এই চার বাংলাদেশি হলেন- মিজানুর রহমান (৩১), রুবেল মিয়া (২৬), মো. জাবেদ কায়সার হাজি নুরুল ইসলাম সওদাগর (৩০) ও ইসমাইল হাওলাদার সোহেল (২৯)।
তারা চারজনই গত ৩১ মে সিঙ্গাপুরের আদালতে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে সহায়তার জন্য কয়েক হাজার মার্কিন ডলার সংগ্রহ ও তা সরবরাহের কথা স্বীকার করে নেন।
দুই পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শুনে মঙ্গলবার আদালত ওই চারজনের সাজা ঘোষণা করে বলে স্ট্রেইটস টাইম ও চ্যানেল নিউজ এশিয়ার খবর।
পত্রিকা দুটি লিখেছে, ওই দলের নেতা মিজানুর রহমানকে আদালত পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে।
এছাড়া সোহেলকে দুই বছর এবং বাকি দুজনকে ৩০ মাসের সাজা খাটতে হবে সিঙ্গাপুরে।
এই চার বাংলাদেশির সবাই কাজ নিয়ে সিঙ্গাপুরে গিয়ে জঙ্গিবাদে জড়িয়েছেন বলে সে দেশের পুলিশের ভাষ্য। এদের মধ্যে মিজানুর এস-পাসধারী মাঝারি পর্যায়ের দক্ষ কর্মী, বাকিরা সবাই ওয়ার্ক পারমিটধারী আধাদক্ষ শ্রমিক হিসেবে সিঙ্গাপুরে ছিলেন।
প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আদালতে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গি দল আইএসের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটার পর গত মার্চে মিজানুর সিঙ্গাপুরে প্রবাসী কয়েকজন বাংলাদেশিকে নিয়ে একটি দল গড়েন, যার নাম দেওয়া হয় ইসলামিক স্টেট ইন বাংলাদেশ।
গত এপ্রিলে মোট আট বাংলাদেশিকে সিঙ্গাপুরের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আইনে আটক করার পর ছয়জনকে জঙ্গিবাদে মদদ দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করে দেশটির আদালত। তাদের মধ্যে ওই চারজন হলেন প্রথম, যাদের সিঙ্গাপুরের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সাজা দেওয়া হল।
অভিযুক্ত বাকি দুই বাংলাদেশি দৌলতুজ্জামান (৩৪) ও লিয়াকত আলী মামুন (২৯) আদালতে জঙ্গি অর্থায়নে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাদের বিচারের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
প্রসিকিউটরকে উদ্ধৃত করে চ্যানেল নিউজ এশিয়ার খবরে বলা হয়, সস্তা সামগ্রী দিয়েও বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা ঘটিয়ে ফেলা সম্ভব। সেজন্য যে খরচ সন্ত্রাসীদের হবে, তা হয়তো নগণ্য। কিন্তু সমাজের যে ক্ষতি তাতে হবে, তার দাম অনেক। সিঙ্গাপুরকে অবশ্যই জঙ্গিবাদ ও তাতে অর্থায়নের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।”
আর্মার্ড ট্রাকে করে চার বাংলাদেশিকে নেওয়া হয় আদালতে। ছবি: স্ট্রেইটস টাইম
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে বলা হয়, আইএসএ এর যুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য মিজানুর তিন দফা চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। তুরস্ক ও আলজেরিয়া তার ভিসার আবেদন নাকচ করে দেয়। এরপর তিনি কাজ নিয়ে সিঙ্গাপুরে যান। দোষী সাব্যস্ত অন্যদের তিনিই দলভুক্ত করেন।
সিঙ্গাপুর পুলিশের বরাত দিয়ে চ্যানেল নিউজ এশিয়ার খবরে বলা হয়, মিজানুর আইএসে যোগ দিয়ে একজন মুজাহিদ হওয়ার এবং সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ‘অবিশ্বাসীদের’ ধ্বংস করার ‘স্বপ্ন দেখছিলেন।
আদালতে শুনানিতে বলা হয়, মিজানুর ও তার দল নিয়মিত বুন লে পার্ক এবং ওয়াটারফ্রন্ট পার্কে জড়ো হয়ে সেই ‘স্বপ্ন বাস্তবায়নের’ জন্য পরিকল্পনা করতেন। দেশে ফিরে সন্ত্রাসী হামলা চালানোরও পরিকল্পনাও তাদের ছিল।
আদালতের নথির বরাত দিয়ে স্ট্রেইটস টাইমস লিখেছে, ওই দলের প্রত্যেকের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব ভাগ করা ছিল। মিজানুর ছিলেন দলনেতা, মামুন তার ডেপুটি। রুবেলের দায়িত্ব ছিল কোষাধ্যক্ষের আর জাবেদের কাজ ছিল জনসংযোগের। এছাড়া দৌলতুজ্জামান ও সোহেলকে দলের নিরাপত্তা ও সামরিক শাখার প্রধান বানিয়েছিলেন মিজানুর।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, জাবেদের কাছে জঙ্গি কর্মকাণ্ডের জন্য সংগ্রহ করা এক হাজার ৩৬০ মার্কিন ডলার ছিল, যার মধ্যে এক হাজার ৬০ ডলার সংগ্রহ করে দিয়েছিলেন রুবেল। ওই দলের সবাই নিজেরাও ৬০ থেকে ৫০০ ডলার পর্যন্ত চাঁদা দিয়েছেন ‘জিহাদের’ জন্য।
গত এপ্রিলে ওই ছয়জনের সঙ্গে সোহাগ ইব্রাহিম (২৭),শরিফুল ইসলাম (২৭) নামে আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করে সিঙ্গাপুরের পুলিশ। তবে সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আট বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তারের খবর প্রকাশ করে মে মাসের শুরুতে।
তাদের গ্রেপ্তারের পর সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, মিজানুরের কাছে বাংলাদেশের সরকার ও সামরিক কর্মকর্তাদের একটি তালিকা পাওয়া গেছে, যাদের উপর হামলার পরিকল্পনা তারা করেছিল।
“তাদের ইরাক বা সিরিয়ায় যাওয়ার ভাবনা থাকলেও সেখানে যাওয়া কঠিন মনে হওয়ায় মত পাল্টে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে খেলাফত কায়েমের পরিকল্পনা করেন।”
এই গোষ্ঠীর অন্তত আরও দুজন সদস্য বাংলাদেশে রয়েছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
মিজানুরের কাছ থেকে বোমা তৈরি ও অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশিকা এবং জিহাদের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে পুস্তিকা উদ্ধারের কথা জানিয়ে সেই বিবৃতিতে বলা হয়, “তারা দল ভারী করতে বাংলাদেশি নাগরিকদের সদস্য করার পাশাপাশি বাংলাদেশে হামলার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে অর্থও সংগ্রহ করতেন, যেগুলো জব্দ করা হয়েছে।”
‘জিহাদি জিনিসপত্র’ পাওয়ায় ও ধর্মের জন্য সশস্ত্র হামলা ‘সমর্থন’ করায় আরও পাঁচ বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করার কথা জানানো হয় ওই বিবৃতিতে। তবে তদন্তে আইএসবির সঙ্গে সম্পৃক্ততা না মেলায় গত এপ্রিলেই তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়।
ওই পাঁচজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে বাংলাদেশের পুলিশ।
