নিজামীর ফাঁসি বহাল

নিজামীর ফাঁসি বহাল

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ

নিজামীর করা রিভিউ (রায় পুনর্বিবেচনা) আবেদন খারিজ করে বৃহস্পতিবার (০৫ মে) রায় দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। অন্য তিন বিচারপতি হলেনবিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

সর্বোচ্চ আদালতের সর্বশেষ রায়ের মধ্য দিয়ে শেষ হলো মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী কিলিং স্কোয়াড আলবদর বাহিনীর সর্বোচ্চ নেতা নিজামীর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আইনি লড়াই। তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রায় কার্যকরের বিষয়টিও চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছালো। সর্বশেষ ধাপে এখন কেবলমাত্র রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন তিনি। প্রাণভিক্ষা না চাইলে বা চাওয়ার পর আবেদন নাকচ হলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে আর কোনো বাধা থাকবে না

আইন অনুসারে তখন সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যেকোনো সময় নিজামীর ফাঁসির রায় কার্যকর করতে পারবে কারা কর্তৃপক্ষ

গত মঙ্গলবার (০৩ মে) রিভিউ আবেদনটির শুনানি শেষে রায়ের দিন বৃহস্পতিবার ধার্য করেন একই আপিল বেঞ্চ

সর্বোচ্চ আদালতে শুনানি করেন আসামিপক্ষে নিজামীর প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন এবং রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম

গত ২৯ মার্চ ৭০ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনটি করেন নিজামীর আইনজীবীরা। এতে মোট ৪৬টি কারণ দেখিয়ে আপিল বিভাগের ফাঁসির রায় বাতিল করে খালাস অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আরজি জানানো হয়েছে

গত ১০ এপ্রিল রিভিউ আবেদনটি কার্যতালিকায় এলেও আসামিপক্ষের সময়ের আবেদনে দুদফা পিছিয়ে যায় শুনানির দিন

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে গত ০৬ জানুয়ারি নিজামীর মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার সংক্ষিপ্ত আকারে চূড়ান্ত রায় দেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির একই আপিল বেঞ্চ

গত ১৫ মার্চ আপিল মামলাটির ১৫৩ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন সর্বোচ্চ আদালত

রায়টি রাতেই বিচারিক আদালতে গেলে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল১। এর পর পরই মৃত্যু পরোয়ানাসহ পূর্ণাঙ্গ রায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ স্বরাষ্ট্র আইন মন্ত্রণালয়, ঢাকার ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট (জেলা প্রশাসক) কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়

পরদিন ১৬ মার্চ সকালে কাশিমপুর কারাগার পার্ট এর কনডেম সেলে থাকা নিজামীকে মৃত্যু পরোয়ানা পূর্ণাঙ্গ রায় পড়ে শোনানো হয়

নিজামীকে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড এবং হত্যাগণহত্যা ধর্ষণসহ সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) প্রমাণিত ৮টি মানবতাবিরোধী অপরাধের মধ্যে ৪টিতে ফাঁসি ৪টিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে ৩টিতে ফাঁসি ২টিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। অন্য তিনটিতে চূড়ান্ত রায়ে দণ্ড থেকে খালাস পেয়েছেন নিজামী, যার মধ্যে একটিতে ফাঁসি দুটিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ ছিল ট্রাইব্যুনালের রায়ে

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের নিখিল পাকিস্তানের সভাপতি হিসেবে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী কিলিং স্কোয়াড আলবদর বাহিনীর সর্বোচ্চ নেতা ছিলেন নিজামী। প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা ছাড়াও সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটি (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) হিসেবে আলবদর বাহিনী ছাত্রসংঘের অপরাধের দায়ও তার বিরুদ্ধে প্রমাণিত হয়েছে বিচারিক আপিল আদালতের রায়ে

নিজামীর বিরুদ্ধে মোট ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে ৮টি অর্থা , , , , , , ১৬ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছিল ট্রাইব্যুনালের রায়ে।

প্রমাণিত চারটি অর্থা সাঁথিয়া উপজেলার বাউশগাড়িসহ দুটি গ্রামে প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে গণহত্যা প্রায় ৩০৪০ জন নারীকে ধর্ষণ ( নম্বর অভিযোগ), করমজা গ্রামে ১০ জনকে গণহত্যা, একজনকে ধর্ষণসহ বাড়িঘরে লুটপাট অগ্নিসংযোগ ( নম্বর অভিযোগ), ধুলাউড়ি গ্রামে ৫২ জনকে গণহত্যা ( নম্বর অভিযোগ) এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (১৬ নম্বর অভিযোগ) দায়ে নিজামীকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছিল

এর মধ্যে নম্বর অভিযোগের দায় থেকে নিজামীকে খালাস দিয়ে বাকি তিনটিতে ফাঁসি বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ

অন্য চারটি অর্থা পাবনা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাওলানা কছিমুদ্দিন হত্যা ( নম্বর অভিযোগ), মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে পাকিস্তানি সেনা, রাজাকার আলবদর বাহিনীর ক্যাম্পে নিয়মিত যাতায়াত মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র ( নম্বর অভিযোগ), বৃশালিখা গ্রামের সোহরাব আলী হত্যা ( নম্বর অভিযোগ) এবং রুমী, বদি, জালালসহ সাত গেরিলা যোদ্ধা হত্যার প্ররোচনার ( নম্বর অভিযোগ) দায়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল

এর মধ্যে নম্বর অভিযোগের দায় থেকে চূড়ান্ত রায়ে খালাস পেয়েছেন নিজামী। বাকি দুটিতে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ বহাল রয়েছে

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি আনোয়ারুল হক বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন নিজামীকে

রায়ের বিরুদ্ধে ২৩ নভেম্বর আপিল করেন নিজামী। ছয় হাজার ২শ৫২ পৃষ্ঠার আপিলে মোট ১শ৬৮টি কারণ দেখিয়ে ফাঁসির আদেশ বাতিল করে খালাস চেয়েছিলেন তিনি

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930