॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ রাঙ্গামাটি প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সভাপতি, দৈনিক ইত্তেফাক রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত সর্বপ্রথম সংবাদপত্র দৈনিক গিরিদর্পণ সম্পাদক পাহাড়ের চারণ সাংবাদিক আলহাজ্ব একেএম মকছুদ আহমেদ এর নামাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারী) রাত সাড়ে ৯টার পর তিনি রাঙ্গামাটি জেলারেল হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে, দুই মেয়েসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন। শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারী) সকাল দশটায় রিজার্ভ বাজার শহিদ আবদুস শুক্কুর স্টেডিয়ামে মরহুমের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ, সাবেক পৌর মেয়র সাইফুল ইসলাম চৌধুরী, জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক আব্দুল আলীম, প্রেসক্লাব সভাপতি সাখাওয়াৎ হোসেন রুবেল, মরহুমের ছোট ভাই হুমায়ুন কবির, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য হাবিব আজমসহ বিভিন্ন সংগঠন ও গণমাধ্যমের সংবাদকর্মী, আত্মীয়-স্বজন, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সরকারী উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। জানাজায় ইমামতি করেন, জেলা আহলে সুন্নাতের সভাপতি আলহাজ্ব মাওলানা এম এ মুস্তফা হেজাজী। জানাজা শেষে তাঁর মরদেহ গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে সকাল নয়টায় সর্বস্তরের লোকজনের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য রাঙ্গামাটি প্রেসক্লাবের সামনে তাঁর লাশ রাখা হয়। সেখানে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও সাধারণ লোকজন কফিনে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এদিকে সাংবাদিক এ কে এম মকছুদ আহমেদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অর্ন্তবর্তী সরকারের পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। এছাড়া রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ আতিয়ার রহমান, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার, জেলা বিএনপি’র সভাপতি দীপন তালুকদার দীপু দৈনিক গিরিদর্পণ ও সাপ্তাহিক বনভূমি সম্পাদকের প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং তাঁর রুহের মাগফেরাত কামনা করেন। সেই সাথে তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
এর আগে জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত শোক প্রকাশ করতে গিয়ে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বলেন, সাবেক জেলা প্রশাসক যখন চলে যান তিনি আমাকে বলেন, এখানে মকছুদ সাহেবের নামে একজন ভদ্রলোক আছে এবং দৈনিক গিরিদর্পণ নামে একটি পত্রিকা আছে তার সাথে যোগাযোগ রাখো। তিনি অত্যন্ত অমায়িক এবং বন্ধুসুলফ ব্যক্তি সেই ভাবে আমাকে কথাগুলো বলে ছিলেন। আপনাদের এই রাঙ্গামাটি এক সময় অত্যন্ত দূর্গম ছিলো। এই দূর্গম এলাকায় এসে তিনি সাংবাদিকতাকে ধরে রেখেছেন তার মৃত্যু পর্যন্ত যা বিশাল একটি ব্যাপার। এখানে জনমানুষের সাথে দলমত নির্বিশেষে সকলে মানুষের সাথে যে অকৃতিম সম্পক আত্মার সর্ম্পক আর এই সকল সর্ম্পক ছিন্ন করে মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছেন। আমরা গতকাল শুনার পরে আমি কিছুক্ষণ স্বব্ধ হয়ে গেছি। তিনি মিটিমিটি করে হাসতেন যা খুবই অমায়িক হাসি আমাদের নবীজির হাসি যে ভাবে বণর্ণা শুনতাম যে মুখের একপাশে দাঁত বেড় করে অল্প হাসতেন আমার এই মকছুদ সাহেবের হাসি আমাদের নবীজির সেই হাসির সাথে কিছুটা হয়েছিলো কোন চাওয়া পাওয়া ছিলো না। আমরা আজ তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া ও মাকফেরাত কামনা করছি। সেই সাথে তার পরিবার শোকসপ্তক পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদন জ্ঞাপন করছি।
রাঙ্গামাটি প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাখাওয়াৎ হোসেন রুবেল বলেন, আমরা একসঙ্গে দীর্ঘদিন পার্বত্য এলাকায় সাংবাদিকতা করেছি। রাঙ্গামাটি প্রেস ক্লাব শুরু থেকে তিনি অতোপ্রতো ভাবে জড়িত ছিলেন। আর প্রেস ক্লাবের সদস্যদের তিনি অত্যন্ত ভালোবাসতেন। সত্যি আমরা তাঁর মৃত্যুতে পার্বত্য চট্টগ্রামের সাংবাদিক সমাজ একজন অভিভাবক হারালো। যা কোন দিন পুরণ হওয়ার নয়।
প্রসঙ্গত, একেএম মকছুদ আহমেদ ৫৬ বছর ধরে সাংবাদিকতা পেশায় রয়েছেন। তিনি ১৯৭৯ সালে প্রথম সাপ্তাহিক বনভূমি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এরপর ১৯৮৩ সালে দৈনিক গিরিদর্পণ প্রতিষ্ঠা করেন। ৪২ বছর ধরে তিনি পত্রিকাটির সম্পাদক হিসেবে আছেন। দৈনিক গিরিদর্পণের সম্পাদক ও প্রকাশকের দায়িত্ব ছাড়াও দৈনিক ইত্তেফাকের রাঙ্গামাটি জেলা প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
কর্মজীবনে তিনি বিশ্বগণমাধ্যম বিবিসি, রয়টার্স, এপি সহ বাংলাদেশ বেতারে কাজ করেন। রাঙ্গামাটি থেকে তার সম্পাদিত ও প্রকাশিত পত্রিকা দৈনিক গিরিদর্পন ও সাপ্তাহিক বনভূমি তিন যুগের বেশি সময় ধরে পার্বত্য তিন জেলা রাঙ্গামাটি খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলা সদরসহ প্রত্যন্ত পাহাড়ী উপজেলা অঞ্চলে অসংখ্য সংবাদকর্মী ও সাহিত্যিক ও কবি সৃষ্টি হয়েছে। দৈনিক গিরিদর্পণ ও সাপ্তাহিক বনভূমি পাহাড়ের সাংবাদিকতার আতুরঘর বলেও স্বীকৃত।
