খাগড়াছড়িতে সেনাবাহিনীর অভিযান :: শতকোটি টাকার গাঁজা ধ্বংস

খাগড়াছড়ির দুর্গম দুল্যা কমল চরম চাকমা পাড়ায় শত কোটি টাকার মূল্যের গাঁজা ক্ষেত ধ্বংস করেছেন মহালছড়ি সেনা জোন। গতকাল ০২ জানুয়ারী গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খাগড়াছড়ির দুর্গম দুল্যা পাড়ায় দুইশ বিঘা জমিতে গাঁজার সন্ধান পেয়েছে সেনাবাহিনী। যার ওজন প্রায় ৪০ মে: টন ও বাজার মূল্য শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। পরে শতাধিক সেনা, পুলিশ ও আনসার ভিডিপি সদস্যরা অভিযান চালিয়ে গাঁজা ধংস করে।
নিরাপত্তা বাহিনী জানায়, খাগড়াছড়ি সেনা রিজিয়নের আওতাধীন মহালছড়ি জোনের মেজর আসিফ ইকবালের নেতৃত্বে ধইল্যা কমলচরণ কার্বারি পাড়ায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে প্রায় দুইশ বিঘা জমিতে গাজা ক্ষেতের সন্ধান পায়। এক্ষেত্রে ড্রোনও ব্যবহার করা হয়। বিশাল গাঁজার চাষের সন্ধানের খবরে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
সুত্র জানায়, খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার দূর্গম ধইল্যা কমলচরণ কার্বারি পাড়া গ্রামে ৫০টি পরিবারের বসবাস। ছড়া, ঝিড়ি ও পাহাড় পেরিয়ে টানা দুই ঘন্টা পায়ে হাঁটা পথ পাড়ি দিয়ে দেখা গেল পুরো গ্রামটি যেন গাঁজার উপর ভাসছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গ্রামের প্রতিটি বাড়ির আঙ্গিনায় ৩৫টি গাঁজার ক্ষেত রয়েছে। সেনাবাহিনীর মহালছড়ি জোনের অধিনায়ক লে: কর্নেল মেহেদি হাসান নিজেই গাঁজা ধংসের সময় উপস্থিত ছিলেন। তবে ওই জোনের উপ অধিনায়ক মেজর আসিফ ইকবালের নেতৃত্বে এই অভিযান চলছে বলে নিরাপত্তাবাহিনী সূত্র জানিয়েছে।
মাটিরাঙার ৬ নং ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড মেম্বার চন্দ্র কিশোর ত্রিপুরা জানান, এলাকায় প্রায় ৫০টি পরিবার বসবাস করে। আগে জানতাম না, এখানে গাঁজা চাষ হয়। বাস্তবে এসে দেখলাম, এটা যেন গাঁজার স্বর্গরাজ্য।
খাগড়াছড়ি মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর উপ-পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ জানান, সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত অভিযানে প্রায় দুইশ বিঘা জমিতে গাঁজার সন্ধান পেয়েছেন। যার ওজন প্রায় ৪০ মে:টন ও বাজার মূল্য শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। একটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল তাদের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এলাকাবাসীকে দিয়ে এ মাদক চাষ করাচ্ছে।
মাটিরাঙা থানার পুলিশের উপ-পরিদর্শক মহিউদ্দিন জানান, এলাকাটি খুবই দুর্গম হওয়ায় এ ভাবে বিশাল এলাকা জুড়ে গাঁজা চাষ করা সম্ভব হয়েছে। পুলিশ এ গাঁজা চাষের সাথে জড়িতদের চিহিৃত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নিরাপত্তার বাহিনীর সূত্র জানায়, টহল দলটি ৩৫-৪০টি গাজা ক্ষেত সনাক্ত করে যার প্রতিটি জায়গায় ৩-৪ বিঘা জমিতে গাজা চাষ করা ছিল। নিরাপত্তা বাহিনী এসব মাদক ব্যবসায়ী ও দৃষ্কৃতিকারীদের আটক করার অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
গহীন অরণ্য ও দূর্গম পাহাড়ি এলাকায় যেখানে জনবসতি তুলনামূলক কম এইরকম জায়গায় সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের নিরাপদ বসবাস এলাকা হিসেবে বেছে নেয়।
আর এই ধরণের মাদক ব্যবসা থেকে আয় করা অর্থ ব্যয় হয় আঞ্চলিক দল গুলোর সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা, অস্ত্র ক্রয় ও তাদের বেতন ভাতাসহ অন্যান্য প্রশাসনিক কাজে। নিরাপত্তা বাহিনীর এই ধরণের অভিযান অব্যাহত রাখায় জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
উল্লেখ, গত ২২ ডিসেম্বের খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার প্রত্যন্ত কলাবুনিয়া এলাকায় সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে ৭ বিঘা জমির গাঁজার ক্ষেত ধ্বংস করে দিয়েছে। যার বাজার মুল্য আনুমানিক প্রায় ৪ কোটি টাকা।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031