বান্দরবানে আনন্দ উদ্দিপনায় নেচে গেয়ে বড়দিনের উৎসব পালন
প্রার্থনা, কেক কাটা, নাচ গানের মধ্য দিয়ে আনন্দ উৎসবে খ্রিস্ট সম্প্রদায়ের সব চেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন উদযাপিত হয়েছে বান্দরবানে। বড় দিনকে ঘিরে আনন্দমুখর হয়ে উঠে খ্রিস্টান পল্লি গুলো। গির্জা গুলো নানা সাজে সাজানা হয়। সকালে গির্জায় গির্জায় প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় বড় দিনের উৎসব শুরু হয়। শহরের লুসাই বাড়ি গির্জা, ফাতিমা রাণী ক্যাথলিক গির্জা, কালাঘাটা ত্রিপুরা পাড়া গির্জা নতুন ব্রিজ ইসিবি গির্জাসহ বিভিন্ন স্থানে সকালে যিশু খ্রিস্টের সম্মানে প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।
শহরের কাছে চিম্বুক পাহাড়ের ফারুক পাড়া, লাইমী পাড়া, গ্যাস্বমনি পাড়াসহ সেখানকার বম সম্প্রদায়ের পাড়াগুলোতে বড় দিনে উৎসবের বন্যা বইছে। নতুন কাপড় পরে গির্জায় গিয়ে প্রার্থনায় অংশ নিয়েছে সবাই। এছাড়া পাড়ায় পাড়ায় ভোজের আয়োজন করা হয়। বড় দিনে এবার সব চেয়ে বড় আয়োজন ছিল গ্যাস্বমনি বম সম্প্রদায়ের পাড়ায়। সেখানে পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বড় দিনের কেক কাটেন।
অনুষ্টানে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী, অতিরিক্ত সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ইয়াছির আরাফাত,পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য ক্য সা প্রু, সদস্য জুয়েল বম, জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর, পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মংক্যচিং চৌধুরী, রোয়াংছড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হ্লাথোয়াই হ্রী, সুয়ালক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উক্যনু মারমা, সুয়ালক ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য লাল হাই বম, জনপ্রতিনিধি বম সম্প্রদায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্টানে সভাপতিত্ব করেন গ্যাস্বমনি পাড়ার কারবারী ভানমুন সিয়াম বম। সেখানে বম সম্প্রদায়ের নারী পুরুষ যুবক যুবতীরা নেঁচে গেয়ে ঐতিহ্যবাহী নানা সাজে সেজে বড় দিনের উৎসবে মেতে উঠে। সন্ধ্যায় প্রতিমন্ত্রী লুসাই বাড়িতে বড় দিনের উৎসবে যোগ দেন। রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল যুবায়ের সালেহীন পিএসসি, লুসাই সম্প্রদায়ের নেতা অধ্যাপক থানজামা লুসাইসহ অন্যান্য অতিথিরা এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক সকালে লুসাই বাড়ি গির্জায় কেক কাটেন। বান্দরবানে বম ত্রিপুরা কিছু ¤্রাে খেয়াং খুমি সব মিলিয়ে প্রায় অর্ধলক্ষ খ্রিস্টান সম্প্রদায় বসবাস করে। বিভিন্ন মিশন ও চার্চের মাধ্যমে এসব সম্প্রদায় তাদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। বম লুসাই পাংখোয়া ও ত্রিপুরা সম্প্রদায় শত ভাগ খ্রিস্টান ধর্ম পালন করলেও ¤্রাে খেয়াং খুমি সম্প্রদায় পুরোপুরি খ্রিস্টান নয়। ত্রিপুরারা ক্যাথলিক ৫টি মিশনের মাধ্যমে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। অন্যদিকে বম সম্প্রদায় ১৫টিরও বেশি চার্চ রয়েছে। বড়দিনের উৎসব সবচেয়ে আনন্দমুখর হয়ে উঠে বান্দরবানের রুমা ও থানছি উপজেলায়। এখানে সব চেয়ে বেশি সংখ্যক খ্রিস্টান সম্প্রদায় বসবাস করে থাকে।
অনুষ্টানে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেন, যিশু মানবজাতির জন্য কাজ করে গেছেন তাই আজ তিনি পৃথিবীব্যাপী সমাধিত রয়েছেন। যিশুর মত সকলকে ভালো কাজ করতে হবে আর পৃথিবীকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, ধারণ করার ক্ষমতা আছে যার সেই হয় ধার্মিক। ধর্ম যার যার উৎসব ও দেশ আমাদের সবার। এসময় প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, বর্তমান সরকার শিক্ষাবান্ধব সরকার। সরকারের আন্তরিকতায় পার্বত্য এলাকার সবর্ত্র এখন বিদ্যালয় নির্মিত হচেছ এবং শিক্ষক নিয়োগ করে আধুনিকমানের শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পড়ালেখার বিকল্প কিছুই নেই, একসময় পার্বত্য এলাকার উন্নয়ন না হলে ও বর্তমান সরকারের আমলে উন্নয়নের জোয়ার বইছে সর্বত্র। এখন মানুষের মধ্যে শান্তি বিরাজ করছে আর তাই অস্ত্র নয় কলমের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে সকলকে। তিনি আরো বলেন, যে জাতি যতশিক্ষিত সে জাতি তত উন্নত, তাই শিক্ষার উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই ।