এস এম ইব্রাহিম : চট্টগ্রাম মহানগরীর বহদ্দারহাট থেকে চকবাজার যাওয়ার অপেক্ষায় শত শত মানুষ। এরমধ্যে কেউ কেউ এক নম্বর বাসে চেপে বসছেন, কেউ কেউ টেম্পুতে। তারপরও কমতি নেই ভীড়ের। অগত্যা রিকশার খোঁজে ছুটছেন অনেকে। কিন্তু হতাশ মনে ফিরছেন।
এরমধ্যে নাহার সুলতানা নামে এক যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বহদ্দারহাট থেকে চকবাজার এক কিলোমিটারের একটু বেশি হতে পারে। আর এ পথ যেতে রিকশাওয়ালা ভাড়া হাঁকছেন ৪০ টাকা। অথচ এক নম্বর বাসে বা টেম্পুতে ভাড়া মাত্র ৫ টাকা। এতে একটাই সমস্যা, গাদাগাদি করে যাত্রী নেন তারা।
একইভাবে বহদ্দারহাট থেকে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালে যেতে এক যাত্রীর কাছ থেকে রিকশাওয়ালা ভাড়া হাঁকছেন ৩০ টাকা। মুরাদপুর যেতে ৫০ টাকা। রাহাত্তার পুল যেতে ৪০ টাকা। জামালখান যেতে ৭০ টাকা, আন্দরকিল্লা যেতে ৮০ টাকা ভাড়া হাঁকছেন রিকশাওয়ালারা।
হিসেব মতে, প্রতি কিলোমিটার রিকশা ভাড়া পড়ে কমপক্ষে ৩০ টাকা। যা নগরীর যে কোন যানবাহনের চেয়ে ৬-৭ গুণ বেশি। আর এই লাগামহীন ভাড়া নিয়ে হতাশায় নগরীর মানুষ। কিন্তু তাদের লাগাম টেনে ধরার কেউ নেই।
যাত্রীসাধারণের অভিযোগ, নগরীর বাসগুলোতে একটু ভীড় দেখলে স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া বেশি চেয়ে বসে রিকশা চালকরা। বিশেষ করে অফিস টাইমে ভাড়া বেড়ে যায় অনেকগুণ। আর ঝড়-বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই, ৫০ টাকার ভাড়া তখন ২০০ টাকা হয়ে যায়।
ভাড়া বেশি চাওয়া নিয়ে নগরীর মুরাদপুরে কথা হয় রিকশা চালক মুন্সি মিয়ার সাথে। তার বাড়ি ভোলা। মুন্সি মিয়া বলেন, বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেশি। তাই কম আয়ে পোষায় না। সুযোগ পেলে ভাড়া একটু বেশি নেয়া হয় এই আর কি। এরপরও সিএনজি অটোরিকশার অর্ধেক ভাড়াও রিকশাওয়ালারা নেন না বলে জানান তিনি।
সচেতন মহলের ভাষ্য, সরকার বাস-মিনিবাস ও টেম্পুর ভাড়া নিয়ন্ত্রণ ও নির্ধারণ করে দিলেও রিকশা ভাড়া নিয়ন্ত্রণের কোন উদ্যোগ নেই। ফলে সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় বাস-মিনিবাস ও টেম্পুতে যাত্রীরা যাতায়াত করতে পারলেও রিকশায় যাতায়াত করতে হচ্ছে চালকদের ইচ্ছায়।
রিকশা চালক-মালিক ঐক্য সমিতিসহ একাধিক সংগঠন থাকলেও তাদের কেউ নিয়ন্ত্রণ করে না রিকশা ভাড়া। ফলে চালকরা যখন যেমন তখন তেমন করে ভাড়া বাড়িয়ে দিচ্ছে। ভাড়া বাড়ার ক্ষেত্রে সব রিকশা চালক স্টেশন ভেদে একজোট থাকে। ফলে গাদাগাদি করে যাতায়াতে অনভ্যস্ত মানুষ লাগামহীন ভাড়ায় বাধ্য হয়ে যাতায়াত করছে।
রিকশা চালক-মালিক ঐক্য সমিতির একাংশের সহসভাপতি মো. হারুন এ প্রসঙ্গে বলেন, সমিতির রিকশা ভাড়া নিয়ন্ত্রণ করার কোন সুযোগ নেই। প্রশাসনিক নানা ঝক্কি-ঝামেলাসহ চালক মালিকদের সুবিধা-অসুবিধা দেখার লক্ষ্যেই এই সমিতি। তাছাড়া সমিতি ভাড়া নির্ধারণ করে দিলে তা চালক বা সাধারণ মানুষ মানবে এমনটাও মনে করেন না বলে জানিয়েছেন তিনি।
সচেতন মহলের মতে, চট্টগ্রাম মহানগরে রিকশা চলাচলের অনুমতি বা নিবন্ধন দেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। সিটি করপোরেশনের উচিত রিকশা ভাড়া বৃদ্ধিতে লাগাম টানা। সরকারের মতো কিলোমিটার হিসেবে রিকশা ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়া। এটা হলে নগরীর সাধারণ মানুষ রিকশাওয়ালাদের জিম্মীদশা থেকে মুক্তি পাবে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নিবন্ধন শাখার সদস্য সচিব আবুল হোসেন বলেন, নগরীতে রিকশাভাড়া লাগামহীন হওয়ার পেছনে দায়ী সিএনজি অটোরিকশা। অটোরিকশায় মিটার লাগানোর পরও তারা মিটারে চলে না। নিজের ইচ্ছামত ভাড়া হাঁকিয়ে চলে অটোরিকশা চালকরা। যার সাথে সঙ্গতি রেখে রিকশা ভাড়াও বহুগুণ বেশি নিচ্ছে চালকরা।
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অটোরিকশায় জ্বালানি খরচ আছে, কিন্তু রিকশায় তো তা নেই। এরপরও রিকশা চালকরা এত বেশি ভাড়া নেওয়া নিশ্চয় নৈরাজ্য। সিটি করপোরেশন রিকশা চলাচলে নিবন্ধন দিলেও আসলে ভাড়া নিয়ে কোন সময় ভাবেননি। তবে এটা ভাবার বিষয়। রিকশা ভাড়া নিয়ন্ত্রনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।