শনিবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় দলের পক্ষ থেকেও জাতীয় ঐক্যের ডাক দেন কামাল হোসেন।
পহেলা জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জিম্মিকে হত্যা করে জঙ্গিরা। তাদের প্রতিহত করতে গিয়ে নিহত হয় পুলিশের দুই কর্মকর্তা।
নজিরবিহীন ওই ঘটনার পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্যের ডাক দেন; যার সমালোচনা করে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিএনপিকে জামায়াত ইসলামীর সঙ্গ ছাড়ার শর্ত জুড়ে দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ মোকাবিলায় খালেদা জিয়া যে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন, তাতে গণফোরাম সাড়া দেবে কি না- জানতে চাওয়া হয় দলের সভাপতি কামাল হোসেনের কাছে।
তিনি বলেন, “তারা (বিএনপি) যদি আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের চিঠি দিয়ে জানায় তাহলে সেটি দলীয় ফোরামে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।”
গণফোরাম সভাপতি গুলশানের মতো সন্ত্রাসী হামলা থেকে বাঁচার জন্য জাতীয় ঐক্যের ডাক দিনে বলেন, “আমরা শুধু রাজনৈতিক দল নয়, ইতিবাচকভাবে বলছি, সকল জনগণের ঐক্য চাই- ১৬ কোটি, ১৭ কোটি যা-ই হউক।
“এই ঐক্য গড়তে আমরা শুধু রাজনৈতিক দলগুলোকে নয়, সকল মানবাধিকার সংগঠন, নাগরিক সংগঠন, নারী সংগঠন, পেশাজীবী সংগঠনসহ সব সংগঠনের প্রতি আবেদন রাখছি- এগিয়ে আসুন।”
যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতে ইসলামী গণফোরামের জাতীয় ঐক্যের ডাকে সাড়া দিলে তাদের গ্রহণ করবেন কি না- জানতে চাইলে কামাল হোসেন বলেন, “যেসব রাজনৈতিক দল সংবিধানের মূল চার নীতি বিশ্বাস করে, তারা এগিয়ে আসলে আমরা স্বাগত জানাব।”
সন্ত্রাসীদের মোকাবেলায় করণীয় নির্ধারণে ‘ব্যাপক আলোচনা’ দরকার বলে মনে করেন গণফোরাম সভাপতি।
“এখানে আইনের সংশোধন হউক, আইন প্রয়োগের পদ্ধতি নিয়ে কোনো প্রস্তাব থাকুক, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে কিছু প্রস্তাব থাকুক, কীভাবে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কী পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিৎ- এসব কিছু ব্যাপকভাবে আলোচনা হওয়া উচিৎ।”
জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এই সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেওয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির এই সদস্য বলেন, “সারা দেশে যেভাবে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাস হচ্ছে, এরা কারা, কোথায় থেকে এরা অস্ত্র পাচ্ছে, কারা এদের পেছনে আছে- ইত্যাদি সব কিছু এখন আলোচনা করা প্রয়োজন। সেজন্য সকলে মিলে আলাপ-আলোচনা করে এ বিষয়ে আমাদের কী করণীয় তা ঠিক করা প্রয়োজন।”
দেশ ‘জাতীয় দুর্যোগের’ মধ্যে আছে মন্তব্য করে ‘অপ্রয়োজনীয় বিষয়’ নিয়ে বিতর্ক না করার আহ্বান জানান তিনি।
কামাল হোসেন বলেন, “দেশের যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, শুধু বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা না করে জাতীয় এই দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সবার বসা প্রয়োজন, আলোচনা করা জরুরি।
“সরকার ও বিএনপি সবাই ঐক্যের কথা বলছে, এটা আমার ভালো লাগছে। এখন এই ঐক্যের জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টা নিতে হবে। যে বিষয়ে বির্তকের দরকার নাই, সে বিষয়ে বির্তক না করে সকলের ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিৎ।”
গুলশানের ক্যাফেতে সন্ত্রাসী হামলার বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশের দাবিও জানান এই আইনজীবী।
দেশের জঙ্গিদের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএস এর সম্পর্ক আছে কি নাই- তা তদন্তের দাবিও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু দলের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত পড়ে শোনান।
এতে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে জেলায় জেলায় বিভিন্ন দল-শ্রেণি-পেশার মানুষসহ নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি মফিজুল ইসলাম কামাল, সুব্রত চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ নেতা আবদুল আজিজ, এসএম আলতাফ হোসেন ও সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
