॥ রাহুল বড়–য়া ছোটন, বান্দরবান ॥ পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর প্রাণের উৎসব “বৈসাবি”-কে ঘিরে বান্দরবান পার্বত্য জেলা আনন্দের জোয়ারে ভাসছে। পাহাড়ি গ্রামগুলোতে এখন সাজ-সাজ রব। পুরাতন বছরকে বিদায় আর নতুন বছরের বরণকে সামনে রেখে প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রামগুলোতে চলছে নানা প্রস্তুুতি। হাট-বাজারগুলোতে পড়েছে কেনা-কাটার ধুম। এদিকে বৈসাবি উৎসবকে সামনে রেখে বান্দরবানের হোটেল-মোটেল আগাম বুকিং হয়ে গেছে। বৈসাবি উৎসবে স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ পৃথক বার্তায় সুখ, সমৃদ্ধি কামনা করেছেন।
বান্দরবান জেলার প্রতিটি জনপদ এখন উৎসবের জোয়ারে ভাসছে। বৈসাবি উৎসবকে সামনে রেখে বান্দরবান জেলার হাট-বাজারে কেনা-কাটা বেড়েছে। বিপনী বিতানগুলোতে এখন পাহাড়িদের পাশাপাশি বাঙ্গালী তরুণীদেরও উপচে পড়া ভীড়।
১২ এপ্রিল বিকেলে তংচঙ্গ্যাদের ঘিলা খেলার মধ্য দিয়ে শুরু হবে আদিবাসীদের বৈসাবি পালন । আর ১৩ এপ্রিল সকালে মারমাদের সাংগ্রাই উৎসব উপলক্ষে মহাশোভাযাত্রা, বয়োজ্যেষ্ঠ পূজা ।১৪ এপ্রিল সাঙ্গু নদীতে বুদ্ধ মূর্তি ¯œান ও পিঠা তৈরি ।১৫ ও ১৬ এপ্রিল বিকেলে স্থানীয় রাজার মাঠে মৈত্রী পানি বর্ষন উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ১৭ এপ্রিল বৌদ্ধ বিহারের মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জলন ও বয়স্কদের পূজার মধ্য দিয়ে এই বৈসাবি উৎসবের সমাপ্তি হবে।
এদিকে উৎসবের সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন এবং বর্ণাঢ্য আয়োজনে এবার ও আরো জাকজমকভাবে এই উৎসব উদযাপনের কথা জানালেন সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি হ্লাগ্যচিং মার্মা।
পার্বত্য চট্টগ্রামে আবহমান কাল ধরে লালিত ঐতিহ্যবাহী কৃষ্টি ও সংস্কৃতির অংশ হিসেবে মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই, চাকমা সম্প্রদায়ের বিজু আর ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বৈসু, এবং বাঙালিদের চৈত্র সংক্রান্তি ও বর্ষবরণ উৎসব পালন করে আসছে। এ উৎসব-আনন্দ পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি বাঙালি জনগোষ্ঠীও উপভোগ করে থাকেন । ১৯৮৫ সাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত তিন সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের সম্মিলিত উদ্যোগে ‘বৈসাবি’ নামে এ উসব পালন করে আসছে। যা সময়ের ব্যবধানে নিজ নিজ সম্প্রদায়ের লোকদের কাছে ‘বৈসাবি’ শব্দটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মারমা,চাকমা ও ত্রিপুরা, সম্প্রদায় তাদের নিজস্ব নামে ‘মারমা ভাষায় সাংগ্রাই, ত্রিপুরা ভাষায় বৈসু এবং চাকমা ভাষায় বিজু’ নামে এ উৎসব পালন হয়ে থাকে। এ তিন সম্প্রদায়ের নিজস্ব ভাষার নামের প্রথম অক্ষর নিয়ে ‘বৈসাবি’ নামকরণ করা হয়।
ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমা ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামে তঞ্চঙ্গ্যা,বম, খিয়াং, লুসাই, পাংখোয়া, ¤্রাে, খুমি, আসাম, চাক ও রাখাইনসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলো নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে তাদের ভাষা-সংস্কৃতি ও অবস্থানকে বৈচিত্রময় করে করে তুলতে প্রতি বছর চৈত্রের শেষ দিন থেকে ‘বৈসাবি’ উৎসব পালন করে থাকে।
এদিকে নতুন বছরকে বিদায় আর পুরাতন বছরকে কেন্দ্র করে উৎসবে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা দিতে প্রস্তুত প্রশাসন আর অনুষ্ঠানে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তায় ও কাজ করছে জেলা পুলিশ এমনটাই জানালেন বান্দরবানের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়। তিনি জানান আনন্দ আয়োজনের এই উৎসবে পর্যাপ্ত নিরাপদের চাদরে ডাকা থাকবে পুরো জেলা।
আসন্ন বৈসাবি উৎসবের মধ্য দিয়ে পাহাড়ী-বাঙ্গালীর মধ্যে শান্তি-সম্প্রীতি ও ঐক্য আরো সু-দৃঢ় হোক এই প্রত্যাশা সকলের।
