কতটুকু সুফল বয়ে আনবে ওয়ার্ড ও এলাকা ভিত্তিক লকডাউন ?

আ.জ.ম সামছুল করিম (লাভলু) :: লকডাউন শব্দটি সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রীয়া সৃষ্টি করে। নাগরিক ব্যবস্থাপনায় জীবন ও মূল্যবোধ সবার জন্য একিরকম নয়। এ সমাজে বাসকরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। একেক জনের জীবনকর্ম একেক রকম। তাই সবাইকে একই রকম ভাবে বিচার করলে হবে না। বর্তমান করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলার লক্ষে, সংক্রমন না ছড়াতে, মানুষ যাতে একে অন্যের সংস্পর্শে না আসতে পারে সেজন্য একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে মানুষকে ঘরে রাখাই এটির মূল উদ্দেশ্য। সে আপনি লকডাউন বলেন বা অন্যকিছু।
এই লকডাউন টানা ১৪ কিংবা ২১ দিন ধরে চলতে থাকলে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের পক্ষে এটি একই রকম ভাবে পালন করা সম্ভব নাও হতে পারে। এর আগে গত ২৬ মার্চ থেকে টানা ৬৪ দিন সাধারণ ছুটি ঘোষনা থাকলেও দেখা গেছে শুধু মাত্র সরকারি চাকুরিজীবিরা এটি যথা নিয়মে পালন করতে পেরেছেন। কারন তাদের বেতন না পাওয়া ও চাকুরি হারানো নিয়ে কোন ভয় ছিলো না। পক্ষান্তরে যারা প্রাইভেট চাকরি কিংবা ব্যবসা করছেন তাদেরকে নিত্য যেতে হয়েছে নিজ কর্মস্থলে তাদের মধ্যে সিএনএফ, শিপিং, ডিষ্টিভিউশন কোম্পানি, পাড়ামহল্লায় ছোটখাট ব্যবসা, দোকানপাট ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য আর গার্মেন্টস, শিল্প কারখানাতো ঘোষনা দিয়েই খোলা ছিল। এই সমস্ত আরো অনেক ধরনের প্রতিষ্ঠানে যারা কর্মরত আছেন তারা কিন্তু অনেকে এক দিনের জন্য ও ছুটি ভোগ করতে পারেননি। উপরন্ত নিয়মিত কর্মস্থলে পৌছাতে কি দুঃসহ ভোগান্তি তাদের ভোগ করতে হয়েছে তা কেবল তারাই উপলদ্ধি করেছেন। এর মধ্যে কেউ কেউ করোনা আক্রান্ত ও তাদের মাধ্যমে অনেকে সংক্রমিত হয়েছেন বলে ধারনা করা হচ্ছে।
বর্তমানে প্রশাসন যে ভাবে এলাকা ভিত্তিক লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাতে করে সেই এলাকার সব মানুষকে ঘরে রাখা পুরোপুরি অসম্ভব। অন্য এলাকার কথা জানি না। আমাদের চট্টগ্রামে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যেতে এতো অসংখ্য অলি-গলি আছে যে, পুলিশ কিংবা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকের জন্য এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না। যে সমস্ত মানুষ সরকারি চাকুরির সাথে জড়িত নয় তারা জীবিকার তাগিতে ঘরে বসে থাকা সম্ভব না। বিশেষ করে যারা এমন পরিস্থিতে আছেন। বাসস্থান রেড জোনে আর কর্মস্থল গ্রীন কিংবা ইউলো জোনে। যদিওবা প্রশাসন রেড জোন বাসীদের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষনা করেছেন। তা শুধু সরকারি চাকুরি জীবিদের ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন সম্ভব। অন্যরা থাকবেন কর্মস্থলে না গেলে বেতন না পাওয়া ও চাকুরি হারানোর ভয়ে। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায় চট্টগ্রামের স্বনামধন্য এমন অনেক প্রতিষ্ঠান প্রথম লক ডাউনের ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি ছুটি ঘোষনা অনুযায়ী যারা কর্মস্থলে উপস্থিত ছিলেন না, তাদের সে ক’দিনের বেতন কর্তন করেছেন।
চট্টগ্রাম শহর আয়তনে এতো ছোট যে, এখানে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকার দূরত্ব খুবই নিকটে। এক এলাকার সাথে অন্য এলাকার প্রায় সকল কর্মকান্ড জড়িত। স্থানীয় যারা বাসিন্ধা তারা প্রায় সবাই পুরো চট্টগ্রামে একে অন্যের সাথে আত্মীয়তায় আবদ্ধ। কারো ঘর এক এলাকায় হলেও কবরস্থান, হাট-বাজার অন্য এলাকায়।
মানুষকে ঘরে রাখা একমাত্র উদ্দ্যেশ হলেও দেখা যাচ্ছে বড় বড় হাট বাজার, মার্কেট লকডাউনের আওতার বাহিরে রয়েছে। ফলে সেখানে লোক সমাগমের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
প্রথম অবস্থায় চট্টগ্রামে যে ১১টি এলাকা লক ডাউনে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ধরে নিলাম, সেটি পুরোপুরি কার্যকর হবে। কিন্তু বাকি এলাকাগুলোতেও এর অর্থনৈকিত প্রভাব পড়বে। ১১টি এলাকা লকডাউনের কারনে বাকি এলাকাগুলোর ব্যবসা বাণিজ্য কার্যত বন্ধ থাকবে। আর এটি যদি ২১দিন হয় তাহলে চট্টগ্রামের অর্থনীতি ২১দিনের জন্য স্তব্ধ্য থাকবে।
এরপরও শেষ নয়, ২১দিন পর যদি অন্য আরো ১১টি এলাকা লকডাউন করতে হয় তাহলে আরো ২১ দিন এভাবে ৪১টি ওয়ার্ডে ক্রমানয়ে চার দফায় ৮৪ দিন প্রায় তিন মাস চট্টগ্রামের স্বাভাবিক কর্মকান্ড বন্ধ হয়ে অকার্যকর শহরে পরিনত হবে।
তাই পালাক্রমে এলাকা ভিত্তিক লক ডাউন না দিয়ে পুরো শহর কিংবা জেলা ভিত্তিক (বিশেষজ্ঞের মত অনুযায়ী) ১৪ অথবা ২১ দিনের জন্য সারা দেশের স্বার্থে শুধু মাত্র চট্টগ্রাম বন্দরের মাল উঠানামা ব্যাতিত সম্পূর্ন কড়া কড়ি ভাবে লক ডাউন দিলে এটি ফলশ্র“ত হবে বলে আমার বিশ্বাস।
লেখক- যুগ্ম-আহ্বায়ক, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা।
মোবাইল : ০১৭১৩-১৬০৬৯২

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031