॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ কাপ্তাই হ্রদ মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন বৃদ্ধি করতে খুব শীঘ্রই হ্রদ থেকে মাছ আহরণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারী হচ্ছে। এই উপলক্ষে আগামী ৯ মে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে এই উপলক্ষে এক সভার আহবান করা হয়েছে। রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ফেরদৌসী বেগম স্বাক্ষরিত এক পত্রে এই সভার কথা জানানো হয়।
২৫৬ বর্গমাইলের বিশাল কাপ্তাই হ্রদ থেকে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে রাঙ্গামাটি বিএফডিসি কর্তৃপক্ষ। হ্রদে মাছের ডিম ছাড়ার মৌসুমে এই বিশাল কাপ্তাই হ্রদ হতে সকল প্রকার মৎস্য আহরণ, বাজারজাতকরণ এবং পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের বংশবৃদ্ধি, হ্রদে অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধি, মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতকরণসহ হ্রদের প্রাকৃতিক পরিবেশ মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির সহায়ক হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতিবছর কাপ্তাই হ্রদে তিন মাস মাছ শিকার বন্ধ রাখা হয়। আগামী ৯ মে সভার সিদ্ধান্ত মতে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও মাছ শিকার বন্ধ কার্যকর হবে। একটি সুত্র জানায়, গত বছর সাধারণত ১ মে থেকে মাছ শিকার বন্ধ করা হলেও এবছর হ্রদে তুলনামূলক বেশি পানি থাকার কারণে কিছুটা দেরিতে মৎস্য শিকার বন্ধ কার্যকর হচ্ছে।
আগামীকাল রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে কাপ্তাই হ্রদ পরিচালনা সংক্রান্ত এক সভায় সিদ্ধান্তের ভিতিত্তেকে বিএফডিসি কর্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞার কথা জানিয়ে দেবে।
এদিকে মাছ শিকার বন্ধকালীন হ্রদের মৎস্য আহরণের ওপর নির্ভরশীল প্রায় ২০ হাজার জেলেকে বিশেষ ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের কর্মকর্তাবৃন্দ।
মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জানান, কাপ্তাই হ্রদে কার্প প্রজাতি মা মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিত করার জন্য ডিম ছাড়ার মৌসুম মাছ ধরা বন্ধ রাখা প্রয়োজন। তিনি জানান, কাপ্তাই হ্রদ দেশের কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজননের একটি অন্যতম স্থান। এই হ্রদে প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রাকৃতিক প্রজননকৃত মাছের মধ্যে শতকরা ৩১ ভাগ কাতাল, শতকরা ১২ ভাগ রুই, শতকরা ৭ ভাগ মৃগেল এবং শতকরা ৫১ ভাগ কালিবাউশের প্রজনন হয়। যা দেশের সামগ্রিক মৎস্য সম্পদের উন্নয়নে গুরুত্বর্পূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
এছাড়া মাছ ধরা বন্ধ মৌসুমে অবৈধ উপায়ে মাছ আহরণ বন্ধ এবং পরিবহন ও বাজারজাতকরণ বন্ধ কল্পে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার পাশাপাশি কাপ্তাই হ্রদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কোস্ট গার্ড মোতায়ানের সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। এছাড়া মাছ শিকার বন্ধ মৌসুমে মাঝে মাঝে হ্রদের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার পাশাপাশি আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিয়মিত টহল জোরদার করা হবে।
প্রসঙ্গত, দরিদ্র জেলেদের জন্য বিশেষ ভিজিএফ কার্ড চালুর পর বিগত কয়েক বছরে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা বন্ধকালীন ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যায়। এতে কাপ্তাই হ্রদে মাছের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিএফডিসি ও বিএফআরআই কর্মকর্তারা।
এদিকে স্থানীয় জেলেরা জানান, সরকার তাদেরকে ৬০ কেজি করে খাদ্যশষ্য দেয়ার কথা থাকলেও তারা কোনবারই ৬০ কেজি চাল পায়নি। এই নিয়ে গতবছর রাঙ্গামাটি শহরে বিক্ষোভ মিছিল সহ বিভিন্ন আন্দোলন করেছে স্থানীয় জেলেরা।
