দিনভর জঙ্গল-নদীতে অবস্থান রাতে অনুপ্রবেশ সীমান্তে বিজিবির নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বলয় তৈরী

দিনভর জঙ্গল-নদীতে অবস্থান রাতে অনুপ্রবেশ
সীমান্তে বিজিবির নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বলয় তৈরী

॥ মো.আবুল বশর নয়ন, নাইক্ষ্যংছড়ি ॥ প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের মংডুকে নির্যাতন ও বর্বরতা বেড়েছে। গত ৯ নভেম্বর কঠোর অভিযান শুরুর পর দুই দিন বিরতী রেখে গত শুক্রবার রাতে মংডুর হাতিপাড়ায় তান্ডব চালায় সেনাবাহিনী। এতে অন্তত ১৫টি গ্রাম নিশ্চিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। পরদিন শনিবারও আশপাশের গ্রামগুলোতে তান্ডব চলে। যার কারণে ভীতসন্ত্রস্ত রোহিঙ্গারা প্রতিদিন বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ২৮০ কিমি: সীমান্তের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে নাফ নদীর ৬৩ কিমি: জল সীমান্ত ছাড়াও টেকনাফ-উখিয়া ২২ নং পিলার থেকে ২৯নং পিলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে। মিয়ানমারের সাথে বিশাল সীমান্ত থাকা নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় টেকনাফের চেয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অনেকটা কম। তারপরও ঘুমধুম ৩১নং সীমান্ত পিলার থেকে নাইক্ষ্যংছড়ির দোছড়ি সীমান্তের ৫০নম্বর পিলার এলাকায় নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বলয় তৈরী করে রেখেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সদস্যরা। প্রতিটি বিওপিতে বাড়ানো হয়েছে সদস্য সংখ্যা। পাশাপাশি বিজিবির উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা প্রতি মুহুর্তের খবর রাখছেন এমনটি জানিয়েছেন ঘুমধুম সীমান্তে দায়িত্বপালনরত বিজিবির এক নায়েব সুবেদার।
গত দুই দিন সীমান্তের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ ভাবে নিশ্চিন্ন করে দেওয়ার লক্ষ্যে সেদেশের সেনাবাহিনী ও বিজিপি তান্ডবলীলা চালাচ্ছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গা নারীদের পিতা-মাতা ও ভাই বোনের সম্মুখেই ধর্ষণ করছে। ফলে জাতিগত কারণে রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রতি মানবিকতা দেখাচ্ছে বাংলাদেশ সীমান্তে বসবাসরত নাগরিকরা। তবে এ ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে একটি মহল ব্যবসা শুরু করেছে বলে জানান ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ। তিনি বলেন- অবৈধ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি নির্ঘুম রাত্রীযাপন করছে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে স্থানীয়দের তিনি সচেতনতার সাথে এ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য সর্বশ্রেণীর মানুষকে বলেছেন। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য, সীমান্তের কিছু মানুষ অর্থের বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে এনে নিরাপদে আশ্রয় দিচ্ছে বলে দাবী করেন দেশের শেষ সীমান্তের এ জনপ্রতিনিধি।
জানা গেছে, ঘুমধুম, তুমব্রু ও বাইশফাড়ি সীমান্তের ওপারে প্রতিদিন অসংখ্য রোহিঙ্গা নাগরিক বিভিন্ন জঙ্গলে ও ক্ষেত খামারে কাজ করার ভান করে রাতের আধারে এপারে চলে আসছে। আর এ কাজে বাংলাদেশ সীমান্তের জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি বসবাসরত বাসিন্দারা ঐসব রোহিঙ্গাদের সহায়তা করে চলছে।
জানা গেছে, টেকনাফের পর মিয়ানমারের সাথে সহজ যাতায়ত পথ হচ্ছে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার আশারতলী, চাকঢালা, লেমুছড়ি। এ সীমান্তেও ৩১ ও ৫০ বিজিবি ব্যটালিয়নে পূর্বের তুলনায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এদিকে বিভিন্ন সময় মিথ্যা সংবাদের মাধ্যমে বিভ্রান্তে পড়ছেন বাংলাদেশের সীমান্তে নিয়োজিত বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। মিয়ানমার অভ্যান্তরে সংঘটিত ঘটনার জের ধরে বাংলাদেশে বসবাসরত অন্যধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠীকে নিরাপত্তার জন্য নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে প্রশাসন। গত ক’দিন পূর্বে পার্বত্য নাইক্ষ্যংছড়িতে চাক সম্প্রদায়ের উপর হামলার পরিকল্পনা এবং সোমবার সকালে বিজিপির গুলিতে বিজিবি সদস্যের মৃত্যু এমন মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ ছড়িয়ে একটি মহল ফায়দা হাসিলের তৎপরতা চালাচ্ছে।
এ বিষয়ে রবিবার সন্ধ্যায় ঘুমধুম সীমান্তে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের এক কর্মকর্তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন- মিয়ানমারের অভ্যান্তরীণ ইস্যুকে পুজি করে যাতে কোন মহল ফায়দা হাসিল করতে না পারে সেজন্য মিডিয়াকে সজাগ থাকতে হবে।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031