চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এ.বি.এম আজাদ এনডিসি বলেছেন, নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে জনগণের কাঙ্খিত সেবা নিশ্চিত করাই হচ্ছে মুজিববর্ষের প্রেরণা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে সক্রিয়করণের উদ্যোগ নিয়েছেন। মুজিববর্ষের শুরুতে ইউনিয়ন পরিষদকে (ইউ.পি) আরো শক্তিশালী ও কার্যকর করতে হলে চেয়ারম্যান, সচিব ও সদস্যগণকে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। এলাকার পরিবেশ নষ্ট না কওে ইউনিয়নকে উন্নয়নের ছোঁয়ায় সম্পৃক্ত রাখতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদের ম্যানুয়েল মেনে কাজ করলে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা আরো বেগবান হবে। সরকার শক্তিশালী হলে জনগণ উপকৃত হবে। ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ব্যতীত অন্য কোন জনপ্রতিনিধির আদালতের বিচারিক ক্ষমতা নেই। এটা বড় সম্মানের বিষয়। ইউপি চেয়ারম্যানগণ যখন আদালতে বসেন তখন তাদেরকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ হতে হবে এবং আত্মীয়-স্বজন ভেবে পক্ষপাত করা যাবে না। আজ ৩ মার্চ ২০২০ ইং মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের আওতায় ইউনিয়ন পরিষদকে অধিকতর জনবান্ধব ও কার্যকর করার লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সচিবদের তিন দিন ব্যাপী প্রশিক্ষণসহ পারস্পরিক শিখন কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্টানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন প্রশিক্ষণের আয়োজন করেন।
তিনি বলেন, এক সময় গ্রাম আদালতে সাধারণ জনগণ তাদের ন্যায়-বিচার থেকে বঞ্চিত হতো। ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের পক্ষপাতমূলক আচরণের কারণে গ্রাম আদালতের প্রতি অনীহা প্রকাশ করতো। সংগঠিত সমস্যা নিয়ে মানুষ ন্যায় বিচার না পেয়ে থানা কিংবা আদালতের শরণাপন্ন হয়। ফলে দেশের আদালতগুলোতে মামলার জট লেগে থাকে এবং মামলাগুলো নিষ্পত্তি করতে অনেকদিন পর্যন্ত সময় লাগে। এতে করে মামলার বাদী-বিবাদী হয়রানির শিকার ও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের গ্রাম আদালতগুলোকে ঢেলে সাজিয়েছেন। কেউ কারো আত্মীয় না ভেবে ও স্বজনপ্রীতি থেকে বিরত থেকে প্রত্যেক ইউপি চেয়ারম্যান-সদস্যদেরকে নিরপেক্ষ থেকে গ্রাম আদালতে সকলের জন্য ন্যায়-বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। গ্রাম আদালতে জনপ্রতিনিধিকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থেকে বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। এজন্য ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবদেরকে যুগোপযুগী প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হচ্ছে।সরকারি সেবা জনগণের দৌঁড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে প্রত্যেককে নিজ ¬িনজ অবস্থান থেকে আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তাহলে সরকারের ভিশন ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশ, ২০৩০ সালে এসডিজি অর্জন ও ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব হবে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেনের সভাপতিত্বে ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নুর জাহার আক্তার সাথীর সঞ্চালনায় অনুষ্টিত প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্টানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার) ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজির (উপ-সচিব)। বক্তব্য রাখেন বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোমেনা আক্তার ও ইউএনডিপি’র ডিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলিটেটর উজ্জ্বল কুমার দাস চৌধুরী। প্রশিক্ষণে পটিয়া, বাঁশখালী ও চন্দনাইশ উপজেলার ৩৯ জন ইউপি চেয়ারম্যান ও ৩৯ জন ইউপি সচিব অংশ নেন।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, আলোকিত মুজিববর্ষে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় প্রতিটি ইউনিয়নে কমপক্ষে একটি সোলার প্যানেল সড়ক বাতি স্থাপন, ইউপি’র সবচেয়ে সবচেয়ে দৃশ্যমান স্থানে ১৯১ টি মুজিববর্ষ স্মারক বৃক্ষরোপন, সুন্দর দৃশ্যমান স্থানে ২০২০ টি মুজিববর্ষ স্মারক বৃক্ষরোপন, নারীর ক্ষমতায়ন ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে গ্রামীন মহিলাদেও সেলাই ও সুচকর্ম প্রশিক্ষণসহ ২০২০টি সেলাই মেশিন সরবরাহ করা হবে। বাংলাদেশ গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ প্রকল্পের আওতায় ৪৬ জন ইউপি চেয়ারম্যান, ৪৬ জন প্যানেল চেয়ারম্যান, ৪৬ জন ইউপি সচিব, ৪৬ জন গ্রাম আদালত সহকারী ও ৪৬৫ জন ওয়ার্ড সদস্যদেও মৌলিক ও রিফ্রেশার্স প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া জিও-এনজিও, সাংবাদিক, বিচার ও পুলিশ বিভাগের প্রতিনিধিদেও নিয়ে মতবিনিময় করা হয়েছে। ২০২০ সালের এসব কার্যক্রম পূনরায় করা হবে। ১৯১টি ইউনিয়নে গ্রাম আদালত অপারেশনলি ম্যানুয়াল এবং গ্রাম আদালত সহজপাঠ বই সরবরাহ করা হয়েছে।
