ধর্মীয় মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদীদের হাতে ধারাবাহিক মুক্তচিন্তার মানুষ হত্যার প্রতিরোধ ও হত্যাকারীদের নির্মূল করার দাবীতে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে সর্বস্তরের সংস্কৃতিকর্মীদের উদ্যোগে আজ শুক্রবার সকালে অনুষ্ঠিত মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনষ্টিটিউট বাংলাদেশ কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি একুশে পদকজয়ী নাট্য ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেছেন, জাতিকে মেধাশূন্য করার জন্য পরিকল্পিতবঅবেই মুক্তচিন্তার নাগরিকদের হত্যা করা হচ্ছে। হত্যাকারীরা উগ্রধর্মীয় জঙ্গিবাদের বর্বরকীট। এই জঙ্গিবাদ বিশ্বমানবতার শত্রু। তারা মানবসভ্যতার গৌরব গাঁথাকে ধ্বংস করে দিতে চায়। তিনি আরো বলেন, আমাদের গ্রামগুলোর স্বল্প শিক্ষিত ও অশিক্ষিত মানুষরা ধর্মান্ধ অপশক্তির নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। ধর্মের নামে তাদের মগজ ধেলাই করা হয়েছে। গ্রামীণ জনপদে গড়ে উঠেছে জঙ্গিবাদীদের ঘাঁটি। তিনি প্রশ্ন করেন, জঙ্গিবাদের মূলসূত্র ইসলামের তথাকথিত হেফাজতকারী হাটহাজারী মাওলানা শফি সরকার দলীয় অনেক নেতাকর্মী এবং সংসদ সদস্য পা ছুঁয়ে তাকে সালাম করেন কীভাবে? এতেই প্রমাণিত শস্যের মধ্যে ভূত আছে। এই ভূতকে অবশ্যই তাড়াতে হবে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের জঙ্গিবাদীদের উত্থানের পেছনে ইন্দনদাতা রাজনৈতিক সংগঠনের রাজনীতির নিষিদ্ধ করা না হলে পরিস্থিতি অবনতিশীল হবে। এছাড়া তাদের অর্থ যোগানদাতা, ব্যাংকার, শিল্পপতি, ব্যবসায়ীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। এমনকি যে সমস্ত যে বাংলাদেশী বিদেশে বসে জঙ্গিবাদের কলকাঠি নাড়ছেন তাদেরও দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। নাট্য নির্দেশক ও মুক্তিযোদ্ধা মামুনুর রশিদ বলেছেন, কথা বিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদ থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত শাতাধিক মুক্তচিন্তার মানুষকে জঙ্গিবাদীরা প্রায় একই কায়দায় খুন করা হয়েছে। অথচ প্রত্যেকটি ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটিত হয়নি। খুনীরাও ধরা পড়েনি। তদন্তের ঢেলেমী ও প্রসিকিউশনের দুর্বলতায় মামলার বিচার প্রক্রিয়া হতাশাজনক। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে সন্দেহভাজন গুপ্তঘাতকরা গ্রেফতারের পর জামিন পেয়ে প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে। তার এখন আরো ভয়ঙ্কর ও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। কিন্তু দু:খজনক ব্যাপার হলো প্রায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার এই ব্যর্থতা বিব্রতকর। তাই সরকারকেই মুক্তচিন্তার মানুষকে যারা হত্যা করছে সেই মানবতাবিরোধী জঙ্গিবাদী গুপ্তঘাতকদের গ্রেফতার, বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক এ্যাকশনে যেতে হবে। তিনি আরো প্রশ্ন করেন গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে কারা সিরিয়া, ফিলিস্তান, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক, বানাতে চায়। তাদের ইন্দনদাতারা এদেশে রাজনীতি করে কিভাবে?তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জঙ্গিবাদের ইন্দনদাতারা কেউ কেউ প্রশাসন ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ে ঘাপটি মেরে আছে। এমনকি সরকারী দলের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নেতৃত্বেও রয়েছেন এটা অত্যন্ত বিপদজনক। দেখে গেছে তারা ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকও পেয়েছেন। এই অশুভ অশনি সংকেত থেকে জাতির পরিত্রাণের জন্য তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক সংস্কৃতিকর্মী খোরশেদ আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে একাত্বতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা মৃণাল চৌধুরী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট চট্টগ্রামের সদস্য সচিব নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দার, চসিক প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ রীতা দত্ত, চসিক কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, আবিদা আজাদ, সাংবাদিক প্রদীপ খাস্তগীর, মুক্তিযোদ্ধা ও শিল্পী মৃণাল ভট্টাচার্য, মুক্তিযোদ্ধা কিরণ লাল আচার্য, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হক, মুক্তিযোদ্ধা পঞ্চানন চৌধুরী, পেশাজীবী সংগঠক উত্তম কুমার আচার্য, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুচরিত দাশ খোকন, নগর যুবলীগের সদস্য সুমন দেবনাথ, তানভীর আহমেদ রিংকু, জাঙ্গীর আলম, সাংস্কৃতিক সংগঠক নিজামুল ইসলাম শরফী, নজরুল ইসলাম মুস্তাফিজ, সুজিত দাশ অপু, প্রণব রাজ বড়–য়া, কবি সজল দাশ, মো: লিফটন, সিব্বির আহমেদ বাহাদুর, শ্রাবণী দে, মো: এনাম উদ্দিন, ছাত্রনেতা অনন্য দেব, আবু তৈয়ব লিটন। উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি কর্মী মোহাম্মদ আলী টিটু, রমিজ উদ্দিন আহমেদ, সুজিত দাশ, রিপন বড়–য়া, আবদুর রহমান, অলিউর রহমান অলি, বিশ্বজিৎ দাশ প্রমুখ।
