্রেসির মত ক্ষমতা দখল প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত বিষয় সমুহের কথা পাওয়া যাচ্ছে। উপেক্ষিত গরীব, মধ্যবিত্ত, ব্যবসায়ীসহ ১৭ কোটি জনতা।
৬. নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশি ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং সম্পূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে ভোটকেন্দ্র, পোলিং বুথ, ভোট গণনা স্থল ও কন্ট্রোল রুমে তাদের প্রবেশের ওপর কোনও বিধিনিষেধ আরোপ না করা। নির্বাচনকালীন গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর যেকোনও ধরনের নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করতে হবে।
জনজীবনের হাজার হাজার দিনের কথা বাদ দিয়ে মাত্র নির্বাচনের দিনে কী হবে আর না হবে সেসব কথা তুলে ধরেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
৭. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনের ফলাফল চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও কোনও ধরনের নতুন মামলা না দেওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।
রাজনীতিবিদরা ফেরেশতা বা রোবট নন। এদের মধ্যে কেউ নির্বাচনের তিন মাস কোথাও কোন অপরাধ করবেন না – তার বিন্দুমাত্র নিশ্চয়তা নাই। যেহেতু আইন সবার জন্য সমান; সেক্ষেত্রে বাদ বাকি জনগণের কেউ অপরাধ করলে তাদের কেন মামলা দেওয়া হবে? এই দফার ভেতর দিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতা আঁচ পাওয়া যায়। সাধারণ জনগণের জন্য এই দফা অপমানজনকও বটে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা তাদের রাজনৈতিক অশ্লীলতা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। এই ৭ দফায় অন্তত এক দফাতেও গরীব জনগণের স্বার্থের কোন কথা কোথাও উল্লেখ নেই। সবগুলো দফাই নির্বাচন কেন্দ্রীক। ব্যক্তি ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট। তারা ‘রাখতে হয় তাই রাখা’র প্রয়োজনও মনে করেনি।