রোববার ঢাকায় জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে সমাজে ‘সাংঘাতিকভাবে একটা অসুস্থতা’ দেখা যাচ্ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই যে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস বা মাদকাসক্তি। এগুলো মানুষের মন, মানসিকতা ও স্বাস্থ্য নষ্ট করে দিচ্ছে; সমাজকে কলুষিত করে দিচ্ছে।
“এখান থেকে আমাদের যুবসমাজ … সবাইকে ফিরিয়ে আনতে হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই খেলাধুলার আরও বেশি সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “খেলাধুলা আমাদের দেশের জন্য একান্তভাবে প্রয়োজন। কারণ, খেলাধুলার মধ্য দিয়ে ছেলে-মেয়েদের একটা শৃঙ্খলাবোধ, অধ্যাবসায়, দায়িত্ববোধ, কর্তব্যবোধ এবং দেশপ্রেম জাগ্রত হয়।
“যত বেশি খেলাধুলার সাথে আমরা আমাদের ছেলে-মেয়েদের সম্পৃক্ত রাখতে পারব, তারা ততো সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে। তারা চিন্তা, মন, মননে অনেক বেশি শক্তিশালী হবে। অনেক বেশি উন্নত হবে। কারণ, একটা সুস্থ দেহ থাকলে, সুস্থ মনও থাকবে। তখন আর এই মনটা এদিক-ওদিক যাবে না।”
ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে ২০১০, ২০১১ এবং ২০১২ সালের বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
সব উপজেলায় ‘মিনি স্টেডিয়াম’ নির্মাণের কাজ চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম আমরা করে দেব। সেখানে বারো মাসই খেলাধুলা হতে পারবে। সম্পূর্ণ আলাদা মাঠ হবে। ছোট্ট একটু ব্যবস্থা থাকবে।”
“অত বেশি গ্যালারি, বসার জায়গা থাকবে না। এমনভাবে এটা তৈরি করা হবে, যেন মানুষ চলতে-ফিরতে খেলাধুলা দেখতে পারে। মানুষের কাছে দৃশ্যমান করতে হবে। কারণ, দেখার মধ্যে দিয়ে মানুষের মাঝে খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ জমবে”, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
খেলাধুলায় প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেক বিভাগে একটি করে বিকেএসপি হবে।
বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) এখন শুধু ঢাকার সাভারে আছে।
অনুষ্ঠানে দেশের ঐতিহ্যবাহী বিলুপ্তপ্রায় খেলাগুলোর প্রতি নজর দেওয়ার তাগিদও দেন প্রধানমন্ত্রী।
“গ্রামের কিছু খেলা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এই খেলাগুলো চালু করতে হবে। দেশীয় খেলাগুলো ফেলে দিলে চলবে না।”
প্রত্যেক বিভাগীয় শহরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু করার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “প্রত্যেক বিভাগীয় শহরে আবাসনসহ আন্তর্জাতিক ভেন্যু যাতে হতে পারে, সে ব্যবস্থা আমরা করে দেব।”
“ক্রিকেটের জন্য একটি আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম করা প্রয়োজন। পূর্বাচলে আধুনিক স্টেডিয়াম করার পরিকল্পনা আছে”, যোগ করেন তিনি।
এসময় কক্সবাজারে একটি ফুটবল স্টেডিয়াম নির্মাণের কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে বছরের একটি দিনকে ‘স্পোর্টস ডে’ হিসেবে উদযাপনের কথা বলেন ক্রীড়া ও যুব মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি জাহিদ আহসান রাসেল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জাতিসংঘ ৬ এপ্রিল ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস ডে হিসেবে পালন করে। আমরাও সে দিনটা স্পোর্টস ডে হিসেবে পালন করতে পারি।”
ক্রীড়াক্ষেত্রে বিত্তশালীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “অসাধ্য সাধন করতে পারে বাংলাদেশ। খেলাধুলায়ও তা প্রমাণ করব।”
পরবর্তী অলিম্পিকে সুনির্দিষ্ট কিছু খেলায় অংশ নেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অলিম্পিক কয়েকটি আইটেম সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছি। আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন প্রশিক্ষণ নিয়ে আমরা সেখানে যাব।”
ক্রিকেটের উন্নয়নে সরকারের ভূমিকা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের সাফল্যের বীজ বপণ করি। ১৯৯৭ সালে প্রথমবারের মতো আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ।
“১৯৯৮ সালে মিনি বিশ্বকাপ আয়োজন করে এই ক্রীড়া ক্ষেত্রটাকে উজ্জীবিত করার পদক্ষেপ আমরা নেই। ১৯৯৯ সালে বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে পরাজিত করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ্বকে অবাক করে দেয়।”
ক্রিকেটে বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস অর্জন করায় অনেকেই তখন সমালোচনা করেছিলেন।
সেসব কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমার এটুকু মনে আছে, আমরা যখন ক্রিকেটে টেস্ট খেলার স্বীকৃতি পেলাম, তখন অনেকেই তখন নানাভাবে বিদ্রুপ করেছিল। বাংলাদেশ এখনো প্রস্তুত হয়নি। আমরা নাকি লবিং করে করে, বিভিন্ন দেশের প্রধানমন্ত্রীদের বলে বলে নাকি এই স্ট্যাটাসটা অর্জন করেছি।
“এই ধরনের ক্রিকেটে না কি আমাদের ছেলেরা পারদর্শী না। আমাদের ছেলেরা তার জবাব দিয়ে দিয়েছে। তখন যারা এই বক্তৃতা দিয়েছিল, সেই কথাগুলো বলেছিল … সেই পুরনো কাগজগুলো বের করে তাদের মুখের ওপর একটু বলে দেওয়া উচিত, দেখেন আমাদের ছেলেরা পারে কি, পারে না।”
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রশংসা ও বিশ্বকাপ জয়ের প্রত্যাশা পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, “সত্যি কথা বলতে কী সব দেশ ক্রিকেটে রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে হিসাব করে চলে। রয়েল বেঙ্গল টাইগাররা ঠিক রয়েল বেঙ্গল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
“ইনশাল্লাহ আমরা একদিন বিশ্বকাপ জয় করব।”
সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মাশরাফি বিন মর্তুজা, মুশফিকুর রহিমের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “মুস্তাফিজ তো নতুন এবং ইয়ং। তার নামই হয়ে গেছে কাটার মাস্টার।”
ফুটবলে মেয়েদের কৃতিত্বের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মেয়েরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। আমার খুবই ভালো লেগেছে। কারণ, ১৯৯৬ সালে আমরা যখন মেয়েদের ফুটবল টিম মাঠে নামাই, আমরা নাম দিয়েছিলাম প্রমীলা ফুটবল।
“তখন অনেক জেলায় এই খেলা হতে পারে নাই। বিশেষ করে রাজশাহীতে যখন মেয়েরা ফুটবল খেলতে যায়, তখন সেখানে প্রচণ্ড বাঁধা আমরা পেয়েছিলাম। এখন আর সে পরিবেশ নাই। আমরা সে পরিবেশ থেকে উত্তোরণ ঘটিয়েছি।
শনিবারই অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের মূলপর্ব নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। অন্যদিকে, মালেতে এক প্রীতি ম্যাচে বাংলাদেশ ফুটবল দল মালদ্বীপের কাছে পাঁচ গোলে পরাজিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মেয়েরা যা পারছে, ছেলেরা তা পারছে না। মেয়েরা দশ গোল দেয়। ছেলেরা পাঁচ গোল খেয়ে আসে।”
“তাতে আমি বলব না যে, তারা পারবে না। তারা ভবিষ্যতে পারবে”, হাসতে হাসতে বলেন শেখ হাসিনা।
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেণ শিকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় এবং সচিব কাজী আখতার উদ্দিন আহমেদ।