॥ মিল্টন বাহাদুর ॥ পার্বত্যাঞ্চলে এবছর মৌসুমী ফলের বাম্পার ফলন হয়েছে। চারদিকে রসালো ফলের ঘ্রাণে মাতোয়ারা সবাই। স্থানীয়ভাবে চাহিদা মিটিয়ে মৌসুমী ফল যাচ্ছে চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। এসব ফলের মধ্যে রয়েছে স্থানীয় ও উন্নত জাতের লিচু, কাঁচা আম, কাঠাঁল, আনারস ইত্যাদি। আর এবারে বাজারে এইসব মৌসুমী ফলের চড়া দাম থাকায় কৃষকেরা বেজায় খুশি।
সরজমিনে দেখা গেছে, রাঙ্গামাটি বিভিন্ন এলাকা থেকে চাষীরা এইসব মৌসুমী ফল এনে শহরের পাইকারী বাজার বনরূপা, সমতাঘাট, রিজার্ভ বাজার, তবলছড়ি, ট্রাক টার্মিনাল ও কলেজ গেইট ব্যবসায়ীদের কাছে পাইকারী দরে বিক্রয় করছেন। পাইকারী ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে রসালো এইসব ফল। তবে গ্রীস্মকালীন এ ফল বাজারে আগাম আসায় কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
অন্যদিকে আম, কাঁঠাল, আনারস বাজারে থাকলেও মানুষের আকর্ষণ বেশী লিচুর দিকে। বর্তমানে প্রচুর লিচু উৎপাদন হচ্ছে পার্বত্য জেলায়। কাঁঠাল, আম ও আনারসের পাশাপাশি বিভিন্ন উপজেলায় চলছে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে উন্নত জাতের লিচু চাষ। প্রায় প্রতিটি গ্রামেই লিচু চাষের প্রতিযোগীতা লক্ষ্যনীয়। ফলন ভালো হওয়ায় দেশী জাতের পরিবর্তে এখন পাহাড়ে অধিক চাষাবাদ হচ্ছে চায়না-২, চায়না-৩ জাতের লিচুর। বাজারের এর কদর একটু বেশী। তাই কৃষকরা চায়না-২, চায়না-৩ জাতের লিচুর চাষের প্রতি বেশী আগ্রহ। আর নিজস্ব উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারী উদ্যোগে গড়ে উঠেছে আম, লিচু, কাঁঠালসহ মিশ্র ফলের বাগান।
রাঙ্গামাটি জেলা উপ-সহকারী কৃষি অফিসার শান্তি চাকমা জানান, সদ্য মৌসুমে উপযুক্ত আবহাওয়ার কারণে রাঙ্গামাটিতে আম, কাঁঠাল, আনারস, লিচুর প্রচুর ফলন এসেছে। এর মধ্যে রাঙ্গামাটি সদর, নানিয়ারচর, বিলাইছড়ি, কাপ্তাই, কাউখালী, বরকল, জুরাছড়ি, লংগদু, বাঘাইছড়ি, রাজস্থলী উপজেলাসহ লিচুর আবাদ হয়েছে ভাল। প্রতি বছরের ন্যায় রাঙ্গামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে মৌসুমী ফলের বাগানে তারা যাতে পরিমাণ মতো সার ব্যবহার করতে পারে তার জন্য যথাযত পদক্ষেপ গ্রহন করায় এবার মৌসুমী ফলের ফলন ভাল হয়েছে বলে জানান কৃষি বিদরা।
রাঙ্গামাটির স্থানীয় মৌসুমী ফল ব্যবসায়ী লিয়াকত আলী জানান, আনারসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ইতোমধ্যে বাজারে এসেছে- আম, কাঠাঁল, লিচু। আর এবারে আবহাওয়া ভাল থাকায় ফলের উৎপাদন হয়েছে প্রচুর। এতে এসব উৎপাদিত মৌসুমী ফল বাজারে সয়ালব হয়ে গেছে। ক্রেতাদের চাহিদা অনেক। তাই লাভবান হচ্ছে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। তবে এখানে হিমাগার না থাকায় এইসব উৎপাদিত ফল-মুল সংরক্ষণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
রাঙ্গামাটি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক রমনী কান্তি চাকমা জানান, সা¤প্রতিক বছরগুলোয় পাহাড়ি জেলাগুলোয় ব্যাপক বিভিন্ন মৌসুমী ফলের চাষাবাদ হচ্ছে। ফলনও হচ্ছে লক্ষ্যমাত্রার অধিক। এবারে আমের চাষ করা হয়েছে ২ হাজার ৯ শত ৫৫ হেক্টর। এর মধ্যে গড় হিসেবে সাড়ে ১২ টন থেকে ১৩ টন ফলন হয়েছে। আর কাঠাল হলো ৩ হাজার ৮ শত ৬৩ হেক্টর। ফলন হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ মেট্রিক টন। লিচু হলো ১৪শ ৯৫ হেক্টর। এবারে ফলন হয়েছে ৯ থেকে ১০ টনের মতো। তবে পার্বত্য জেলায় কলা চাষে উপযুক্ত স্থান এবং সারা বছর এখানে কলা চাষ করে থাকে কৃষকরা। তাই কলার উপর সারা বছরই নির্ভরশীল এখানকার কৃষকরা। আর আমাদের এখানে কলার আবাদী জমির পরিমাণ ১৩ হাজার ৭শত ৫৮ হেক্টর। ঘরে ঘরে এই কলা গাছ দেখা যায়। এর মধ্যে বাংলা ও চাঁপা কলা গাছ বেশী চাষ করে থাকে।
রাঙ্গামাটিসহ পার্বত্য তিন জেলায় কেবল সুষ্ঠু সংরক্ষণ ও বাজারজাতের অভাবে প্রতি বছর কোটি টাকার ফলমুল পচে নষ্ট হয়ে যায়। এ সম্ভাবনাময় কৃষি খাতকে উন্নয়নশীল করতে পার্বত্যাঞ্চলে উৎপাদিত পচনশীল পণ্য যাতে ঠিক সময়ে কৃষকরা বাজারজাত করতে পারে তার জন্য রাঙ্গামাটি শহরে একটি হিমাগার স্থাপনের খুবই প্রয়োজন বলে কৃষকরা মনে করেন।
