পার্বত্য শান্তিচুক্তি ১৯তম বর্ষপূতিতে সংবাদ সম্মেলন পাহাড়ের সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের সম্ভাবনা ‘নস্যাৎ’ হতে চলেছে ————সন্তু লারমা

পার্বত্য শান্তিচুক্তি ১৯তম বর্ষপূতিতে সংবাদ সম্মেলন
পাহাড়ের সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের
সম্ভাবনা ‘নস্যাৎ’ হতে চলেছে
————সন্তু লারমা
পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে বিভিন্ন সময় সরকার অসত্য বক্তব্য ও প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে পাহাড়ের সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের সম্ভাবনা ‘নস্যাৎ’ হতে চলেছে বলে অভিযোগ করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় সন্তু লারমা ওরফে সন্তু লারমা।
বুধবার রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি চুক্তি বাস্তকবায়নে বিভিন্ন সরকারের ‘গড়িমসির’ কথা তুলে ধরে বলেন, “দেশ-বিদেশের জনমতকে বিভ্রান্ত করতে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৪৮টি ধারা ইতিমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে’ বলে অসত্য বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে। বস্তুত মাত্র ২৫টি ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে।” এর ফলে পার্বত্যবাসীর অধিকার সম্পর্কে সরকারের ‘চরম অনাগ্রহ’ প্রমাণিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন সন্তু লারমা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরার সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিশিষ্ট কলামিস্ট ও লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, আইইডির নির্বাহী পরিচালক নুমান আহমেদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম চৌধুরী রূপম।
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিকে নানাভাবে পদদলিত করে চলেছে। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম অধ্যুষিত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশেষ শাসন ব্যবস্থার মর্যাদা চিরতরে ক্ষন্ন করার পাঁয়তারা চলছে।” এর ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি ‘উদ্বেগজনক ও নিরাপদহীন’ হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
পার্বত্য ভূমি কমিশনের কার্যক্রম শুরু হওয়া এবং সেনাবাহিনী পরিচালিত ‘অপারেশন উত্তরণ’ চালু থাকার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সন্তু লারমা বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামের সামগ্রিক পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। পার্বত্যবাসীরা, বিশেষ করে জুম্ম জনগণ নিরাপত্তাহীন ও অনিশ্চিত এক চরম বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে কঠিন জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছে। জুম্ম জনগণ এই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে চায়।”
কয়েক দশকের সশস্ত্র সংঘাতের পর ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করে সন্তু লারমার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। চুক্তির ১৯তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট এবং ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চুক্তিবিরোধী নানা কর্মাকান্ডও তুলে ধরেন সন্তু লারমা।
শান্তিচুক্তির সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষায় পুলিশ অ্যাক্ট, পুলিশ রেগুলেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশনসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রযোজ্য অন্যান্য আইন সংশোধন; আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের কার্যাবলি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে যথাযথভাবে হন্তান্তর, অপারেশন উত্তরণসহ সকল অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার ও স্থানীয় পার্বত্য পুলিশ বাহিনী গঠন এবং প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থী ও আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন, যথাযথ ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি ও সেটেলার বাঙালিদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সম্মানজনক পুনর্বাসনের দাবি জানান তিনি।
এসব দাবিসহ জনসংহতি সমিতির পূর্বঘোষিত ১০ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে হরতাল, অবরোধসহ অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা পুনরায় দেন সভাপতি সন্তু লারমা।
লিখিত বক্তব্যে তিনি প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজ চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে এগিয়ে আসেনি বলেও অভিযোগ করেন।
সংবাদে উপস্থিত গবেষক ও কলামনিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ এ অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, “যে সংবেদনশীলতা নিয়ে কাজ করার দরকার ছিল, আমরা নাগরিক সমাজ সেভাবে করিনি। অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলোও সেভাবে কাজ না করে উল্টো তাদের নিয়ে রাজনীতি করেছে মাত্র।”
চুক্তির ধারা বাস্তবায়নে সংখ্যাগত হিসাবে না গিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031