জালিয়াতি করে ফারমার্স ব্যাংক থেকে চার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের মামলায় সিনহাসহ ১১ আসা‌মির বিরু‌দ্ধে গ্রেপ্তারি প‌রোয়ানা

বিচারপতি সিনহা বাদে মামলার অপর আসামিরা হলেনফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতী, সাবেক এমডি কে এম শামীম, সাবেক এসইভিপি গাজী সালাহউদ্দিন, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাফিউদ্দিন আসকারী, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, টাঙ্গাইলের বাসিন্দা মো. শাহজাহান, একই এলাকার নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা, রনজিৎ চন্দ্র সাহা তার স্ত্রী সান্ত্রী রায়

বিচারপতি সিনহা গত দুই বছর ধরে অবস্থান করছেন যুক্তরাষ্ট্রে। আসামিদের মধ্যে কেবল বাবুল চিশতী অন্য মামলায় কারাগারে আছেন। ঋণ জালিয়াতির এই মামলায় এখনও তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি বলে আদালত তার বিরুদ্ধেও পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছে। রীতি অনুযায়ী তা এখন হাজতি পরোয়ানা হিসেবে গণ্য হবে

দুদক কর্মকর্তা বেনজির আহমেদ গত ডিসেম্বর এই ১১ জনকে আসামি করে ঋণ জালিয়াতির মামলার  অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনে এস কে সিনহার ব্যাংক হিসাবের চার কোটি টাকা জব্দ করা হয়

অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ফারমার্স ব্যাংকে ভুয়া ঋণ সৃষ্টি করে সেই টাকা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর, উত্তোলন  পাচার করেছেন, যা দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের () ধারা এবং ২০১২ সালের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ()() ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ

দুদকের করা এই মামলায় বাবুল চিশতীর নাম না থাকলেও অভিযোগপত্রে তাকে নতুন করে আসামি করা হয়। আর এজাহারে ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মো. জিয়া উদ্দিন আহমেদকে আসামি করা হলেও অভিযোগপত্রে মামলার দায় থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। বিচারক রোববার সেই আবেদন মঞ্জুর করেন

বিচারপতি সিনহা নানা নাটকীয় ঘটনার মধ্যে দুই বছর আগে বিদেশে পাড়ি জমানোর পর দুদক অভিযোগ পায়, তিনি ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ব্যবসায়ী পরিচয়ে দুই ব্যক্তির নেওয়া ঋণের চার কোটি টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে নিয়েছিলেন

অভিযোগ পেয়ে ওই বছরই তদন্তে নামে দুদক। দীর্ঘ তদন্তে পর চলতি বছরের ১০ জুলাই সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন

মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের নভেম্বর আসামি শাহজাহান নিরঞ্জন চন্দ্র  ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখায় আলাদা দুইটি অ্যাকাউন্ট খোলেন। ব্যবসা বাড়ানোর জন্য পরদিন তারা ওই ব্যাংক থেকে দুই কোটি টাকা করে মোট চার কোটি টাকা ঋণের আবেদন করেন

তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং ঋণের আবেদনে উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ৫১ নম্বর বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়, যার মালিক ছিলেন তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা

ঋণের জামানত হিসেবে আসামি রনজিৎ চন্দ্রের স্ত্রী সান্ত্রী রায়ের নামে সাভারের ৩২ শতাংশ জমির কথা উল্লেখ করা হয় ঋণের আবেদনে। ওই দম্পতি এস কে সিনহার পূর্ব পরিচিত ঘনিষ্ঠ বলে উল্লেখ করা হয়েছে মামলার এজাহারে

দুদক বলছে, ব্যাংকটির তৎকালীন এমডি কে এম শামীম কোনো ধরনের যাচাইবাছাই ছাড়াই, ব্যাংকের নিয়মনীতি না মেনে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঋণ দুটি অনুমোদন করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, নভেম্বর ঋণের আবেদন হওয়ার পরঅস্বাভাবিক দ্রুততারসঙ্গে তা অনুমোদন করা হয়। পরদিন মোট চার কোটি টাকার দুটি পেঅর্ডার ইস্যু করা হয় এস কে সিনহার নামে। নভেম্বর সোনালী ব্যাংকের সুপ্রিম কোর্ট শাখায় এস কে সিনহার অ্যাকাউন্টে জমা হয়

পরে বিভিন্ন সময়ে ক্যাশ, চেক পেঅর্ডারের মাধ্যমে ওই টাকা উত্তোলন করা হয়। এর মধ্যে এস কে সিনহার ভাইয়ের নামে শাহজালাল ব্যাংকের উত্তরা শাখার অ্যাকাউন্টে দুটি চেকে দুই কোটি ২৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকা স্থানান্তর করা হয় ওই বছরের ২৮ নভেম্বর

এজাহারে বলা হয়, “আসামি রনজিৎ চন্দ্র ঋণ দ্রুত অনুমোদনের জন্য প্রধান বিচারপতির প্রভাব ব্যবহার করেন। রনজিৎ চন্দ্রের ভাতিজা হলেন ঋণ গ্রহীতা নিরঞ্জন এবং অপর ঋণ গ্রহীতা শাহজাহান রনজিৎ ছোটবেলার বন্ধু। ঋণ গ্রহীতা দুইজনই অত্যন্ত গরিব দুস্থ। তারা কখনও ব্যবসাবাণিজ্য করেননি।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং কিছু পর্যবেক্ষণের কারণে ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে ২০১৭ সালের অক্টোবরের শুরুতে ছুটিতে যান তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। পরে বিদেশ থেকেই তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন; তিনি এখন আছেন যুক্তরাষ্ট্র হয়ে কানাডায়

তবে দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে আসা বিচারপতি সিনহা গতবছর যুক্তরাষ্ট্রে বসেই একটি বই প্রকাশ করেন। তাতে তিনি দাবি করেন, তাকে পদত্যাগে বাধ্য করে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে

বিচারপতি সিনহা ছুটি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ পাওয়ার কথা সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031