ঘরমুখো মানুষের ট্রেনের ‘ঈদযাত্রা’ শুরু

ঈদের এক সপ্তাহ আগে রোববার কমলাপুর স্টেশনে ঘরমুখো মানুষের ভিড় ছিল অন্য দিনগুলোর চেয়ে বেশি।

গত ১ জুন যারা ঈদের অগ্রিম টিকেট কিনেছিলেন, সেসব যাত্রীরা এদিন যাত্রা করছেন। এদিন কমলাপুর স্টেশন থেকে ৬৩টি ট্রেন ছেড়ে যাবে। এরমধ্যে ২৮টি আন্তঃনগর; বাকিগুলো মেইল, এক্সপ্রেস ও লোকাল ট্রেন।

মেয়েকে নিয়ে কিশোরগঞ্জের ভাগলপুর যাওয়ার জন্য কমলাপুর এসেছেন ইসলাম গ্রুপের কর্মী আবুল কালাম। তিনি বলেন, মেয়ের কোচিং শেষ বলে এজন্য আগেই চলে যাচ্ছেন।

“মেয়ে ফার্মগেইট এলাকার একটি কোচিংয়ে পড়ে। সেখানে ছুটি হয়ে গেছে। ঢাকা থেকে তো আর কোনো কাজ নেই। ঈদের আগে আগে যাওয়াও ঝামেলা। এজন্য  তাকে নিয়ে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি।”

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা শামসুল হকের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরায়। থাকেন ঢাকার মালিবাগে। ঈদের ভিড় এড়াতে আগেই বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছেন স্ত্রী-সন্তানকে। রোববার তিতাস কমিউটার ট্রেনে কথা হয় শামসুলের সঙ্গে।

“ঈদের আগে তো ব্যাপক ভিড় হয়। ট্রেনে তো উঠাই যায় না। এজন্য তাদের বাড়ি দিয়ে আসব। আমি বিকেলের ট্রেনেই চলে আসব। ঈদের আগেরদিন আবার বাড়ি যাব।”

পরীক্ষা শেষ, ঢাকায় কোনো কাজ নাই। তাই হল ছেড়ে দিনাজপুরে বাড়ির পথ ধরেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র গোলাম রব্বানী। কবি জসিম উদ্দিন হলের এ ছাত্র একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের আগাম টিকেট কিনেছিলেন।

“প্রতিবার আরও আগে যাই। এবার পরীক্ষা ছিল বলে  যেতে পারিনি। পরীক্ষা শেষে তো ঢাকায় কোনো কাজ নেই। তাই চলে যাচ্ছি। আগে গেলে ঝামেলাও কম হয়।”

ঈদের ছুটি, সঙ্গে গ্রামের বাড়ির পাকা আম-লিচুর টান। এজন্য পরিবার নিয়ে আগেই বাড়ির পথে ছুটছেন কবি নজরুল সরকারি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবদুস সালাম।

“আমাদের গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের পার্বতীপুরে। সেখানে নিজেদের গাছের আম-লিচুসহ অন্যান্য ফল পেকেছে। বাচ্চারা গাছ থেকে ফল পেড়ে খেতে খুব পছন্দ করে। ফল তো পাকা শুরু করেছে। এছাড়া সেখানে গেলে তারা খুব খুশি হয়। এজন্যই আগে যাচ্ছি। আগে গেলে ভিড়ও কম হয়।”

আবদুস সালামের ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে নাহরিন সিফাত স্নেহার মতে, দাদাবাড়ি যাওয়া খুবই ‘এক্সাইটিং’

“হোল ফ্যামিলির সঙ্গে ঈদ করব। আম লিচু খেতে পারব। এছাড়া আমাদের অনেক কাজিন আছে সেখানে। তাদের সঙ্গে খুব মজা হয়। এজন্য দাদাবাড়ি যাওয়া খুবই এক্সাইটিং।”

পরিবারের সদস্যদের জামালপুরগামী অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ট্রেনে তুলে দিতে কমলাপুর এসেছেন নিউজিল্যান্ড ডেইরির কর্মকর্তা সোলাইমান হক মিঠু। মিঠু বলেন, ভিড় এড়াতেই পরিবারকে আগে পাঠাচ্ছেন তিনি।

“ঈদের আগে তো অনেক ভিড় হয়। তখন যাওয়া খুবই কঠিন। এছাড়া বাচ্চাদের স্কুল ছুটি হয়ে গেছে। তারা একটু আগে বাড়ি গিয়ে মজা করুক। আমি ১৪ তারিখ যাওয়ার চেষ্টা করছি।”

রোববার সকাল ১০টা পর্যন্ত ২১টি ট্রেন ছেড়ে গেছে বলে জানান কমলাপুর স্টেশনের ব্যবস্থাপক সিতাংশু চক্রবর্ত্তী।

তিনি বলেন, রোববার সকাল থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোয় ভিড় স্বাভাবিক।

“উপচেপড়া ভিড় এখনও শুরু হয়নি। আশা করছি ১২ তারিখ থেকে সেটা শুরু হবে।”

ট্রেনের সময়সূচিতে জটিলতা নেই দাবি করে তিনি বলেন, “সকালে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোর মধ্যে শুধু সুন্দরবন এক্সপ্রেস ৩০ মিনিট দেরি করেছে। সেটা দেরি করেই স্টেশনে এসেছিল। বাকি ট্রেনগুলো সব ঠিক সময়ে ছেড়েছে।”

এবার ঈদের সময় ঢাকা থেকে প্রতিদিন প্রায় একলাখ যাত্রী বহন করতে পারবে বলে জানান সিতাংশু চক্রবর্ত্তী। তিনি বলেন, অগ্রিম টিকেট ছাড়াও দাঁড়িয়ে যাওয়ার টিকেট বিক্রি করা হবে।

“আমরা প্রতিদিন প্রায় ৭৫ হাজারের মতো টিকেট বিক্রি করেছি। এছাড়া ঈদের আগে যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী কিছু স্ট্যান্ডিং টিকেট দেওয়া হবে। সব মিলিয়ে প্রায় এক লাখ যাত্রী যেতে পারবে প্রতিদিন।”

এবার ট্রেনের ছাদে যেন কেউ ভ্রমণ করতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031