প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ১৫৩, জরুরি অবস্থা

প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ১৫৩, জরুরি অবস্থা

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের প্রায় একই সময়ে অন্তত ছয়টি স্থানে বোমা হামলা ও গুলিতে কমপক্ষে ১৫৩ জন নিহত হয়েছেন। ভয়াবহ এসব হামলায় আরও কয়েক শ আহত হয়েছেন।
স্থানীয় সময় গত শুক্রবার সন্ধ্যায় এই সন্ত্রাসী হামলার পর পুরো ফ্রান্সে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ। একই সঙ্গে দেশটির সকল সীমান্ত বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। আর নাগরিকদের ঘরে অবস্থান করতে বলা হয়েছে।
গতকাল শনিবার সিএনএন ও বিবিসিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম এ খবর দিয়েছে। খবরে বলা হয়, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি দেড় হাজার সেনাও মোতায়েন করা হয়েছে।
এই হামলার ঘটনায় শহরের কেন্দ্রস্থলে বাটাক্লঁ কনসার্ট হলেই অন্তত ১২০ জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
কনসার্ট দেখতে ওই হলে জড়ো হয়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। এরই মধ্যে অন্তত তিন হামলাকারী হলে ঢুকে কালাশনিকভের মতো দেখতে রাইফেল নিয়ে নির্বিচারে গুলি চালাতে শুরু করে বলে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান।
পরে হামলাকারীরা ওই হলে অনেককে জিম্মি করলে পুলিশ ভারী অস্ত্রসহ সেখানে অভিযান চালায়। এতে তিন হামলাকারী নিহত হয়েছে বলে আল জাজিরার খবরে জানানো হয়েছে।
একজন সাংবাদিকের উদ্ধৃতি দিয়ে গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘তারা অন্ধের মতো গুলি চালাচ্ছিল। যে যেদিকে পারে দৌড়ে বাঁচার চেষ্টা করছিল। আমি বহু মানুষকে গুলি খেয়ে পড়ে যেতে দেখেছি।’
অন্য হামলাগুলো হয়েছে কয়েকটি বার ও রেস্তোরাঁয়। এর মধ্যে স্টেডিয়ামের কাছের ঘটনাটি আত্মঘাতী হামলা বলে ধারণা করা হচ্ছে। এসব হামলায় কম্বোডিয়ান একটি রেস্তোরাঁয় ১৪ জন, একটি পানশালার বাইরে ১৯ জন, একটি অ্যাভিনিউতে চারজন এবং নগরের বাইরে এক স্থানে চারজন নিহত হয়েছেন।
এই কনসার্ট হলের কয়েকশ মিটারের মধ্যে বিদ্রুপ সাময়িকী শার্লি এবদুর কার্যালয়। ১০ মাস আগে সেখানে বন্দুকধারীরা হামলা চালিয়ে ২০ জনকে হত্যা করেছিল।
স্টেডিয়ামের বাইরে ম্যাকডোনাল্ডেসর দোকানের সামনে দুটি বিস্ফোরণ ঘটে। সেখানে আত্মঘাতী বোমা হামলা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
সেখানে তিনজন নিহত হয়েছে বলে বিবিসি জানিয়েছে। নিহতরা আত্মঘাতী বোমাহামলাকারী বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাইরে বোমা হামলার পর খেলা চালিয়ে গেলেও স্টেডিয়ামের ভেতরে আতঙ্ককর পরিস্থিতি তৈরি হয়। ওই সময় গ্যালারিতে ওলাঁদের সঙ্গে বসে খেলা দেখছিলেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্যাঙ্ক ভালটার।
বিস্ফোরণের পরপরই পুলিশের হেলিকপ্টারকে স্টেডিয়ামের উপর চক্কর দিতে দেখা যায়। প্রেসিডেন্ট ওলাঁদ দ্রুত চলে যান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে, সেখানে বসে সব পরিস্থিতি দেখে জরুরি অবস্থার ঘোষণা দেন তিনি।
প্যারিসের কেন্দ্রস্থলে শ্যারোনে একটি এশীয় রেস্তোরাঁর সামনে আধা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে একজন বন্দুকধারী এলোপাতাড়ি গুলি চালায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে।
রেস্তোরাঁর বাইরের অংশে তখন অনেকেই ডিনার খেতে বসেছিলেন। আকস্মিক এই হামলায় ১৮ জন নিহত হয়েছেন বলে রয়টার্স জানিয়েছে।
হামলার পর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট  ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ। দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
হামলার দায়িত্ব কেউ স্বীকার না করলেও মধ্যপ্রাচ্যে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসকেই সন্দেহ করা হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করে ওঁলাদ বলেছেন, “আমরা জানি, কারা এই সন্ত্রাসী।”
হামলার সময় সিটি হলের কনসার্টে থাকা একজন রয়টার্সকে বলেছেন, বন্দুকধারীরা ‘ইসলামী স্লোগান’ দিচ্ছিল এবং সিরিয়ায় অভিযানে ফ্রাঁন্সের ভূমিকার প্রতিবাদ জানাচ্ছিল।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ওলাঁদ এই ঘটনাকে বর্ণনা করেছেন ‘নজিরবিহীন সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে। রাতেই মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক করে তিনি টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা দেন।
হামলাকারীদের কাউকে ‘দয়া দেখানো হবে না’ জানিয়ে ওলাঁদ বলেন, “আবারও আমাদের ওপর ভয়াবহ হামলা হলৃ আমরা জানি, এরা কোথা থেকে এসেছে; আমরা জানি, কারা এই অপরাধী, আমরা জানি, কারা এই সন্ত্রাসী।
“তারা আমাদের ভয় দেখাতে চায়.. কিন্তু আমরা সেই জাতি, যারা নিজেদের রক্ষা করতে জানে; যারা জানে, কীভাবে নিজেদেরে শক্তি কাজে লাগাতে হয়। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আবারও আমাদের জয় হবে।”
দেশের এই পরিস্থিতিতে জি টোয়েন্টি সম্মেলনে যোগ দিতে তুরস্কে যাওয়ার পরিকল্পনা বাদ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ওলাঁদ।
হামলাকারী পাঁচজনকে নিরস্ত্র করা হয়েছে বলে প্যারিসের পাবলিক প্রসিকিউটর ফ্রাঁসিস মলিনস জানালেও তারা জীবিত, না মৃত, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
হামলার পর বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় পর্যটন নগরীটিতে সব বাসিন্দাদের যার যার ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। শহরে দেড় হাজার সৈন্য নামানো হয়েছে, বাতিল হয়েছে পুলিশের ছুটি, হাসপাতালগুলোতে কর্মীদের নিরবচ্ছিন্ন কাজে রাখা হয়েছে।
মেট্রো রেলের পাশাপাশি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে দূরপাল্লার রেল ও বিমান চলাচল স্বাভাবিক থাকছে।
প্যারিসজুড়ে সন্ত্রাসী হামলার পর ফরাসি জনগণের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বনেতারা।
বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বিবিসি এ সন্ত্রাসী হামলায় কমপক্ষে ১২০ জন এবং সিএনএন ১৫৩ জন নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এই হামলার নিন্দা জানিয়ে হোতাদের বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানিয়েছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ফ্রান্সের পাশে থাকার কথা বলেছে ন্যাটো।
যুক্তরাষ্ট্র ফ্রান্সকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত জানিয়ে এক বিবৃতি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
প্যারিসে এই সন্ত্রাসী হামলার ভয়াবহতায় ক্ষুব্ধ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এক টুইটে বলেছেন সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা নিয়ে তাঁরা ফ্রান্সের মানুষের পাশে থাকবেন।
জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল বলেছেন, প্যারিসে এই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় তিনি বিস্মিত, হতবাক।

Archive Calendar
Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031