গণহত্যার বিচারের দাবীতে লংগদুতে পাকুয়াখালী ট্রাজেডি দিবস পালিত পাকুয়াখালীসহ সকল বাঙালি গণহত্যার বিচার করতে হবে —–কাজী মুজিবুর রহমান

॥ লংগদু প্রতিনিধি ॥ পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসী সংগঠন জেএসএস’র সশস্ত্র শাখা শান্তিবাহিনীর হাতে অসংখ্য বর্বরোচিত, নাড়কীয় ও পৈশাচিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে পার্বত্য অঞ্চলের বাঙালিরা। ১৯৯৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর এই দিনে ৩৫ জন নিরীহ বাঙালি কাঠুরিয়াকে নিমর্মভাবে হত্যা করেছিল শান্তিবাহিনী। এই হত্যাকান্ডের বিচার হয়নি এখনো। তাই পাকুয়াখালীসহ সকল বাঙ্গালী গণহত্যার বিচার দ্রুত করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান কাজী মুজিবুর রহমান।
শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে পাকুয়াখালীতে গণহত্যা দিবসের স্মরণে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ লংগদু উপজেলা শাখার উদ্যোগে নিহতদের স্মরণে আয়োজিত দোয়া মুনাজাত, শোক র ্যালী ও শোকসভায় প্রধান অতিথি বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন,পার্বত্য চট্টগ্রামে অসংখ্য গণহত্যার ঘটনার মধ্যে ৯ সেপ্টেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে একটি নৃশংসতম বর্বর গণহত্যা দিন, পাকুয়াখালী ট্রাজেডি দিবস।
১৯৯৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পিসিজেএসএস এর সশস্ত্র শাখা শান্তিবাহিনী কর্তৃক রাঙ্গামাটি জেলার লংগদু উপজেলার পাকুয়াখালীতে নিরীহ বাঙালি কাঠুরিয়াদের ওপর নিমর্ম নিযার্তনের পর হত্যাকান্ড চালিয়ে তাদের বীভৎস মানসিকতার এক জঘন্যতম জিংঘাসার স্বরূপ উন্মোচন করে। পাবর্ত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে এই দিনটি একটি নৃশংসতম বর্বর গণহত্যার দিন। এই দিনে ৩৫ জন নিরীহ বাঙালি কাঠুরিয়াকে নিমর্মভাবে হত্যা করেছিল শান্তিবাহিনী। তাদের ক্ষত-বিক্ষত, বিকৃত লাশের নিমর্ম দৃশ্য দেখে সেদিন শোকে ভারী হয়ে ওঠেছিল পরিবেশ। হাত-পা বেঁধে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে, দা-দিয়ে কুপিয়ে এবং বন্দুকের বেয়নেট ও অন্যান্য দেশী অস্ত্র দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নানাভাবে কষ্ট দিয়ে হত্যা করেছিল সেদিন অসহায় ওই মানুষগুলোকে। প্রতিটি লাশকেই বিকৃত করে সেদিন চরম অমানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে শান্তিবাহিনী।
এসময় পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ লংগদু উপজেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খলিলুর রহমান এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের মহাসচিব আলমগীর কবির, রাঙ্গামাটি জেলা সভাপতি শাব্বির আহম্মেদ, খাগড়াছড়ি জেলা সদস্য সচিব এসএম মাসুম রানা, লংগদু উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন, পিসিএনপি লংগদু উপজেলা সাধারণ সম্পাদক এবিএস মামুন, সাংগঠনিক সম্পাদক মো: আলমগীর হোসেন, ৩৫ কাঠুরিয়া পরিবারের শহীদ আলালউদ্দিনের সন্তান রাকিব হোসেন, প্রত্যক্ষদোষী মো: হাকীম, পিসিসিপি রাঙ্গামাটি জেলা সভাপতি মো: হাবীব আজম, কলেজ আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম, পৌর সভাপতি পারভেজ মোশারফসহ বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ।
এতে বক্তারা বলেন, মানবাধিকার এবং ন্যায়ের ভিত্তিতে পাবর্ত্যাঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যই পাকুয়াখালী গণহত্যাসহ পাহাড়ে সকল বাঙালি গণহত্যাকান্ডের তদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করা প্রয়োজন। অন্যথায় পাবর্ত্যাঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার আশা কোনোদিনই সফল হবে না। পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ও সম্প্রীতি রক্ষায় সশস্ত্র অবৈধ অস্ত্রধারী ও দেশদ্রোহী সন্ত্রাসী সংগঠন জেএসএস ও ইউপিডিএফকে নিষিদ্ধ করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে গণহত্যার দায়ে সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসা সহ তাদের সংগঠনের সকল সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
শোকসভার আগে সকালে লংগদু উপজেলা পরিষদের প্রাঙ্গন থেকে শোক র‌্যালি বের করা হয়। শোক র‌্যালিটি প্রধান সড়ক ঘুরে উপজেলা পরিষদের কাঠুরিয়াদের গণ কবরের সামনে এসে কবর জিয়ারত ও দোয়া মোনাজাতে শরিক হয়। দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন গাঁথাছড়া বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সের সুপার হাফেজ মাওলানা ফোরকান আহমেদ, পরে উপজেলা মাঠের একপাশে শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়।শোকসভা শেষে ৩৫ জন শহীদ পরিবার ও একজন জীবিত ফিরে আসা মোঃ ইউনুসকে সহ মোট ৩৬ জনকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031